নতুন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হলেন লিজ ট্রাস

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অভিনন্দন
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৪:০২

নানা ইস্যুতে বিতর্কিত বরিস জনসনের পর যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর পদে কে আসীন হচ্ছেন তা নিয়ে গোটা বিশ্বেরই কৌতূহল ছিল। অবশেষে দেশটির ক্ষমতাসীন দল কনজারভেটিভ পার্টি বা টোরি পার্টির নেতৃত্বের দৌড়ে সাবেক অর্থমন্ত্রী ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঋষি সুনাককে পেছনে ফেলে নয়া ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাস। আজ মঙ্গলবার ব্রিটিশ রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন এই প্রভাবশালী নারী রাজনীতিবিদ। রানি তাকে সরকার গঠনের আমন্ত্রণ জানানোর পর দেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন তিনি। টোরি পার্টির নেতৃত্বে আসায় হবু এই ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এর আগে গতকাল ব্রিটিশ সময় দুপুর সাড়ে ১২টার পর কনজারভেটিভ পার্টির নেতৃত্ব নির্বাচনের ফল ঘোষণা করেন ভোট পরিচালনা কমিটির প্রধান স্যার গ্রাহাম ব্রাডি। তাতে প্রায় ২১ হাজার ভোটের ব্যবধানে ঋষি সুনাকের বিপরীতে ট্রাসের পক্ষে রায় দেন দলের সদস্যরা। নির্বাচনে ট্রাস পান ৮১ হাজার ৩২৬ ভোট ও সুনাক পেয়েছেন ৬০ হাজার ৩৯৯ ভোট। বলা হচ্ছে- অগোছালো যুক্তরাজ্যকে গোছাতে দায়িত্ব নিচ্ছেন নতুন প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস। দেশটির ভঙ্গুর অর্থনীতিকে আবারও পূর্বের জায়গায় ফিরিয়ে আনাই হবে তার মূল কাজ।
কনজারভেটিভ পার্টির নেতা নির্বাচিত হওয়ার পর আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় দলের নেতাদের ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানান ট্রাস। সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের নানা কার্যক্রমের প্রশংসা করেন। এ সময় অর্থনৈতিক সংকটে ধুঁকতে থাকা ব্রিটিশ নাগরিকদের কর কমানোর পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিকে সামনে এগিয়ে নিতে বলিষ্ঠ পরিকল্পনা গ্রহণের আশ্বাস দেন তিনি। ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে আবারও কনজারভেটিভ পার্টি বিরোধী দল লেবার পার্টিকে হারাবে বলেও ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাস।
৪৬ বছর বয়সী লিজ ট্রাস উত্তর ইংল্যান্ডের বাসিন্দা। তার পুরো নাম ম্যারি এলিজাবেথ ট্রাস। বিয়ে করেছেন ২০০০ সালে, দুই সন্তানের জননী। ঐতিহ্যগতভাবে ট্রাসের জন্মস্থান উত্তর ইংল্যান্ডে, বর্তমান বিরোধী দল লেবার পার্টি শক্তিশালী। ট্রাস নিজেকে সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট বলে দাবি করেন, যা তার কেন্দ্রীয় নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ইকোনমিস্ট ম্যাগাজিন এক প্রতিবেদনে বলেছিল- নানা দিক দিয়ে ট্রাস আসলে মার্গারেট থ্যাচারের দৃষ্টিভঙ্গি অনুসরণ করছেন। সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থ্যাচারের প্রশংসা করতে কখনই ক্লান্ত হতে দেখা যায়নি ট্রাসকে।
লিজ ট্রাস অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে দর্শন, রাজনীতি এবং অর্থনীতি নিয়ে পড়েছেন। সেখানই তিনি সরকারের ভূমিকার হ্রাস ঘটা ও অর্থনীতিতে বেসরকারি খাতের বৃহত্তর ভূমিকায় কনজারভেটিভ পার্টির আদর্শের প্রতি ঝুঁকতে শুরু করেন। তিনি বেসরকারি ক্ষেত্রে কমার্শিয়াল ম্যানেজমেন্টের কর্মী হিসেবে ১০ বছর জ্বালানি ও টেলিযোগাযোগ শিল্পে কাজ করেছেন। ২০০০ সালের পরবর্তী সময়ে তিনি একাধিক নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে প্রতিটিতেই পরাজিত হন। এর পর ২০১০ সালে তিনি পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সে একটি আসন জিতেছিলেন এবং প্রথমবারের মতো এমপি হন। ২০১২ সালে ট্রাস নিযুক্ত হন এডুকেশন ও চাইল্ড কেয়ার বিভাগের উপসচিব পদে। পরে পরিবেশ, খাদ্য এবং সম্পর্কিত বিভাগেরও দায়িত্ব পান। প্রধানমন্ত্রী হতে ভোটের প্রচারে এই বিষয়গুলোরও উল্লেখ করছেন বরিস জনসন মন্ত্রিসভার এ পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর থেকেই ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলাচ্ছেন তিনি।
এদিকে ট্রাসকে ইতোমধ্যে আয়রন লেডিখ্যাত সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচারের সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে। কয়েক মাস ধরে ট্রাস ব্রিটিশদের পেশাদারভাবে স্টাইল করা ফটো দিয়ে বিনোদন দিচ্ছেন, যা প্রায় থ্যাচারের মুহূর্তগুলোর কার্বন কপি। যেমন যখন তিনি মস্কো গিয়েছিলেন, তখন একটি লম্বা কোট এবং পশমের টুপি পরেছিলেন, ঠিক ৩৫ বছর আগে থ্যাচার যেমনটি করেছিলেন। ট্রাস ৩০ বিলিয়ন পাউন্ড (৩৭ বিলিয়ন ডলার) ট্যাক্স কমানোর প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন অনেকটা থ্যাচারের মতো। থ্যাচার ১৯৮০-এর দশকে ব্যক্তিগত আয়কর কমিয়েছিলেন। সেই সঙ্গে জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয় মোকাবিলায় অবিলম্বে পদক্ষেপের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। ট্রাসের মতে, এই পদক্ষেপ মুদ্রাস্ফীতিকে লাগাম টেনে ধরতে পারবে বলে মনে করছে ব্রিটেনের রাজনীতি বিশ্লেষকরা।
এদিকে টোরি পার্টির নেতা নির্বাচিত হওয়ায় এবং যুক্তরাজ্যের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাসকে অভিনন্দন জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। শেখ হাসিনা শুভেচ্ছাবার্তায় বলেন, গণতন্ত্র, অসাম্প্রদায়িকতা ও সহনশীলতার মূল্যবোধের ওপর ভিত্তি করে ব্রিটেন ও বাংলাদেশের মধ্যে ঐতিহাসিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। বাণিজ্য, বিনিয়োগ, টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সন্তোষ প্রকাশ এবং তা উত্তরোত্তর বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন। এ ছাড়া রাজনীতি, অর্থনীতি ও কৌশলগত অংশীদারত্বের ক্ষেত্রে লিজ ট্রাসের শাসনামলে দুই দেশের সম্পর্ক আরও জোরদার হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সাফল্য কামনা করেন।