হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আব্দোল্লাহিয়ান। সোমবার (২০ মে) ইরানের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, হেলিকপ্টারে থাকা প্রেসিডেন্ট, পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সব যাত্রী নিহত হয়েছেন। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
অনুসন্ধান ও উদ্ধারকারী দল পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় হেলিকপ্টারের ধ্বংসাবশেষ শনাক্ত করার পর, তাদের নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা।
রয়টার্সকে ওই কর্মকর্তা বলেন, পার্বত্য অঞ্চলে কুয়াশাপূর্ণ খারাপ আবহাওয়ার কারণে হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হয়েছে। অবশ্য এখন পর্যন্ত হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্তের কারণ সম্পর্কে সরকারিভাবে কোনও তথ্য জানানো হয়নি।
ইরানের মেহর নিউজ এজেন্সিও তাদের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছে, ইরানের প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বহনকারী হেলিকপ্টারের সব যাত্রীই শহীদ হয়েছেন।
এর আগে এক ইরানি কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছিলেন, রবিবারের দুর্ঘটনায় প্রেসিডেন্ট রাইসি এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমিরাবদুল্লাহিয়ানকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে।
ইরানের রাষ্ট্রীয় টিভি জানিয়েছে, দুর্ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া ছবি ও ভিডিওতে দেখা গেছে, হেলিকপ্টারটি একটি পাহাড়ের চূড়ায় আছড়ে পড়েছে।
দেশটির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আইআরএনএ জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি বেল ২১২ হেলিক্প্টারটিতে ভ্রমণ করছিলেন প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ওই হেলিকপ্টারটিই বিধ্বস্ত হয়েছে।
রবিবার আজারবাইজানের সীমান্তবর্তী এলাকায় দুই দেশের যৌথভাবে নির্মিত একটি বাঁধ উদ্বোধন করতে যান ইরানের প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সেখানে আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভও ছিলেন।
সেখান থেকে তিনটি হেলিকপ্টারের বহর নিয়ে ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের রাজধানী তাবরিজে ফিরছিলেন তারা। একটিতে ছিলেন প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা। পথে পূর্ব আজারবাইজানের জোলফা এলাকার কাছে দুর্গম পাহাড়ে তাদের বহনকারী হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হয়। বাকি দুইটি হেলিকপ্টার নিরাপদে ফেরত আসে।
বিশ্বজুড়ে শোকের ছায়া
ইরানের প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিহতের ঘটনায় ইরানজুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। তবে জনগণকে উদ্বিগ্ন না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ইরানের সুপ্রিম লিডার আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। ইরানের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো। শোক জানিয়েছে ভারত, রাশিয়া, ভেনিজুয়েলাসহ অন্যান্য দেশ। সোমবার (১০ মে) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ খবর জানিয়েছে।
ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিকে আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির সম্ভাব্য উত্তরসূরি হিসেবে দেখা হতো। তার মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছে ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মাদ শিয়া আল-সুদানি। এক বিবৃতিতে তিনি জানিয়েছেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে বিমান দুর্ঘটনায় ইরানের প্রেসিডেন্ট, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, তাদের সঙ্গীদের মৃত্যুর সংবাদ পেয়েছি। দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি, তার সরকার ও জনগণের প্রতি আমাদের আন্তরিক সমবেদনা ও সহানুভূতি প্রকাশ করছি।
ইরানের সরকার ও জনগণের প্রতি গভীর সমবেদনা ও সংহতি জানিয়েছে ফিলিস্তিনের সশস্ত্র স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস।
গভীর শোক জানিয়েছেন ইয়েমেনের হুথি সুপ্রিম রেভোলুশনারি কমিটির প্রধান মোহাম্মদ আলী আল-হুথি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেছেন, ইরানের জনগণ, তাদের নেতৃত্ব ও রাইসি ও তার নিহত সহযোদ্ধাদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। তাদের পরিবারকে ধৈর্য ও সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য আল্লাহ’র কাছে প্রার্থনা করি।
নিহতদের প্রতি গভীর শোক জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেছেন, ইরানের প্রেসিডেন্ট সৈয়দ ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত এবং মর্মাহত। ভারত-ইরান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে শক্তিশালী করার জন্য তাঁর অবদান সর্বদা স্মরণ করা হবে। ভারত এই দুঃখের সময়ে ইরানের পাশে আছে।
ইরান ও দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আলী খামেনির প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি লিখেছেন, ভেনিজুয়েলার নিঃশর্ত বন্ধু ছিলেন রাইসি।
মস্কোয় ইরানের রাষ্ট্রদূত কাজেম জালালির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এছাড়াও ইরানের প্রেসিডেন্ট ও রাষ্ট্রপতির মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন বিশ্ব নেতারা।