ইরান ও লেবাননে সম্প্রতি হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়াহ এবং হিজবুল্লাহর শীর্ষ কমান্ডার ফুয়াদ শুকুরের হত্যাকাণ্ড ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর জন্য রাজনৈতিকভাবে লাভজনক হতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। এই হত্যাকাণ্ডগুলো নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক কর্তৃত্ব পুনরুদ্ধারে সহায়তা করতে পারে, যদিও এতে ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির সম্ভাবনা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ খবর জানিয়েছে।
ইউরোপীয় কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের ইসরায়েল-প্যালেস্টাইন বিশেষজ্ঞ হিউজ লোভাট আল জাজিরাকে বলেছেন, 'হানিয়াহর হত্যাকাণ্ড নেতানিয়াহুর নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক কৃতিত্বের জন্য ভালো। এটি একটি রাজনৈতিক সত্য।'
ইসরায়েলে অভ্যন্তরীণ বিক্ষোভ ও বিভাজন দেখা দিয়েছে। প্রথমে নেতানিয়াহুর সরকারের প্রস্তাবিত বিতর্কিত বিচার সংস্কারের বিরুদ্ধে মাসব্যাপী প্রতিবাদ। পরে হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তি না করার কারণে প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা বাড়ছে।
গত সপ্তাহে ইসরায়েলের ডানপন্থি মন্ত্রী ও পার্লামেন্ট নেসেটের সদস্যরা, ফিলিস্তিনি বন্দিদের ওপর নির্যাতন ও ধর্ষণের অভিযোগে আটক সেনাদের গ্রেপ্তার নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
অন্যদিকে ৩০ জুলাই, ইসরায়েল একটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় লেবাননের বৈরুতের দাহিয়া এলাকায় শুকুরকে হত্যা করে। শুকুর ছিলেন হিজবুল্লাহর শীর্ষ কমান্ডার। তিনি গোষ্ঠীটির সামরিক কৌশলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছিলেন। ইসরায়েল দাবি করেছে, গোলান মালভূমিতে ১২জন শিশু নিহত হওয়ার পর তারা এই হামলা চালিয়েছে। যদিও হিজবুল্লাহ দায় স্বীকার করেনি।
শুকুর হত্যার কয়েক ঘণ্টা পর হানিয়াহকে হত্যা করা হয়। তিনি ইরানের রাজধানী তেহরানে নতুন প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের অভিষেক অনুষ্ঠানে অংশ নিতে গিয়ে নিহত হন। ইসরায়েল এই হামলার দায় স্বীকার করেনি। কিন্তু ইরান ও হামাস ইসরায়েলকে অভিযুক্ত করেছে।
হানিয়াহর হত্যার একদিন পর ইসরায়েল দাবি করেছে, ১৩ জুলাই গাজার একটি হামলায় তারা হামাসের শীর্ষ সামরিক কমান্ডার মোহাম্মদ দেইফকে হত্যা করেছে। দেইফ হামাসের সামরিক শাখা কাসেম ব্রিগেডের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন এবং বছরের পর বছর ইসরায়েলের মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকার শীর্ষে ছিলেন।
ইসরায়েলি রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ অরী গোল্ডবার্গ বলেছেন, সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ডগুলো ইসরায়েলের সামরিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের সুনাম পুনরুদ্ধারে সহায়তা করেছে। তবে অনেক ইসরায়েলি, বিশেষ করে যারা জিম্মি মুক্তির দাবি করছেন, তারা আশঙ্কা করছেন, এই হত্যাকাণ্ডগুলো যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা কঠিন করে তুলবে।
লোভাট বলেছেন, 'এই হত্যাকাণ্ডগুলো নেতানিয়াহুকে রাজনৈতিকভাবে টিকিয়ে রাখতে পারে।'