বিশ্বের উন্নত শহর প্যারিসের মেট্রো-বাসে ভিক্ষুক

ছিনতাইয়ের কবলে বাংলাদেশি ক্রীড়া সাংবাদিক

ডেস্ক রিপোর্ট
  ২৭ জুলাই ২০২৪, ১১:৫৪

বিশ্বের উন্নত শহরের মধ্যে অন্যতম ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস। কী নেই এই শহরে? সবকিছুতে আধুনিকতার ছোঁয়া। শহরকে এক করেছে আবার যোগাযোগ ব্যবস্থা। ট্রাম, মেট্রো কিংবা সাবওয়ে দিয়ে শহরের এক প্রান্ত দিয়ে আরেক প্রান্তে সহজেই যাওয়া যায়। রাজধানীতে ব্যক্তিগত গাড়ির চলাচলে কঠোর নিয়মকানুন থাকায় শহরবাসীর অনেকেই মেট্রো-ট্রামে যাতায়াত করে থাকেন। বিশ্বের উন্নত শহর হলেও এখানে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট গুলোতে মাঝে মধ্যে ভিক্ষুকদেরও দেখা মিলেছে! পাশাপাশি থাকছে ছিনতাইকারীর আনোগোনাও। অলিম্পিক গেমস কাভার করতে আসা বাংলাদেশের এক ক্রীড়া সাংবাদিক তো ছিনতাইয়ের শিকার হয়ে বেশ কিছু অর্থও খুঁইয়েছেন!
বিশ্বে প্যারিসের পরিচয় শিল্পকলা, চলচ্চিত্র আর সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক হিসেবে। খেলাধুলার বিষয় নাই বা বললাম। আর বর্তমানে প্যারিসকে বলা হয় অন্যতম অভিবাসীদের শহর। এখানে তাদের বেলাতে( বিশেষ করে আফ্রিকানদের বেলায়)  কিছুটা উদার নীতি সরকারের। নানানভাবে লোকজন এখানে আশ্রয়ও নিয়ে থাকে।। তবে তা যৌক্তিক ভিত্তির ওপর। আর কাজ ও পারিশ্রমিক নিয়ে অন্য জায়গা থেকে ভালো অবস্থান থাকায় আশ-পাশের দেশ থেকেও প্রচুর লোকজন থাকে। এর মধ্যে আফ্রিকান দেশ আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া ও মরক্বোর লোকজন একটু বেশিই। প্রায় লক্ষাধিক লোক এখানে বাসা করে থাকেন। একসময় ফ্রান্সের উপনিবেশ থাকায় আফ্রিকার দেশ থেকে আসা লোকজন সহজেই নাগরিকত্ব পেয়ে থাকে।
আর অপরাধের বড় অংশ করে থাকে এসব অভিবাসীরা-এমনটি বিশ্বাস এখানে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশিদের। তাই তো প্যারিসের মতো শতবর্ষী মেট্রোতে পকেটমার থেকে সাবধান থাকতে ঘোষণা দেওয়া হয়। অলিম্পিক কাভার করতে আসা লা কর্নোভের দিকে যেতে বাংলাদেশি এক সাংবাদিকের পকেটে একজন তো হাতও ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন। যদিও তা ছিল বাসের মধ্যেই। ভিড়ের মধ্যে সজাগ থাকায় আফ্রিকান ব্যক্তিটি শুধু সরি সরি বলে পরের স্টেশনে নেমে যান। এই প্রতিবেদকও তখন সেখানে ছিলেন।
আর মেট্রোতে উঠা-নামার মুহূর্তে যখন মেট্রোরেলের গেট বন্ধ হয়, ঠিক তখনই মোবাইল-ব্যাগ টান দেওয়ার চেষ্টা থাকে। যাতে করে গেট বন্ধ হয়ে গেলে ছিনতাইয়ের শিকার ব্যক্তিটি নামার সুযোগ না পান। ভু্ক্তভোগীরা অন্তত তাই বলছেন।
মেট্রো-ট্রাম কিংবা বাসের পাশাপাশি রাস্তাতেও রয়েছে ঝুঁকি। বাংলাদেশের চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের সিনিয়র রিপোর্টার রেদওয়ান শুয়েব গেমস কাভার করতে এসে তো ছিনতাইকারীর হাতে পড়ে ৪৩০ ইউরো খুঁইয়েছেন। দুই দিন আগে গনকোর্টে রাত ৮টার দিকে (গ্রীষ্মে প্যারিসে সূর্য ডোবে রাত ১০টায়) নিকটাত্মীয়ের সঙ্গে দেখা করে এক আফ্রিকান চাকু দেখিয়ে তার সব অর্থ নিয়ে গেছেন। এ নিয়ে শুয়েব বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন,‘আমি বুঝতেই পারিনি এভাবে ছিনতাইয়ের শিকার হবো। শুরুতে ওই ব্যক্তি ভিক্ষা চাইছিল। আমাকে কোনওভাবেই সামনের দিকে যেতে দিচ্ছিলো না। একপর্যায়ে সে চাকু বের করে মানিব্যাগের ইউরো নিয়ে হনহন করে চলে গেল।’
স্থানীয় থানায় এ নিয়ে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। তারা দেখছি বলে শুধু আবেদনটাই রেখেছে। প্যারিসে যেহেতু প্রচুর মানুষের আনাগোনা তাই নতুনরা টার্গেট হিসেবে থাকেন। প্রবাসী একজন মোহাম্মদ রুবেল তো নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে বলেছেন, ‘শুরুর দিকে আমি রাতে কাজ শেষ করে আসতে গিয়ে ছিনতাইকারী ধরেছিল। অর্থ নিয়ে যায়। এরপর থেকে সাবধান হয়ে যাই। শুধু তাই নয় বাইরে প্রয়োজন না হলে আইফোন কম চালানো হয়।’ সাধারণত অভিভাসীদের এলাকাতেই এসব বেশি হয়ে থাকে। গার্দে দা নর্থের মতো জায়গায় তো আফগান-আফ্রিকানরা মিলে ‘চোরাই পণ্য’ বিক্রি করে থাকেন। এছাড়া মাদক তো রয়েছেই। ভবঘুড়েদেরও দেখা মিলে।
ট্রামে একজন ভিক্ষুক( মাঝে)।স্থানীয় পুলিশ আফ্রিকান বলে তাদের অনেক সময় এড়িয়ে যায়। আবার শাস্তি দিয়ে থাকে। জানা গেছে, এবার অলিম্পিক গেমস বিধায় প্যারিসে অনেক কড়াকড়ি। অপরাধে যুক্ত অনেককেই নাকি বাড়ি পাঠানো হয়েছে। তারপরও পুরোপুরি নির্মূল হয়নি।
শুরুতে মেট্রো-ট্রামে ভিক্ষুকদের দেখা মেলার কথা বলছিলাম। ছোট্র একটি কৌটা নিয়ে কাউকে কাউকে ভিক্ষা করতে দেখা গেছে। তবে সেই সংখ্যা অনেক কমই। বাংলাদেশে মেট্রোতে ভিক্ষুক নিষিদ্ধ। আর প্যারিসে এসে যেন বিপরীত চিত্র দেখলাম!