মিয়ানমারে সহিংসতা থেকে বাঁচতে পালিয়ে আসার সময় ড্রোন হামলায় বহু রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে নারী এবং শিশুরাও রয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, হামলার পর মরদেহের স্তূপের মধ্যে পরিবারের সদস্যদের খুঁজছিলেন বহু মানুষ।
চারজন প্রত্যক্ষদর্শী, অধিকারকর্মী এবং কূটনীতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, গত সোমবার (৫ আগস্ট) এসব রোহিঙ্গার ওপর ড্রোন হামলা ঘটনা ঘটে। তারা মিয়ানমারে সহিংসতা থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসছিলেন।
তিনজন প্রত্যক্ষদর্শী শুক্রবার রয়টার্সের কাছে অভিযোগ করেছেন, এই হামলার জন্য আরাকান আর্মি দায়ী। যদিও সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে বিদ্রোহী গোষ্ঠীটি। প্রাণঘাতী এই হামলার জন্য আরাকান আর্মি এবং মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী একে অপরের ওপর পাল্টাপাল্টি দোষারপ করেছে।
হামলায় ঠিক কতজন মারা গেছেন এবং এর জন্য কারা দায়ী, তা স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি রয়টার্স।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, কাদার ভেতর অসংখ্য মরদেহ পড়ে রয়েছে। আশপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে তাদের স্যুটকেস ও ব্যাগগুলো।
তিনজন প্রত্যক্ষদর্শী দাবি করেছেন, হামলায় দুই শতাধিক মানুষ মারা গেছেন। আরেক প্রত্যক্ষদর্শী বলেছেন, তিনি অন্তত ৭০টি মরদেহ দেখেছেন।
রয়টার্স জানিয়েছে, ভিডিওতে দেখতে পাওয়া স্থানটি মিয়ানমারের উপকূলীয় শহর মংডু থেকে একটু দূরে। তবে ভিডিওটি কবে ধারণ করা হয়েছিল সেটি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
ড্রোন হামলা থেকে বেঁচে যাওয়া মোহাম্মদ ইলিয়াস বর্তমানে বাংলাদেশের একটি শরণার্থী শিবিরে রয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, হামলায় তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী এবং দুই বছরের মেয়ে আহত হয়েছিল। পরে তারা মারা গেছেন।
৩৫ বছর বয়সী এ রোহিঙ্গা যুবক জানান, তারা উপকূলীয় রেখা বরাবর দাঁড়িয়েছিলেন। এমন সময় হামলা শুরু হয়।
তিনি বলেন, আমি একাধিকবার কান ফাটানো শব্দ শুনতে পাই। নিজেকে রক্ষার জন্য তখন মাটিতে শুয়ে পড়েন ইলিয়াস। উঠে দেখেন, হামলায় তার স্ত্রী ও মেয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন এবং অনেক আত্মীয় মারা গেছেন।
শামসুদ্দিন নামে আরেক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, হামলা থেকে তিনি, তার স্ত্রী ও নবজাতক ছেলে বেঁচে গেছেন। তিনিও বাংলাদেশের একটি শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন। ২৮ বছর বয়সী এ যুবক জানান, হামলায় অনেকেই মারা যান। আরও অনেক আহত মানুষ যন্ত্রণায় চিৎকার করছিলেন।
শুধু ড্রোন হামলাতেই নয়, একইদিন নাফ নদীতে নৌকা ডুবেও বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা মারা গেছেন। তারাও মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করছিলেন।
ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস (এমএসএফ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, গত শনিবার থেকে বাংলাদেশে প্রবেশকারী ৩৯ জনের চিকিৎসা করেছে তারা। এদের অনেকের শরীরে মর্টার শেল এবং বন্দুকের গুলির জখম ছিল।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রোগীরা জানিয়েছেন, নদী পার হওয়ার জন্য নৌকা খোঁজার সময় মানুষের ওপর বোমা ফেলতে দেখেছেন তারা।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনের একজন মুখপাত্র বলেছেন, বঙ্গোপসাগরে দুটি নৌকা ডুবে শরণার্থীদের মৃত্যুর বিষয়ে তারা অবগত। মংডুতে বেসামরিক মানুষ নিহত হওয়ার খবরও তারা শুনেছেন। তবে সংস্থাটি হতাহতের সংখ্যা বা বর্তমান পরিস্থিতি নিশ্চিত করতে পারেনি।