ইতিহাস গড়ে ওডিশার প্রথম মুসলিম নারী বিধায়ক হলেন সোফিয়া 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  ১০ জুন ২০২৪, ১০:৩০

ভারতের ওডিশার কটকে বিজেপির পূর্ণ চন্দ্র মহাপাত্রকে ৮ হাজার ১ ভোটে পরাজিত করে ওডিশার প্রথম মুসলিম নারী বিধায়ক হয়েছেন সোফিয়া ফিরদৌস। সোফিয়া লড়াই করেছেন তার বাবা মোহাম্মদ মকিমের আসনে। মোহাম্মদ মকিম গতবার কটকে কংগ্রেসের বিধায়ক ছিলেন।   
এ বছরের শুরুর দিকে সোফিয়া ফিরদৌস তার বাবার পক্ষে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেও নির্বাচনের এক মাস আগে আসে বড় ধাক্কা। দেশটির সুপ্রিম কোর্টের আদেশে মকিমের নির্বাচনী বৈধতা বাতিল করা হয়। ওডিশা গ্রামীণ আবাসন উন্নয়ন কর্পোরেশনের (ওআরএইচডিসি) ঋণ জালিয়াতির মামলায় দোষী সাব্যস্ত হন তিনি। 
নির্বাচনের মাত্র ৩০ দিন আগে বিকল্প যোগ্য প্রার্থী না পাওয়ায় কংগ্রেস সিদ্ধান্ত নেয় মকিমের কন্যাকে ভোটের মাঠে দাঁড় করাবে। ৩২ বছর বয়সী সোফিয়া রিয়েল এস্টেট কোম্পানি চাকরি ছেড়ে নির্বাচন করলেন। এবং বিজেপির পূর্ণ চন্দ্র মহাপাত্রের বিপক্ষে বিজয়ী হয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করলেন। 


নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর এনডিটিভির সঙ্গে নির্বাচনী প্রস্তুতিকালের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন সোফিয়া। সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, 'আমি কোনো রাজনীতিক নই, আমার বাবা যখন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার বৈধতা হারালেন, তখন আমাদের বাড়ির সামনে ৪-৫শ মানুষ জড়ো হয়ে বিশাল সমাবেশের আয়োজন করে। কটকে আমার বাবা যে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে উন্নয়নের সূচনা করেছিলেন- তার ধারাকে অব্যাহত রাখার জন্য তারা আমাকে ভোটের মাঠে আসার অনুরোধ করেন।' 
২০১৪ এবং ২০১৯ সালের নির্বাচনে সোফিয়া তার বাবার নির্বাচনী প্রচারণায় সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। এজন্য দলের তৃণমূল কর্মীদের সঙ্গে তার পরিচিতি ও সখ্যতা ছিল। এই সখ্যতা তাকে এবারের নির্বাচনে এগিয়ে রেখেছে।
মাত্র এক মাসের প্রস্তুতিতে নির্বাচনী প্রচারণায় কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে সোফিয়াকে। তিনি ভোটারদের কাছে জানতে চেয়েছিলেন তারা তার বাবার আস্থার জায়গায় তাকে স্থলাভিষিক্ত করবেন কি না।
সোফিয়া বলেন, 'নির্বাচনের জন্য আমার কাছে মাত্র এক মাস সময় ছিল। আমি বেশ চিন্তিত ছিলাম। দীর্ঘদিন তৃণমূলে কাজ করায় জনগণ আমার বাবাকে তো ভালোভাবে চেনেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। যদিও সেবার জয় আসেনি। এরপর ২০১৯ সালে অংশ নিয়ে বিজয়ী হন। দীর্ঘদিনে বাবা মানুষের আস্থা অর্জন করতে পেরেছেন। তাহলে এতো অল্প দিনে মানুষ কেন আমাকে ভরসা করবে?' 
তিনি আরও বলেন, 'প্রচণ্ড গরমের মধ্যে প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত প্রচারণা করেছি। এরপর বিকাল ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত আবার প্রচারণা চালিয়েছি। আমার জন্য মানুষের কাছে পৌঁছানোর জন্য মাত্র এক মাস সময় ছিল, এজন্য মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে প্রচারণা করার চেষ্টা করেছি।'
ওডিশার বিধানসভার অন্যতম কনিষ্ঠ বিধায়ক হিসেবে সোফিয়া এখন বিজেপি এবং নবীন পট্টনায়কের বিজু জনতা দলের (বিজেডি) পাকা রাজনীতিবিদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মুখোমুখি হচ্ছেন।
রাজ্যের সাবেকমুখ্যমন্ত্রী সতপতীর থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে সোফিয়া 'ওডিশার আয়রন লেডি' মর্যাদা নিতে চান।
'মুসলিম বিধায়ক' হিসেবে তার অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে সোফিয়া বলেন, 'আমি একজন ভারতীয় এবং সর্বপ্রথমে একজন নারী। রিয়েল এস্টেটে আমার কর্মজীবনে আমি নারীর ক্ষমতায়নের জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছি। রাজনীতিতেও তা চালিয়ে যাব। মুসলিম রাজনীতিবিদ হিসেবে নিজেকে আলাদা করে কখনোই ভাবিনি।'