গ্রেটার জাহাজ আটকে ইসরায়েল কি আইন ভঙ্গ করেছে?

ডেস্ক রিপোর্ট
  ১১ জুন ২০২৫, ২১:০২


ইসরায়েলের নৌবাহিনী সোমবার ভোরে গাজার উদ্দেশে যাওয়ার সময় একটি জাহাজ থামিয়ে দেয়। এতে থাকা জলবায়ু আন্দোলনকর্মী গ্রেটা থুনবার্গসহ আন্তর্জাতিক অ্যাক্টিভিস্টদের আটক করে।
অভিযোগ উঠেছে, ইসরায়েল আন্তর্জাতিক জলসীমায় এ অভিযান চালিয়ে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে।
আন্দোলনকারীদের মতে, গাজায় ইসরায়েলের চলমান যুদ্ধ এবং মানবিক সংকটের প্রতিবাদ জানিয়েছেন তারা। ‘ম্যাডলিন’ নামের জাহাজে শিশুখাদ্যসহ নানা মানবিক সহায়তা ছিল। এগুলো গাজার মানুষের জন্য পাঠানো হচ্ছিল। গ্রেটা থুনবার্গসহ সবাইকে আটক করে ইসরায়েলে নেওয়া হয়।
এর আগে ২০১০ সালে গাজামুখী সাহায্যবাহী একটি জাহাজে অভিযান চালিয়ে ইসরায়েল আন্তর্জাতিক ক্ষোভের মুখে পড়েছিল। সে সময় তুর্কিয়ের আটজন এবং একজন টার্কিশ-অ্যামেরিকান নিহত হন। পরবর্তী সময়ে বেশির ভাগ অভিযানে জাহাজ থামিয়ে আন্দোলনকারীদের আটক করা হলেও তেমন সংঘাত হয়নি।
আন্তর্জাতিক জলসীমায় অভিযান
ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের দাবি, ম্যাডলিন জাহাজকে গাজার উপকূল থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে, অর্থাৎ আন্তর্জাতিক জলসীমায় থামানো হয়েছে।
আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইউএন কনভেনশন অন দ্য ল' অব দ্য সি অনুযায়ী, কোনো রাষ্ট্র সাধারণত তাদের উপকূল থেকে ১২ নটিক্যাল মাইল বা প্রায় ১৯ কিলোমিটারের বেশি দূরে নৌযান আটকাতে পারে না, তবে যুদ্ধাবস্থায় ব্যতিক্রম হতে পারে।
একজন বিশেষজ্ঞ বলছেন, যদি কোনো জাহাজ বৈধভাবে আরোপিত নৌ অবরোধ ভাঙতে চায়, তাহলে সেটিকে ইসরায়েল থামাতে পারে, তবে এই অবরোধের আইনি বৈধতা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে এখনও মতভেদ রয়ে গেছে।
ইসরায়েলের অধিকার নিয়ে বিতর্ক
হিব্রু ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ যুবাল শানি বলেন, যদি গাজার ওপর আরোপিত অবরোধ সামরিকভাবে যৌক্তিক হয় এবং যদি সংশ্লিষ্ট জাহাজ অবরোধ ভাঙার চেষ্টা করে, তাহলে ইসরায়েল আগে সতর্ক করে সেই জাহাজ আটকাতে পারে।
অন্য আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামরিক হুমকি না থাকা সত্ত্বেও আন্তর্জাতিক জলসীমায় কোনো জাহাজে অভিযান চালানো ইসরায়েলের পক্ষে আইনসঙ্গত নয়। আন্তর্জাতিক জলসীমায় কোনো জাহাজে হস্তক্ষেপ করার অধিকার নেই ইসরায়েলের।
ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দাবি, আন্তর্জাতিক আইন মেনেই সব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
আন্তর্জাতিক আইনে গাজা ও ইসরায়েলের দায়িত্ব
গাজার বিশেষ অবস্থানের কারণে বিষয়টি আরওজটিল হয়েছে। জাতিসংঘ এবং অধিকাংশ আন্তর্জাতিক সংস্থা গাজাকে ইসরায়েল-অধিকৃত ভূখণ্ড হিসেবে দেখে, যেমনটা তারা করে পূর্ব জেরুজালেম ও পশ্চিম তীরের ক্ষেত্রেও।
ইসরায়েল অবশ্য দাবি করে, তারা ২০০৫ সালে গাজা থেকে সম্পূর্ণরূপে সরে গেছে। যদিও বাস্তবে ইসরায়েল এখনও গাজার উপকূল, আকাশপথ ও সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ করে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ভাষ্য, দখলদার শক্তি হিসেবে ইযরায়েলের দায়িত্ব ছিল গাজায় মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করা। সেই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে তারা। তাদের মতে, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েল নিয়মিতভাবেই গাজায় সহায়তা প্রবেশে বাধা দিচ্ছে। অন্যদিকে ইসরায়েল বলছে, তারা পর্যাপ্ত সহায়তা ঢুকতে দিচ্ছে, বরং হামাসই সেগুলো দখল করে নিচ্ছে। যদিও জাতিসংঘ এবং অন্যান্য সংস্থা এর কোনো প্রমাণ পায়নি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ইসরায়েলের এ নীতির ফলেগাজা চরম খাদ্য সংকটে পড়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ক্ষুধাকে ব্যবহার করার অভিযোগ এনেছে।
অ্যামনেস্টি আরও জানিয়েছে, ম্যাডলিন জাহাজে থাকা আন্দোলন কর্মীদের এবং মানবিক সহায়তা গাজায় পৌঁছাতে বাধা দিয়ে ইসরায়েল আবারও আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে।
সংগঠনটি আটক সব কর্মীর নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানায়।