প্রায় পাঁচ দশকের সুখের সংসার ছিল তাদের। হাসি আনন্দেই একে অন্যের হাত ধরে পার করেছেন দীর্ঘ এ সময়। তবে তাদের এই সুখ দীর্ঘস্থায়ী হয়নি, শরীরে বাসা বাঁধে মরণব্যধি। আর এ থেকে মুক্তি পেতে স্বেচ্ছায় জীবনাবসনের সিদ্ধান্ত নেন তারা। চলতি মাসের ৩ তারিখে তারা একসঙ্গে মারা যান। খবর : বিবিসির।
প্রতিবেদেনে বলা হয়েছে, স্বেচ্ছায় মৃত্যুবরণ করা নেদারল্যান্ডসের ওই দম্পতির স্বামী ছিলেন জাতীয় হকি দলের খেলোয়াড় ও পরামর্শক আর স্ত্রী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। জীবনকে উপভোগ করার জন্য গাড়ি ও একটি কার্গো নৌকাকেই নিজেদের ঘর বানিয়েছিলেন তারা। যাতে নতুন নতুন স্থানে নিজেদের নিয়ে যাওয়া যায়, উপভোগ করা যায় প্রকৃতিকে।
যেহেতু নৌকায় থাকতেন তাই নৌকা দিয়ে পরিবহণের ব্যবসায়ও নেমেছিলেন স্বামী জ্যান। কিন্তু ভারী কাজ করতে করতে জ্যানের একটা সময় পিঠের ব্যথার সৃষ্টি হয়, যা তাকে পুরো জীবনজুড়ে কষ্ট দিয়েছে। ২০০৩ সালে এই ব্যথার জন্য একটি অস্ত্রোপচারও করেছিলেন তিনি। কিন্তু এতে কাজ হয়নি। এদিকে তার স্ত্রী ইলস তার শিক্ষকতা পেশা নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। কিন্তু জ্যান যখন বুঝতে পারলেন যে, ওষুধ খেয়ে তার খুব একটা কাজ হচ্ছে না; তখন তিনি তার পরিবারের সাথে আলোচনা করে স্বেচ্ছায় মৃত্যুর সিদ্ধান্ত নেন।
এরইমধ্যে ২০১৮ সালে ইলস শিক্ষকতা পেশা থেকে অবসর গ্রহণ করেন। তার অসুস্থতার মধ্যেই ২০২২ সালে তার স্ত্রীর মস্তিস্কের কঠিন অসুখ ‘স্মৃতিভ্রমের’ সমস্যা দেখা দেয়। এই সমস্যা থেকে তার সেরে উঠার কোনো সম্ভাবনা ছিল না। আর তার স্ত্রী ইলসের স্মৃতিভ্রমের সমস্যা দেখা দেওয়ার পর তারা একসঙ্গে দুজন মৃত্যুবরণের সিদ্ধান্ত নেন। এ ব্যাপারে নিজেদের একমাত্র ছেলের সঙ্গেও কথা বলেন তারা। তাদের সম্মতির ভিত্তিতে চিকিৎসকরা উচ্চমাত্রার ওষুধ প্রয়োগ করেন। এতে গত ৩ জুন একসঙ্গে তাদের মৃত্যু হয়।
নেদারল্যান্ডসে স্বেচ্ছামৃত্যুর এমন ঘটনা এবারই প্রথম নয়। দেশটিতে এই ধরনের মৃত্যু বৈধ হলেও তবে তা বিরল। কিন্তু প্রতিবছরই ডাচ দম্পতিরা এভাবে তাদের জীবনাবসান করেন। যৌথভাবে মৃত্যুর এই প্রক্রিয়াকে ডুয়ো-ইথানেশিয়া বলা হয়।