প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৮ থেকে ১২ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ু তাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে বলে জানানো হয়েছিল।
সোমবার (২৭ মে) সকালে সুন্দরবনের কয়েকটি ইকো রিসোর্টের সত্ত্বাধিকারীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা পুরো ফাঁকা রেখে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে পারেননি। আবার কেউ জানিয়েছেন ৩/৪ কিলোমিটার কাদা পথে হেঁটে যাওয়া অসম্ভব। সন্ধ্যার পর এই জেলার অনেকেই আশ্রয়কেন্দ্রে গেলেও ঘরবাড়ি ছেড়ে যাননি কেউ কেউ। তবে আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়েও দুশ্চিন্তায় নির্ঘুম রাত কেটেছে।
ইরাবতী ইকো রিসোর্ট অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারের স্বপ্নদ্রষ্টা ও পিয়ালি ইকো রিসোর্ট অ্যান্ড কালচারাল সেন্টারের চেয়ারম্যান কবি আঁখি সিদ্দিকার সঙ্গে কথা বলে সোমবার সকালে সর্বশেষ পরিস্থিতি জানা যায়। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সকালে ঘরের ভেতর পানি এসেছে। সামনের বাঁধ ভেঙে নদীর পানি উপচে আছে।’ আশ্রয়কেন্দ্রে না গিয়ে বিপদ মাথায় নিয়ে থেকে গেলেন কেন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘যাওয়ার মতো পরিস্থিতি ছিল না। রাস্তায় কোনও যান চলেনি। হাঁটাও তো সম্ভব না, প্রচণ্ড কাদা। পাশের রিসোর্ট ইরাবতীর বেশিরভাগের সঙ্গে যোগাযোগের রাস্তা বন্ধ হয়েছে।’
ইরাবতী পিয়ালির মতো এতটা না ডুবলেও সেখানেও পানি ঢুকেছে। এর সঙ্গে জড়িত বন্ধু-স্বজনেরা দুশ্চিন্তায় রাত কাটিয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে, এসব ইকো রিসোর্টে খড় বাঁশের ব্যবহার বেশি হওয়ায় পানি স্থায়ী হলে ক্ষতিটাও বাড়বে।
বরগুনার আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে মানুষ গেছেন ঠিকই, সারা রাত ঘুমাতে পারেননি কেউ। সদর উপজেলার মবিন বলেন, ‘রাত ১১টা থেকে জোয়ার শুরু হলে চারপাশ ডুবতে শুরু করে। এখন কী অবস্থা জানি না। এই এলাকা তলিয়ে যাবে বুঝতে পারিনি। সবাইকে নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছি, কিন্তু বউ বাচ্চা নিয়ে এখানে থাকার পরিবেশ নাই। আল্লাহ আল্লাহ করেছি সারা রাত।’
উল্লেখ্য, প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ। ভারী বর্ষণের প্রভাবে পাহাড়ি অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমিধ্বস হতে পারে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।