ইরানের কুদস ফোর্সের কমান্ডার ইসমাইল কানির নিখোঁজ হওয়ার খবরে নেট দুনিয়ায় আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। কে তিনি, কী তার পরিচয়—এ নিয়ে বেশ চর্চা হচ্ছে। হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরাল্লাহ নিহত হওয়ার পর লেবানন সফরে যান তিনি। গত সপ্তাহের শেষ দিকে বৈরুতে ইসরায়েলি হামলার পর থেকে তার কোনও হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। সেই থেকে তাকে ঘিরে রহস্যেল জাল ছড়িয়ে পড়েছে। কানির পরিচয় ও তার কাজ নিয়ে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন থেকে যা জানা গেলো:
২০২০ সালে বাগদাদে একটি ড্রোন হামলায় কানির পূর্বসূরি কাসেম সোলেইমানিকে হত্যা করে যুক্তরাষ্ট্র। এর পর তাকে কানিকে বিপ্লবী গার্ড কর্পসের বিদেশি সামরিক-গোয়েন্দা পরিষেবার প্রধান করে তেহরান।
সেই পদে কানির কাজের একটি অংশ ছিল মধ্যপ্রাচ্যের পাশাপাশি বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলে তেহরানের আধাসামরিক সহযোগীদের পরিচালনা করা।
কানি ও সোলেইমানি উভয়ের সঙ্গে পরিচিত ব্যক্তি এবং পশ্চিমা সামরিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, কানি কখনও তার পূর্বসূরি সোলেইমানিদের মতো একই রকমের সম্মান বা জনপ্রিয়তা লাভ করেননি। একইসঙ্গে আরব বিশ্বের ইরানের মিত্রদের মধ্যে একই রকমের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কও বজায় রাখেননি।
সোলেইমানি যখন কুদস ফোর্সের দায়িত্ব নিয়েছিলেন তখন লেবানিজ হিজবুল্লাহ থেকে শুরু করে ইরাকি শিয়া মুসলিম মিলিশিয়া থেকে ইয়েমেনের হুথিসহ ইরানের প্রক্সিরা মধ্যপ্রাচ্যে তাদের শক্তি বৃদ্ধি করেছিল। আর কানি তখন ইসরায়েলি গুপ্তচর ও যুদ্ধবিমানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন।
১৯৯৭ সালে ইরানের বিপ্লবী গার্ডের বিদেশি শাখা কুদস ফোর্সের ডেপুটি কমান্ডার হন কানি। তখন সোলেইমানি হন বাহিনীর প্রধান কমান্ডার।
দায়িত্ব গ্রহণ করেই কানি তার পূর্বসূরি সোলেইমানি হত্যার প্রতিশোধ হিসেবে মধ্যপ্রাচ্য থেকে মার্কিন বাহিনীকে বিতাড়িত করার প্রতিশ্রুতি দেন। সোলেইমানির শেষকৃত্যের আগে রাষ্ট্রীয় রেডিও তেহরানে কানিকে উদ্ধৃত করে বলে, ‘আমরা একই শক্তিতে শহীদ সোলেইমানির পথে হাঁটার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি…এবং আমাদের একমাত্র ক্ষতিপূরণ হবে আমেরিকাকে এই অঞ্চল থেকে বিতাড়িত করা।’
৬৭ বছর বয়সী কানি উত্তর-পূর্ব ইরানের একটি রক্ষণশীল শিয়া মুসলিম ধর্মীয় শহর মাশহাদে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৮০-এর দশকে ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময় বিপ্লবী গার্ডের হয়ে যুদ্ধ করেছিলেন তিনি।
আফগানিস্তান ও পাকিস্তানসহ ইরানের পূর্ব সীমানা ছাড়িয়ে বিদেশি অভিযানের অভিজ্ঞতাও রয়েছে কানির। তিনি আরবিতে ইরাকি মিলিশিয়া ও হিজবুল্লাহ কমান্ডারদের সঙ্গে সাবলীলভাবে কথা বলতে পারেন না, যেমনটি পারতেন সোলেইমানি।
ব্যক্তি হিসেবে সোলেইমানির মতো এতটা জনপ্রিয় নন কানি। অনলাইনে কিংবা ফাঁস হওয়া কূটনৈতিক মাধ্যমগুলোতেও তার সম্পর্কে তেমন একটা তথ্য পাওয়া যায় না।
সোলেইমানি বছরের পর বছর ধরে ইরাক ও সিরিয়ার যুদ্ধক্ষেত্রে তেহরানের সশস্ত্র ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মিলিশিয়াদের সঙ্গে অসংখ্য ছবি তুলেছিলেন। তবে কানি নিজের বিষয় খুব অল্প তথ্যই প্রকাশ করেছেন। বেশিরভাগ সময়েই তিনি তার সব মিটিং ও প্রতিবেশি দেশগুলোতে সফর গোপনে পরিচালনা করতে পছন্দ করতেন।