পুলিশ ও সরকার ঘেঁষা সন্ত্রাসীদের গুলিতে কয়েকশ ছাত্র ও সাধারণ মানুষ নিহত হওয়ার পর আগস্টের শুরুতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন শুরু হয়। এই আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান তিনি। এরপর একটি কথা চারদিকে ছড়িয়ে যায় যে— শেখ হাসিনার পতনের পেছনে কলকাঠি নেড়েছে যুক্তরাষ্ট্র। কারণ তিনি যুক্তরাষ্ট্রের কথা শুনে তাদের হাতে সেন্টমার্টিনকে তুলে দেননি। এমনও কথা ছড়ায় হাসিনাকে সরিয়ে বাংলাদেশে এখন নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী সরকারকে বসিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যারা তাদের কথা শুনবে। এছাড়া হাসিনা নিজেও দাবি করেছিলেন, সেন্টমার্টিনের নিয়ন্ত্রণ চায় যুক্তরাষ্ট্র। তবে মার্কিন প্রশাসন হাসিনার পতনের পেছনে হাত থাকা এবং সেন্টমার্টিন চাওয়ার সব দাবিই অস্বীকার করেছে।
যদিও যুক্তরাষ্ট্র সেন্টমার্টিন চাওয়ার বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বাংলাদেশ সামরিক দিক দিয়ে কৌশলগতভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
‘ইউএস নেভাল ইনস্টিটিউটে’ এ নিয়ে একটি কলাম প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র যদি বাংলাদেশে সামরিক দিক দিয়ে পা রাখতে পারে তাহলে তারা চীনের বিরুদ্ধে আরেকটি শক্তিশালী অবস্থান নিতে পারবে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর লজিস্টিকের জন্য এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে অন্যান্যদের কার্যক্রমে বাধা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক হবে এটি।
কলামটিতে আরও বলা হয়েছে, “বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সঙ্গে কাজ করে মার্কিন সেনারা এসব ঘাঁটি ব্যবহার করে চীনের প্রকল্পগুলোর উপর নজরদারি চালাতে পারবে। এছাড়া বাংলাদেশের অবস্থান বঙ্গোপসাগরের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় হওয়ায়; এটি ব্যবহার করে মালাক্কা প্রণালীতে তারা টহল দিতে পারবে। এই প্রণালীটি চীনের অর্থনীতি এবং শিল্পের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”
কলামে আরও বলা হয়েছে, “যেহেতু বঙ্গোপসাগরে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ঘাঁটি নেই। যদি ওই অঞ্চলে কোনো দ্বন্দ্ব বাধে সেটি মোকাবিলায় বাংলাদেশের নৌঁঘাটিগুলো মার্কিন নৌবাহিনীর জন্য নিরাপদস্থান এবং লজিস্টিক হাব হতে পারে।”
এছাড়া মাতারবাড়ির নির্মাণাধীন গভীর সমুদ্র বন্দরের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে এই কলামে। এতে বলা হয়েছে, “বাংলাদেশ এখন মাতারবাড়িতে একটি গভীর সমুদ্র বন্দর তৈরি করছে। এতে সহায়তা করছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য ও গুরুত্বপূর্ণ মিত্র জাপান। তারা চাইলে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে থাকা দূরত্ব দূর করতে পারবে। এছাড়া নিশ্চিত করতে পারবে যদি ভবিষ্যতে কোনো যুদ্ধ বাধে তাহলে মালাক্কা প্রণালী টপকে চীন- ‘চীন-মিয়ানমার বাণিজ্য করিডর’ ব্যবহার করে পণ্য পরিবহন করতে পারবে না। এতে করে বঙ্গোপসাগরে চীনের বিরুদ্ধে সুবিধা আদায় করে নিতে পারবে যুক্তরাষ্ট্র।”
কলামটিতে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রকে চীনের বিরুদ্ধে লং রেঞ্জ আইএসআর (গোয়েন্দা, নজরদারি এবং নিরীক্ষা) সুবিধা দিতে পারবে।