উপমহাদেশের শতবর্ষী পুরনো দল কংগ্রেস এবার ‘পরিবর্তনের হাওয়া’ আনতে তৎপর হয়েছে। দলটির সভাপতি পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। কিন্তু এবার গান্ধী পরিবারের মুখ ফিরে আসার সম্ভাবনা একেবারেই কম। অর্থাৎ প্রায় ২০ বছর পর দলীয় সভাপতির পদ যাচ্ছে গান্ধী পরিবারের বাইরে। এ পর্যন্ত নেতৃত্বের লড়াইয়ে নাম এসেছে গান্ধী পরিবারের অনুগত ও রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট আর সংস্কারবাদী নেতা হিসেবে পরিচিত শশী থারুর। গতকাল এ খবর জানিয়েছে এনডিটিভি।
খবরে বলা হয়েছে, শশী থারুর নিজে দলীয় সভাপতি পদে লড়াইয়ের ইচ্ছার কথা জানান আর তাতে সায় দেন সোনিয়া গান্ধী। শশী থারুর সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও লেখক কলামিস্ট হিসেবে তার সুনাম রয়েছে। এ ছাড়া তিনি হলেন আলোচিত জি-২৩ গ্রুপের সদস্য যারা ২০২০ সালে কংগ্রেসের আমূল সংস্কার চেয়ে সোনিয়া গান্ধীকে চিঠি লিখেছিলেন। ওই চিঠিতে তারা দলের ধারাবাহিক ভরাডুবির পেছনে নেতৃত্বকে দায়ী করেছিলেন।
এনডিটিভি জানিয়েছে, গত সোমবার শশী থারুর সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে দেখা করেছেন এবং নিজের প্রার্থিতার কথা বলেছেন। সোনিয়া গান্ধী তাকে সম্মতি দেন। কিন্তু এর কয়েক ঘণ্টা পরই সভাপতি পদে অশোক গেহলটের নাম ঘোষণা করা হয়। গান্ধী পরিবারের একান্ত অনুগত হিসেবে অশোকের তকমা রয়েছে। কিছুদিন আগেও তিনি দলীয় সভাপতির পদে রাহুল গান্ধীকে ফেরানোর ব্যাপারে চাপ দিয়েছেন।
এদিকে কংগ্রেসের যোগাযোগের দায়িত্বে থাকা নেতা ও আইনপ্রণেতা জয়রাম রমেশ বলেন, যে কেউ চাইলেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন, আমরা তাকে স্বাগত জানাব। এটাই কংগ্রেসের ও রাহুল গান্ধীর ধারাবাহিক অবস্থান। এটি উন্মুক্ত ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া।
তিন দিনের মধ্যে কংগ্রেসের সভাপতি পদে মনোনয়নপত্র দাখিল শুরু হবে। শশী থারুর ও অশোক গেহলট ছাড়াও আরও কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা লড়াইয়ে আসতে পারেন। এ তালিকায় রয়েছে জ্যেষ্ঠ নেতা গোলাম নবি আজাদও।
সোনিয়া গান্ধী ১৯ বছর কংগ্রেসের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৭ সালে ছেলে রাহুল গান্ধীর হাতে দায়িত্ব দেন। লোকসভা নির্বাচনে টানা দ্বিতীয়বার ভরাডুবির পর ২০১৯ সালে পদত্যাগ করেন রাহুল। এর পর অন্তর্বর্তী সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেন সোনিয়া। তবে কোনো কিছুতেই দলের বিপর্যয় এড়ানো যায়নি। একের পর এক বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস পরাজিত হয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে বেশ কিছুদিন থেকেই দলের ভেতরেই দাবি উঠেছে, দলীয় নেতৃত্ব গান্ধী পরিবারের বাইরে আনার। বিশেষ করে রাহুল গান্ধীর দিকে নেতিবাচক মনোভাব রয়েছে অনেকের। কংগ্রেস ঘনিষ্ঠ অনেকেই মনে করেন, রাহুল গান্ধী দলের বাইরে থেকেও প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করেন। নির্বাচন এলে তা আরও বেড়ে যায়। তবে উল্টো বাতাসও রয়েছে। দলের ভেতরেই একটি অংশ চায়, রাহুল গান্ধী আবারও দলের হাল ধরুক।
বর্তমানে রাহুল ‘ভারত জোড়ো’ কর্মসূচিতে আছেন। এটিও অনেকটা কংগ্রেসের ইমেজ ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা। একই সঙ্গে রাহুলের ইমেজ ফেরানোরও চেষ্টা।
উল্লেখ্য, গান্ধী পরিবারের বাইরে সবশেষ কংগ্রেস সভাপতি ছিলেন সীতারাম কেশরী। নরসীমা রাও নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার প্রায় দুবছর পর কেশরীর কাছ থেকেই ১৯৯৮ সালে দায়িত্ব নেন সোনিয়া গান্ধী।