মেট্রোরেল হঠাৎ বন্ধ হলে যা করতে হবে যাত্রীদের

জুবায়ের আহমেদ
  ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:৩৬

সম্প্রতি বিদ্যুতের তারে ঘুড়ি আটকে ও যান্ত্রিক ত্রুটিসহ অন্যান্য কারণে বেশ কয়েকবার মেট্রোরেল চলাচলে বিঘ্ন ঘটেছে। কয়েক মিনিট থেকে একঘণ্টা পর্যন্তও বন্ধ ছিল ট্রেন চলাচল। এরকম সমস্যায় ট্রেনের ভেতরে থাকা যাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। চলতি পথে হঠাৎ মেট্রোরেল বন্ধ হয়ে গেলে যাত্রীরা কী করবেন, তাদের দুশ্চিন্তার কোনও কারণ আছে কিনা, এ বিষয়ে জানতে চাইলে উত্তর দিয়েছে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ। কোনও কারণে মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ হলে যাত্রীদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই বলে তারা জানিয়েছেন।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের কোম্পানি সচিব (যুগ্ম সচিব) মোহাম্মদ আবদুর রউফ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, মানবসৃষ্ট বা কোনও টেকনিক্যাল কারণে মেট্রোরেল থেমে গেলে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। মেট্রোরেলে এনার্জি স্টোরেজ সিস্টেম বা ইএসএস প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। ট্রেন যখন চলে এটি নিজেও কিছু বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। চলাচলের সময় ট্রেনের ব্রেকিং সিস্টেম থেকে ব্যাটারিতে চার্জ হতে থাকবে।
তিনি জানান, দুই স্টেশনের মধ্যবর্তী কোনও জায়গায় মেট্রোরেল থেমে গেলে এটি নিজের রিজার্ভ বিদ্যুৎ দিয়ে নিকটবর্তী স্টেশনে থামবে। এক্ষেত্রে সামনের স্টেশনেও যেতে পারে, আবার রিভার্স নিয়ে পেছনের স্টেশন, যেটা কাছে থাকবে সেখানেও যেতে পারে। প্ল্যাটফর্মে ট্রেন আসার পর অটোমেটিক ডোরগুলো খুলে যাবে। তখন যাত্রীরা চাইলে অপেক্ষায় থাকতে পারেন। আবার অন্য কোনও উপায়ে গন্তব্যেও চলে যেতে পারবেন।
ট্রেনের ভেতরেও ঘোষণা দেওয়া হয় জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের ট্রেনগুলোর ভেতরে স্ক্রিন আছে, সেখানে সমস্যার কথা উল্লেখ করি, যাতে যাত্রীরা জানতে পারেন কী কারণে ট্রেনটা থেমে আছে। এছাড়াও ট্রেন অপারেটরও সরাসরি যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। তিনিও পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করেন।
ট্রেন থেমে গেলে যাত্রীদের আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে ডিএমটিসিএল-এর কোম্পানি সচিব আরও বলেন, যাত্রীদের বলবো, আপনারা নির্দেশনা ফলো করবেন। নির্বিঘ্নে ও নিরাপদে নিকটবর্তী স্টেশনে নেমে যেতে পারবেন।
মেট্রোরেল প্রকল্প থেকে জানা যায়, বিদ্যুৎ সঞ্চালনের জাতীয় গ্রিডের সবগুলোর সঙ্গে সংযোগ থাকবে মেট্রো সিস্টেমের। ফলে দেশের কোথাও বিদ্যুৎ থাকলেই নিরবচ্ছিন্নভাবে মেট্রোরেল চলবে।
হঠাৎ মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ার সময় ট্রেনের ভেতরে ও প্ল্যাটফর্মে থাকা যাত্রীরা জানান, এমন পরিস্থিতিতে ট্রেন কিছুটা ধীরে চলা শুরু করে। পরে স্টেশনে এসে থামে। তখন ঘোষণা দেওয়া হয় ট্রেন ছাড়তে কিছুটা দেরি হবে।
যাত্রী নাইম হোসেন সোহাগ বলেন, আমি প্ল্যাটফর্মে ছিলাম। ট্রেন এসে থামলো। দরজা ওপেন হওয়ার পর অনেক যাত্রী বের হয়ে আসেন। কেউ প্ল্যাটফর্মে অপেক্ষা করেন, আবার কেউ চলে যান। ঘোষণা দিচ্ছিল ট্রেন ছাড়তে বিলম্ব হবে। পরে ট্রেন চালু হলে সবাইকে ভেতরে প্রবেশ করার ঘোষণাও দেওয়া হয়। তেমন হইচই হয়নি। মোটামুটি স্বাভাবিক ব্যাপার লাগছে।
মেট্রোরেলের চলাচল বারবার বিঘ্নিত হওয়ার সমাধান জানতে চাইলে ডিএমটিসিএলের কোম্পানি সচিব (যুগ্ম সচিব) মোহাম্মদ আবদুর রউফ বলেন, জানুয়ারির শেষ দিকে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত রাত নাগাদ মেট্রোরেল চালু হওয়ায় যাত্রীর সংখ্যা অনেক বেড়েছে। এখনও যাত্রীদের অনেকেই মেট্রোরেল সিস্টেমের সঙ্গে পুরোপুরি পরিচিত নন। এ কারণে যাত্রীদের মেট্রোরেল ব্যবহার আর মেট্রোরেলের প্রযুক্তির মধ্যে সমন্বয় হয় না অনেক সময়। আবার বাইরে থেকে ঘুড়ি-ফানুস এসব এসে পড়ার কারণেও ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
প্রসঙ্গত, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি মেট্রোরেলের সিগন্যাল সিস্টেমে ত্রুটি দেখা দেওয়ায় স্বয়ংক্রিয় দরজা বন্ধ বা খোলা যাচ্ছিল না। এ কারণে প্রায় ঘণ্টাখানেক ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে। এদিন দুপুরে ২টা ৩৮ মিনিটে পল্লবী স্টেশনে এই সমস্যা সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে চলতি মাসে তিনবার মেট্রোরেল চলাচলে ব্যাঘাত ঘটে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, মেট্রোরেলের অটোমেটিক ডোরে সিগন্যাল কাজ না করায় দরজা বন্ধ হয়ে যায়। যাত্রীদের ওঠানামার সময় এই ত্রুটি দেখা দেয়।
এর আগে ১৪ ফেব্রুয়ারি ঘুড়ি ও ফানুস আটকে ৪০ মিনিট বন্ধ থাকে মেট্রোরেল চলাচল। মিরপুরের কাজিপাড়া এলাকায় মেট্রোরেলের বৈদ্যুতিক তারে ঘুড়ি আটকে যাওয়ার কারণে যাত্রীসেবা বন্ধ ছিল।
গত ৪ ফেব্রুয়ারি ওভারহেড ক্যাটেনারি সিস্টেমে (ট্রেন চলাচলের ওপরের বৈদ্যুতিক লাইন) বিদ্যুৎ সরবরাহ কম থাকায় মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ রাখা হয়।
গত ২৩ জানুয়ারি দুপুর ১২টা ১০ মিনিটের দিকে বন্ধ হয়ে যায় মেট্রোরেল চলাচল। মতিঝিল থেকে উত্তরা এবং উত্তরা থেকে মতিঝিল মেট্রোরেলের দুই দিকের চলাচলই বন্ধ থাকে প্রায় ১৫ মিনিটের মতো। ডিএমটিসিএল জানায়, মেট্রোরেলের বৈদ্যুতিক লাইনের ওপর পাশের এক ভবন থেকে ফেলে দেওয়া হয় স্যাটেলাইট টিভির ক্যাবল। এ কারণে ট্রেন চলাচল বিঘ্নিত হয়। কিন্তু পুলিশের দাবি ছিল, লাইনের ওপর ক্যাবল ছোড়ার জন্য নয়, মূলত যান্ত্রিক সমস্যার কারণেই মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।