দুর্নীতি নয়, ব্যর্থতার দায়ে ফারুককে অপসারণ

ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ
স্পোর্টস ডেস্ক
  ৩১ মে ২০২৫, ২১:৩৬

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতির পদ থেকে ফারুক আহমেদকে অপসারণের কারণ ব্যাখ্যা দিয়েছেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। আজ (শনিবার) জাতীয় হ্যান্ডবল প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়েছিলেন দেশের ক্রীড়া প্রশাসনের এই অভিভাবক। পুরস্কার বিতরণ শেষ উপস্থিত গণমাধ্যমকে তিনি বিসিবির বড় পদে পরিবর্তণের কারণ ব্যাখ্যা করেছেন।
বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার দুই সপ্তাহের মধ্যেই বিসিবি সভাপতি পদে ফারুক আহমেদকে বসিয়েছিল ক্রীড়া প্রশাসন। ৯ মাসের মাথায় সরকার থেকেই পরিবর্তন আনা হয়েছে বিসিবির শীর্ষ পদে। ফারুক আহমেদকে সরিয়ে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ তাদের পরিচালক পদে মনোনয়ন দিয়েছে আরেক ক্রিকেটার আমিনুল ইসলাম বুলবুলকে। শুক্রবার বিসিবির পরিচালনা পর্ষদ সভা করে নতুন পরিচালক বুলবুলকে সভাপতি নির্বাচিত করে।
সরকারই ফারুক আহমেদকে সভাপতি করেছিল। সেই সরকারই আবার তাকে সরিয়ে দিয়েছে। কোনো প্রকার আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে ফারুক আহমেদকে কেন সকার সরিয়ে দিয়েছে? এমন প্রশ্নের জবাবে আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, 'এটা আসলে শাস্তি বা অন্য কিছু নয়। নতুন নেতৃত্ব আসার পর আমাদের যে প্রত্যাশা ছিল নয় মাসে সেটা আমরা দেখিনি।’
‘এই সরকার আসার পর পাকিস্তানের বিপক্ষে ঐতিহাসিক টেস্ট সিরিজ জিতে এসেছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। এরপর থেকে আমরা ক্রম অবনতি দেখতে পাচ্ছি। খুবই দুঃখজনকভাবে আমাদের যে নতুন নেতৃত্ব এসেছিল তারা পারফরম্যান্স দেখাতে পারেনি। আমি তো স্পোর্টসের মানুষ না। আমি ১০ জনের সাথে কথা বলে যাকে মনে করেছি, ভালো পরিচালনা করতে পারবে তাকেই বাকি পরিচালকরা সভাপতি মনোনীত করেছিলেন; কিন্তু সেই নেতৃত্ব ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। আমাদের তো বিচার করতে হবে পারফরম্যান্স দিয়ে। সেই পারফরম্যান্স আশানুরুপ নয়।'
বিপিএল প্রসঙ্গে ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেছেন, 'বিপিএল-এর যে সত্যানুন্ধান কমিটি ছিল তাদের প্রতিবেদনে আমরা দেখেছি, সেখানে অনেক অনিয়ম ও দায়িত্ব অবহেলার কারণে বিপিএলে যে ধরণের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, সেগুলোতে মোটামুটি ফারুক আহমেদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। আপনারা জানেন যে, বিসিবির ৯ পরিচালকের মধ্যে ৮ জন সভাপতির বিপক্ষে অনাস্থা প্রস্তাব এনএসসিতে পাঠিয়েছে। ক্রিকেটে যেমন ১১ জন মাঠে খেলে সে রকম টিম বিসিবিতে হয়নি আসলে। ফ্যাসিবাদের সহযোগী যারা ছিলেন বিসিবিতে তারা ৫ আগস্টের পর পালিয়ে গেছেন। বাকি যারা আছেন, তারা কেউই ওনার (ফারুক) সাথে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছিলেন না। তাই আমরা দেখছিলাম বাংলাদেশের ক্রিকেটের ক্রমাবনতি। বাংলাদেশ ক্রিকেটের যে পরিস্থিতি এবং বিপিএলের সত্যানুসন্ধান কমিটির প্রতিবেদন- সবমিলিয়ে আমাদের একটা সিদ্ধান্তে আসতে হয়েছে।’
ফারুককে সরানোর আগে তার সাথে ক্রীড়া উপদেষ্টা ব্যক্তিভাবে কথা বলেছেন বলে জানিয়েছেন। ‘ফারুক ভাইয়ের সাথে আমি কথা বলেছি যে, এটা এমন না যে কোনো দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। এই পরিবর্তন পুরোপুরি পারফরম্যান্স নির্ভর। দেখুন সিলেকশন বোর্ড যদি দেখে একজন খেলোয়াড় নিয়েমিত খারাপ করছে, তাকে তো আর দলে রাখবে না। আমাদের দিক থেকেও ব্যাপারটা সেরকমই ছিল। আমরা আবারো ক্রিকেট সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।'
আপনি তো অনিয়মের সংশ্লিষ্টতার কথা বলেছিলেন, 'আসলে অনিয়ম বলতে, রিপোর্টতো আপনারা সবাই দেখেছেন। তদন্ত কমিটি সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলেছে। দুর্বার রাজশাহী দলটি যাদেরকে দেওয়া হয়েছে তাদের বিষয়ে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় থেকে আমরা শঙ্কার কথা জানিয়েছিলাম। তারপরও এক ধরনের ব্যক্তি সিদ্ধান্তে সেই টিমটা দেওয়া হয়েছিল। তারপর ওই দলের খেলোয়াড়দের বেতন দেওয়া নিয়ে সরকারকে পর্যন্ত সম্পৃক্ত হতে হয়েছে। একটা বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, যেটা আমরা কেউই চাইনি। বিপিএলের ফাইনাল ম্যাচে সরকার প্রধানের থাকার কথা ছিল। এই পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার কারণে তাকে আমরা আনতে পারিনি, যেটা আমাদের জন্য, বোর্ডের জন্য লজ্জাজনক'- বলেছেন ক্রীড়া উপদেষ্টা।
সব কিছুর পরও ক্রীড়াঙ্গনে এভাবে কাউকে বের করে দেওয়ার রেওয়াজ নেই। তাহলে আপনি ভুল করেছিলেন তাকে (ফারুক) মনোনয়ন দিয়ে? জবাবে ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেছেন, 'আপনাকে দেখতে হবে পদ্ধতিটা কি? দুইজনকে মনোনয়ন দেওয়ার এখতিয়ার জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের আছে। মনোনয়ন যেমন দিতে পারে, আবার বাতিলও করতে পারে। আমরা মনোনয়ন দিয়েছিলাম। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আমাদের মনে হয়েছে এখন রাখার প্রয়োজন নেই। আমরা কিন্তু সভাপতিকে অপসারণ করিনি। আমরা এনএসসি থেকে তার পরিচালক মনোনয়ন সরিয়ে নিয়েছি। আমরা আরেকজনকে পরিচালক মনোনয়ন দিয়েছি। বোর্ডে যারা আছেন, তারা নিয়ম অনুসারে আইসিসির গাইডলাইন ও বিসিবির গঠনতন্ত্র অনুসারে বোর্ড আরেকজনকে সভাপতি নির্বাচিত করেছে। প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই তার সভাপতি পদটি চলে গেছে।’