দ্য উইক-এর বিশ্লেষণ

শেখ হাসিনার পদত্যাগে গণতন্ত্রে নতুন ঢেউ দেখবে বাংলাদেশ?

ডেস্ক রিপোর্ট
  ০৮ আগস্ট ২০২৪, ১৩:২৪

ছাত্র-জনতার ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা হেলিকপ্টারে করে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। তার দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। আর এর মাধ্যমে গত এক দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে প্রথমবারের মতো নতুন একজন নেতা পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান হাসিনার পদত্যাগের খবর নিশ্চিত করেন এবং পরে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের কথা ঘোষণা করেছেন।
সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতির বিরুদ্ধে ক্ষোভের কারণে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা শিক্ষার্থীদের সরকারবিরোধী বিক্ষোভের পর শেষমেষ দিন দুয়েক আগে হাসিনা পদত্যাগ করেন।
হাসিনা ২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশ শাসন করছিলেন এবং প্রায়শই তাকে স্বৈরাচারী হিসাবে বর্ণনা করা হতো। তার ক্ষমতায় থাকার সময়কালকে রাজনৈতিক বিরোধীদের গণগ্রেপ্তার এবং নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে মানবাধিকার সম্পর্কিত নিষেধাজ্ঞার দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছিল বলে বার্তাসংস্থা এএফপি বলেছে।
বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ মেয়াদী নারী সরকার প্রধানকে ক্ষমতাচ্যুত করার এই ঘটনা বাংলাদেশের জন্য কতটা তাৎপর্যপূর্ণ তা নিয়েও আলোচনা হচ্ছে। দেশের অন্তর্বর্তীকালীন নেতৃত্ব এখান থেকে অর্থাৎ বর্তমান পরিস্থিতি থেকে কোথায় যাবে এবং হাসিনার শাসনামলে যে গণতান্ত্রিক পশ্চাদপসরণ দেখা গিয়েছিল তা থেকে সরে আসতে পারবে কিনা সেই প্রশ্নও ঘুরপাক খাচ্ছে।
ভাষ্যকাররা কী বলেছেন?
দ্য ইকোনমিস্ট বলেছে, হাসিনার রাজনৈতিক পরাক্রম এবং দীর্ঘায়ু ‘নিরাপত্তা বাহিনীর নীরব সমর্থন এবং ক্রমবর্ধমান নিপীড়নের ওপরই নির্ভর ছিল’ এবং ‘গত মাস অবধি পরিস্থিতি দেখে মনে হয়েছিল– শেখ হাসিনার ক্ষমতা বজায় রাখার ফর্মুলা হয়তো এখনও কাজ করছে’।
কিন্তু ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ শুরু হলে, হাসিনা ‘তার ক্ষয়প্রাপ্ত শাসনকে রক্ষা করার জন্য বড় আকারের রক্তপাত ঘটানোর সম্ভাবনার সম্মুখীন হন’ এবং শেষপর্যন্ত তিনি তার নিজের অবস্থান ধরে রাখতে ব্যর্থ হন। এখন প্রশ্ন উঠেছে– ‘তত্ত্বাবধায়ক বা অন্তর্বর্তীকালীন শাসনের পর দেশটিতে বিশ্বাসযোগ্য গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা পুনর্গঠন করা যাবে কি না।’
বলা হচ্ছে, ধর্মীয় সংঘর্ষ যেকোনও গণতান্ত্রিক উত্তরণকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বিবিসিকে বলেছেন, ‘ভারত সম্পূর্ণরূপে শেখ হাসিনার সরকারকে সমর্থন করেছে বলে অনেকের মনে বিশ্বাস রয়েছে। প্রতিবাদকারীরা ভারত এবং বাংলাদেশের হিন্দু নাগরিকদের মধ্যে কোনও পার্থক্য করে না, যার ফলে ইতোমধ্যেই মন্দির এবং মানুষের ওপর হামলা হয়েছে। হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার সাথে সাথে ‘ক্ষমতার শূন্যতা দেখা দিয়েছে এবং আইনশৃঙ্খলা বাস্তবায়নের কেউ নেই। নতুন সরকারকে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের রক্ষা করতে হবে।’
এরপর কী?
বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ কী তা স্পষ্ট নয়। দ্য নিউইয়র্ক টাইমস বলেছে, হাসিনার পতনের পর রাষ্ট্রপতিকে নতুন সরকার গঠন করতে বলেছে সেনাবাহিনী। কিন্তু বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর অতীতে ‘অভ্যুত্থান এবং পাল্টা অভ্যুত্থানের ইতিহাস রয়েছে’। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সামরিক বাহিনী ‘সরকারি বিষয়ে খুব কমই প্রকাশ্য ভূমিকা রেখেছে’। 
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ছাত্র আন্দোলনকারীদের চাপের সাথে সেনাবাহিনীর অনুরোধে সাড়া দেন এবং হাসিনার দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার একদিন পর দেশের সংসদ ভেঙে দেন। এতে করে অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশে নতুন জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পথ সুগম হয়।
অতীতে ক্রমাগত হাসিনার ক্রোধের শিকার হয়েছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নিতে যাওয়া মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেছেন, ‘বাংলাদেশে অতীতে কাল্পনিক নির্বাচন হয়েছে। এখন আমাদের একটি বাস্তব নির্বাচন দরকার।’
এছাড়া হাসিনার পতনের পর সামরিক বাহিনী এখন মানুষের ক্রমাগত নিপীড়নের ভয়কে প্রশমিত করার চেষ্টা করছে। যদিও বাংলাদেশ ‘ইতোমধ্যেই উচ্চ বেকারত্ব এবং দুর্নীতি থেকে জলবায়ু পরিবর্তন পর্যন্ত একাধিক সংকট মোকাবিলা করছে বলে দ্য অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস জানিয়েছে।
সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান এখন অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের জন্য কাজ করছেন। তিনি দেশের বিচলিত মানুষকে আশ্বস্ত করেছেন, দেশে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা হবে। এছাড়া বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি না করার জন্য নিরাপত্তা বাহিনীকে নির্দেশও দিয়েছেন তিনি।
একইসঙ্গে হাসিনার পদত্যাগের পর দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সর্বোত্তম পথ খুঁজে বের করার জন্য জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বিরোধী রাজনীতিবিদ এবং সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দের সাথেও বৈঠক করেছেন।