যে ট্রাম্প এক সময় বলেছিলেন, “অবৈধ অভিবাসীদের এক মুহূর্তও রাখা যাবে না,” সেই তিনিই এখন কৃষি খামারিদের আহাজারি শুনে বলছেন—“শ্রমিক দরকার।” ফল না তোলার, বিছানা না গোটানোর, মাংস প্যাক না হওয়ার বাস্তবতায় মাথা ঠেকে গেছে হোয়াইট হাউসের। অভিবাসন দমন নীতির কড়াকড়ির মাঝেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এখন চালু করছেন এক নতুন ভিসা কর্মসূচি, যার মাধ্যমে বিদেশি শ্রমিকরা নিজ নিজ দেশ থেকে আবেদন করে যুক্তরাষ্ট্রে বৈধভাবে কাজ করতে পারবেন। এই ঘোষণা শুধু প্রশাসনিক নয়, এটি এক ধরনের আত্মস্বীকৃতি—এই দেশের অর্থনীতি এখনও অনেকাংশে নির্ভর করে অভিবাসীদের শ্রমের ওপর।
নতুন কর্মসূচির নাম দেওয়া হয়েছে “অফিস অফ ইমিগ্রেশন পলিসি”। এটা হবে একধরনের ‘ওয়ান-স্টপ’ সেবা, যেখান থেকে অস্থায়ী শ্রমিকদের জন্য ভিসা সহজে ও দ্রুত পাওয়া যাবে। যারা কৃষিখাতে, হোটেল-রেস্তোরাঁয় কিংবা গৃহপরিচারনার মতো মৌসুমভিত্তিক শ্রম দিতে চান, তাদের জন্য খুলে যাচ্ছে এক নতুন পথ। তবে প্রশাসন স্পষ্ট করে দিয়েছে—যারা অবৈধভাবে ইতিমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রে আছেন, তারা এই সুবিধার আওতায় আসবেন না।
ট্রাম্প প্রশাসনের এমন ‘বিপরীতমুখী’ সিদ্ধান্ত এসেছে এক গভীর সংকট থেকে। অভিবাসন সংক্রান্ত অভিযান, আইসিই (ICE)-র ধরপাকড়, এবং কট্টর নীতির ফলে দেশের খামারগুলোতে শ্রমিক নেই, হোটেল-রেস্তোরাঁ খাতে উৎপাদন বাধাগ্রস্ত। একটি কৃষক ইউনিয়নের ভাষায়—"ফসল পাকছে, তুলতে কেউ নেই।" প্রেসিডেন্টের ঘনিষ্ঠরা নিজেরাই বলছেন—এটা শুধু অর্থনীতির নয়, নির্বাচনের বছরেও এটা রাজনৈতিক বাস্তবতা।
১২ জুন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশাল -এ প্রকাশ্যেই লিখেছেন—খামার, হোটেল ও বিনোদন খাতে শ্রমিক সংকট বাড়ছে। ঠিক তার পরেই আসে এই নতুন ভিসা ঘোষণার খবর। এর পেছনে ছিলেন এগ্রিকেলচার সেক্রেটারি ব্রুক রোলিন্স, যিনি ব্যক্তিগতভাবে প্রেসিডেন্টকে বোঝান। যদিও এতে চমকে যান হোয়াইট হাউসের অনেক ‘কঠোরপন্থী’—স্টিফেন মিলার, ক্রিস্টি নোম ও সুজি ওয়াইলস, যারা শুরু থেকেই ছিলেন ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির রূপকার।
এই অফিস এখনও বলার মতো কাজ শুরু না করলেও, এটিই হবে এমন একটি কেন্দ্র, যেখান থেকে নিয়োগদাতারা সরাসরি ভিসা অনুমোদনের জন্য আবেদন করতে পারবেন। কর্মকর্তারা বলছেন, এটি হবে ‘গ্রাহককেন্দ্রিক’ এবং অন্যান্য ফেডারেল সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করেই কাজ করবে।
তবে প্রেসিডেন্ট ও প্রশাসন যতই বলুক—“এটা অ্যামনেস্টি নয়”, অভিবাসন কঠোরপন্থীরা সেই কথায় আশ্বস্ত নন। মার্ক ক্রিকোরিয়ান, একজন প্রবল অভিবাসন সীমাবদ্ধতাবাদী। তিনি বলেন, “যখন কেউ বলে ‘এটা অ্যামনেস্টি নয়’, তখনই বুঝে নিতে হয়—এটাই অ্যামনেস্টি।” তিনি আরও বলেন, ট্রাম্পের উচিত হবে H-2A ভিসার ন্যূনতম মজুরি বাড়ানো, যাতে কৃষকরা যন্ত্রায়নে বিনিয়োগ শুরু করে এবং ‘অবৈধ শ্রমিক’ নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারে।
এইসব টানাপোড়েনের মাঝেই সামনে আসে এক বাতিল হওয়া পরিকল্পনার কথা—"টাচব্যাক" প্রোগ্রাম, যার অধীনে অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে থাকা শ্রমিকদের নিজ দেশে ফিরে গিয়ে ভিসা সংগ্রহ করে আবার ফেরার সুযোগ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন আইনে ৬ মাসের বেশি অবৈধভাবে থাকার পর পুনঃপ্রবেশ নিষিদ্ধ—সে কারণে সেটি বাতিল হয়।
হোয়াইট হাউসের অভ্যন্তরীণ আলোচনায় প্রেসিডেন্ট নিজেও নাকি একবার মজা করে বলেন, “একজন মানুষ যদি ২০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে থাকে, রেকর্ড পরিষ্কার, সবাই তাকে ভালোবাসে, তবু স্টিফেন মিলার বলবে—তাকে বিতাড়ন করো!” এই রসিকতাই হয়তো ইঙ্গিত দেয়—ব্যবসা, ভোট, বাস্তবতা—সব মিলিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের নীতিতে এখন এক ধরনের নমনীয়তা এসেছে, যদিও বাইরে থেকে তাকে বলা হচ্ছে ‘সার্বভৌম কঠোরতা’।
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র আবিগেইল জ্যাকসন বলেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আমেরিকান কৃষকদের প্রতি দায়বদ্ধ। তিনি চান কৃষকেরা যেন প্রয়োজনীয় শ্রমিক পান এবং সফল থাকতে পারেন।”
এই নতুন কর্মসূচি কতটা বাস্তবায়িত হবে, কত দ্রুত ফল দিবে—তা সময় বলবে। তবে এতদিন ধরে যারা অভিবাসন মানেই ‘প্রবেশ নিষিদ্ধ’ ভাবতেন, তাদের কাছে এই কর্মসূচি একটি বাস্তবতা-নির্ভর ইউটার্ন বলে মনে হচ্ছে।
এখন যাঁরা যুক্তরাষ্ট্রে বৈধভাবে কাজ করতে চান, তাঁদের জন্য সময় এসেছে প্রস্তুতি নেওয়ার। কারণ হোয়াইট হাউস হয়তো এখনও “অ্যামনেস্টি” শব্দটি ব্যবহার করছে না, কিন্তু বাস্তবতার কাছে মাথা নত করছে—এটা এক নতুন বার্তা।