অনেকটা হুট করেই তিনি দায়িত্ব নিলেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে। অথচ দেশে আসার আগেও তিনি চলমান প্যারিস অলিম্পিক নিয়ে বেশ ব্যস্ত সময় পার করেছেন। বলছি শান্তিতে নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কথা। যিনি বিখ্যাত তিন শূন্য মডেলের ভিত্তিতে বদলে দিয়েছেন প্যারিস অলিম্পিককে। লম্বা সময় ধরেই প্যারিস অলিম্পিকের অবিচ্ছেদ্য অংশ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। নিজেদের দেশে অলিম্পিকের জন্য ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অর্থনৈতিক মডেল উপস্থাপন করেছিল ফ্রান্স। ড. ইউনূসের বিখ্যাত তিন শূন্য মডেলের ভিত্তিতে করা হয় প্যারিস অলিম্পিকের পরিকল্পনা।
প্রায় চারশ কোটি ইউরো ব্যয়ে ‘প্যারিস ২০২৪ অলিম্পিক ভিলেজ’ তৈরি হয়েছে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দর্শনের ভিত্তিতে। প্যারিস অলিম্পিককে সামাজিক ও টেকসই করতে নতুন স্পোর্টিং ভেন্যু নির্মাণের পরিবর্তে বিদ্যমান কাঠামোগুলোকে সংস্কার ও ব্যবহার উপযোগী করা হয়েছে, যাতে নিম্নআয়ের কমিউনিটিগুলো এবং ছাত্ররা পরে এগুলো বাসস্থান হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। খেলোয়াড়রা এগুলো কেবল অলিম্পিক গেমস চলাকালে সাময়িকভাবে ব্যবহার করবেন।
সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে অলিম্পিক ভিলেজের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে প্যারিস শহরের অন্যতম অনুন্নত অঞ্চল সেইন্ট ডেনিসকে। মূলত, সামাজিক ব্যবসা কর্মসূচিকে অলিম্পিকের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতেই এমন উদ্যোগ। এই পরিকল্পনার কারণে সেখানে গড়ে ওঠে বেশকিছু ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। যা তরুণদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে। আর এটি ড. ইউনূসের তিন শূন্য মডেলের ‘শূন্য বেকারত্ব’ মডেলের অংশ।
এবারের অলিম্পিক ভিলেজে মোট ১৪ হাজার ৫০০ জনের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাশাপাশি কার্বন দূষণ কমাতে রাখা হয়নি শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের কোনো ব্যবস্থা। ভেতরের ইন্টেরিয়র ডিজাইন এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যার ফলে সেখানকার তাপমাত্রা সহনীয় পর্যায়ে থাকে। এমনকি কার্বন মেশানো কংক্রিটের বদলে ব্যবস্থা করা হয়েছে কাঠ।
ড. ইউনূস তার ‘তিন শূন্য’ মডেলে রেখেছেন ‘শূন্য কার্বন নিঃসরণ’। সেই উদ্যোগেই বর্জন করা হয়েছে কার্বন মেশানো কংক্রিট। সঙ্গে রাখা হয়েছে পর্যাপ্ত অক্সিজেনের ব্যবস্থা। আর অলিম্পিক শেষে এই গেমস ভিলেজকে ২ হাজার ৮০০টি অ্যাপার্টমেন্টে পরিণত করা হবে। যেখানে সেইন্ট ডেনিসের অভিবাসীদের নিলামের মাধ্যমে আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে।
জানা গেছে, ২০২৬ সালে মিলানে অনুষ্ঠিতব্য শীতকালীন অলিম্পিকেও একই মডেল অণুসরণ করার কথা রয়েছে। সেই লক্ষ্য সামনে রেখে ইতালির মিলান শহরের পক্ষ থেকেও আমন্ত্রণ জানানো হয় বাংলাদেশের এই নোবেলজয়ীকে। প্যারিস অলিম্পিক সাংগঠনিক টিম এই অলিম্পিকের মূলমন্ত্র কী হবে, সে বিষয়ে পরামর্শ দেওয়ার জন্য ২০১৭ সাল থেকেই আয়োজক কমিটিকে পরামর্শ দিয়ে আসছেন ড. ইউনূস।