ঈদের ছুটিতে ঘুরে আসুন নীলফামারীর ‘নীলসাগর’

মো. আমিরুজ্জামান
  ১১ এপ্রিল ২০২৪, ১৩:০৯

ঈদের ছুটিতে যারা ঘোরাঘুরির কথা চিন্তা করছেন। কিংবা বন-বাদারে একটুখানি সমুদ্রের পরশ খুঁজছেন তাদের জন্য অনাবিল আনন্দের জায়গা নীলফামারীর নীলসাগর।
এই ঈদে ঘুরে আসতে পারেন পরিবার-পরিজন নিয়ে। এখানে বিশাল জলরাশির দীঘি এবং দীঘির পাশে নানা জাতের গাছ দর্শনার্থীদের ভালো লাগবেই। রয়েছে মন জুড়ানো বাংলো। একান্ত নিরিবিলি সময় কাঁটানোর নিরাপদ ও কোলাহলমুক্ত নীলসাগর।
নীলফামারী শহর থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে গোড়গ্রাম ইউনিয়নের ধোপাডাঙ্গা মৌজায় ৫৩ দশমিক ৬০ একর জমির ওপর অবস্থিত নীলসাগর। উত্তর-দক্ষিণে লম্বা এ দীঘিকে ঘিরে রয়েছে বহু উপাখ্যান ও রূপকথা। কথিত আছে তৎকালীন বিরাট রাজা নামে এক রাজার বসবাস ছিল এখানে। তার বিপুলসংখ্যক গবাদি পশু ছিল। এ গবাদি পশুগুলোকে গোসল ও পানি খাওয়ানোর জন্য একটি দীঘি খনন করেন। রাজার নামানুসারের দীঘির নামকরণ করা হয় বিরাট দীঘি। কালের বিবর্তনে বিরাট দীঘি বিন্নাদীঘি নাম ধারণ করে। ১৯৯৮ সালে এ দীঘির নামকরণ নীলফামারীর নামানুসারে নীলসাগর রাখা হয়।
শীত মৌসুমে সুদূর সাইবেরিয়া থেকে হাজার হাজার অতিথি পাখির আগমন ঘটে নীলসাগরে। এ সময় পাখির কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে উঠে নীলসাগর। এ সৌন্দর্য উপভোগ করতে বিভিন্ন এলাকা থেকে আগমন ঘটে অনেক দর্শনাথীর।
জনশ্রুতি রয়েছে, ১৯৯৩ সালে সংস্কারের সময় দীঘির তলদেশে পাওয়া গিয়েছিল স্বর্ণ, রৌপ্য এবং কষ্টি পাথরের মূল্যবান মূর্তি। তবে মজার ব্যাপার হলো, মাটির তলদেশে মন্দিরের অস্তিত্ব পাওয়া গেলেও সেখানে বাস করতো বিশাল আকৃতির দুটি মাছ। ডুবুরিরা এই মন্দিরের ভেতরে যেতে পারেননি। কারণ, তাদের নাকি অলৌকিকভাবে ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছিল।  
কথিত আছে, এক সময় নাকি নীলসাগরের পানি শুকানোর জন্য অনেকগুলো মেশিন বসানো হয়েছিল। কিন্ত পানির উচ্চতার কোনো পরিবর্তন হয়নি। লোকমুখে শোনা যায়, অতীতে গ্রামের লোকজন বিন্নাদীঘির পানিতে গাভীর প্রথম দুধ উৎসর্গ করতেন। কয়েক মিনিটের মধ্যেই দুধ চক্রাকারে ঘুর্ণায়মান অবস্থায় দীঘির মাঝখানে চলে যেত। তাদের বিশ্বাস ছিল, এতে গাভীর দুধ বেশি হবে এবং অনিষ্টকারীর দৃষ্টি থেকে গাভীটি রক্ষা পাবে। সত্য- মিথ্যা যাই হোক, দিন দিন মানুষের আনাগোনা বৃদ্ধি এবং জনপ্রিয়তা বাড়ায় উন্নয়নের ছোঁয়া লাগতে শুরু করেছে নীলসাগরে।
এ ব্যাপারে নীলফামারী জেলা প্রশাসক কার্যালয় সূত্র জানায়, বিভিন্ন সময়ে নীলসাগরের ভূমি উন্নয়ন, সীমানা প্রাচীর, আরসিসি বেঞ্চ, গার্ডশেড, রেস্ট হাউস, টিনসেড ঘরসহ সেড, নলকূপ, অভ্যন্তরীন সড়ক, পার্কিং এলাকা, আসবাবপত্র, ক্রোকারিজ, বৃক্ষরোপণ ও পরিচর্যা, মৎস্য চাষ ও পরিচর্যাসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করা হয়েছে।  
ঢাকা ছাড়াও দূরবর্তী স্থান থেকে নাবিল, হানিফ, শ্যামলী পরিবহনের বাসে বা রেলওয়ের নীলসাগর ও চিলাহাটি এক্সপ্রেস আন্ত:নগর ট্রেনে করে নীলফামারী শহরে এসে পৌঁছানোর পর স্থানীয় পরিবহনে নীলসাগরে যাওয়া যায়। নীলফামারী শহর থেকে দেবীগঞ্জগামী বাস ছাড়াও রিকশাভ্যান, মাইক্রোবাস এবং মোটরসাইকেলে করে অনায়াসে যাওয়া যায় নীলসাগরে। এখানে রাত যাপনের জন্য রেস্ট হাউস রয়েছে। জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিয়ে ভাড়া নেওয়া যায় নীলসাগরের এ সব হাউসে। এছাড়া জেলা সদরে হোটেল অবকাশ, হোটেল আর রহমান, হোটেল শিশির, নাভানা রেনস্ট হাউসসহ বিভিন্ন হোটেল রয়েছে। এছাড়া আকাশপথে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে নেমে নীলসাগরে যাওয়া যায়।