ইউক্রেনের সঙ্গে শস্য রপ্তানি চুক্তি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত থেকে রাশিয়াকে সরে আসতে আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ)। রাশিয়ার এ সিদ্ধান্তের ফলে অনেক দেশে খাদ্যসংকট তৈরি হতে পারে বলেও মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক প্রতিক্রিয়ায় বলেছে, রাশিয়া খাদ্যকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। এরই মধ্যে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গুরুত্বপূর্ণ এ শস্য রপ্তানি চুক্তি রক্ষায় তার প্রচেষ্টা তুলে ধরতে নিজের ভ্রমণ পরিকল্পনায় পরিবর্তন এনেছেন। এ ছাড়া ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি গত শনিবার এক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, রাশিয়া শস্য রপ্তানি চুক্তি থেকে সরে আসায় বাংলাদেশ, আলজেরিয়া, মিসর, ইয়েমেন, ভিয়েতনামের মতো এশিয়া ও আফ্রিকার অনেক দেশে খাদ্যসংকটের সৃষ্টি হতে পারে। এসব দেশের জনগণের পাতে খাবার থাকবে কিনা তা এখন নির্ভর করছে ক্রেমলিনের কিছু মুষ্ঠিমেয় মানুষের হাতে।
বিবিসি জানায়, জেলেনস্কি তার বক্তব্যে রাশিয়ার চুক্তি স্থগিত করার বিষয়টি তিনি আগেই অনুমান করেছিলেন বলে জানান। তিনি বলেন, খাদ্য রপ্তানিতে বাধা দেওয়ার এ সিদ্ধান্ত রাশিয়ার আজকের নয়। গত সেপ্টেম্বরে যখন তারা ইউক্রেনে উৎপাদিত খাদ্যশস্যবাহী জাহাজ আটকে দিয়েছিল, তখনই ক্রেমলিন এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। রাশিয়ার এ ধরনের তৎপরতাকে রুখে দিতে তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান।
গত সেপ্টেম্বরে ইউক্রেনের শস্যবাহী জাহাজ আটকে দিয়ে রাশিয়া ইচ্ছাকৃতভাবে খাদ্যসংকটকে ত্বরান্বিত করেছে বলে অভিযোগ করেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট। তিনি জানান, রাশিয়ার বাধায় সেপ্টেম্বর থেকে ১৭৬টি জাহাজ সঠিক গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেনি। অর্থাৎ বর্তমানে ২০ লাখের বেশি টন খাদ্য সমুদ্রে বিভিন্ন জাহাজে রয়েছে। এর মানে ৭০ লাখের বেশি ভোক্তার খাদ্য পাওয়ার সুযোগ আরও কমেছে। চুক্তি থেকে সরে আসার আগেও রাশিয়া অন্তত দুবার আমাদের নৌবাহিনীর ওপর হামলা চালিয়েছে। গত শনিবার সকালেও হামলার শিকার হয় আমাদের নৌবাহিনী।
রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ প্রতিবছর রাশিয়া, ইউক্রেনসহ বিভিন্ন দেশ থেকে অন্তত ৬০ লাখ টন গম আমদানি করে। এ ছাড়া আরও অনেক দেশ রাশিয়া-ইউক্রেনের রপ্তানি করা খাদ্যশস্যের ওপর নির্ভরশীল। এ ছাড়া এসব দেশ রাশিয়া-ইউক্রেন থেকে প্রয়োজনীয় সারও আমদানি করে। ফলে খাদ্য রপ্তানি চুক্তি স্থগিত হওয়ায় অনেক দেশ সমস্যায় পড়বে। এক টুইটে ইইউর পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেল বলেন, চুক্তি স্থগিতের রুশ সিদ্ধান্ত বিশ্বব্যাপী অতিপ্রয়োজনীয় খাদ্যশস্য ও সারের রপ্তানিকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে।
এর আগে কৃষ্ণসাগরের ক্রিমিয়া উপকূলে রুশ নৌবহরে ইউক্রেনের ড্রোন হামলার প্রতিক্রিয়ায় শস্য রপ্তানির চুক্তি স্থগিতের ঘোষণা দেয় রাশিয়া। গত ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়া হামলা চালানোর পর খাদ্য রপ্তানি ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে রপ্তানি চালু করতে গত ২২ জুলাই জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে এ চুক্তি হয়েছিল। এর প্রাথমিক মেয়াদ হচ্ছে ১২০ দিন। সে অনুযায়ী আগামী ১৯ নভেম্বর চুক্তির মেয়াদ এমনিতেই শেষ হবে।
এদিকে এক বিবৃতিতে জাতিসংঘ প্রধানের মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিক বলেছেন, মহাসচিব গুতেরেস খাদ্যশস্য রপ্তানি চুক্তি স্থগিতের ব্যাপারে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। তিনি বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়ার জন্য আলজিয়ার্সে আরব লিগের শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার জন্য তার সফর একদিন পিছিয়ে দিয়েছেন। তুরস্কের সঙ্গে চুক্তির মধ্যস্থতাকারী সংস্থাটি মস্কোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। খাদ্য রপ্তানি বিপণœ করে এমন যে কোনো উদ্যোগ থেকে সব পক্ষকে বিরত থাকা জরুরি।