মার্কিন নাগরিকত্ব পরীক্ষায় পরিবর্তনের ফলে নাগরিকত্ব আরো কঠিন হচ্ছে

ডেস্ক রিপোর্ট
  ৩০ অক্টোবর ২০২৫, ১৫:১৪

অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের অংশ হিসেবে ট্রাম্প প্রশাসন এখন গ্রিন কার্ডধারীদের জন্য মার্কিন নাগরিকত্ব পাওয়ার শর্ত আরো কঠিন করে তুলেছে, যার মধ্যে রয়েছে নাগরিকত্বের (ন্যাচারালাইজেশন) নাগরিক শিক্ষা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়াও।গত ২১ অক্টোবর থেকে, যারা নতুন করে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করবেন, তাদের আরো দীর্ঘ, জটিল এবং আংশিকভাবে বিষয়ভিত্তিক একটি নতুন নাগরিক শিক্ষা পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হবে। তবে যারা গত ২০ অক্টোবরের আগে আবেদন করেছেন, তারা আগের ২০০৮ সালের পরীক্ষাটি দিতে পারবেন।নতুন মৌখিক পরীক্ষায় ১২৮টি প্রশ্নের মধ্য থেকে ২০টি প্রশ্ন করা হবে। পরীক্ষায় পাস করতে হলে অন্তত ১২টির সঠিক উত্তর দিতে হবে, ৯টি ভুল হলে পরীক্ষায় অকৃতকার্য গণ্য করা হবে।
অ্যাডভোকেসি অলাভজনক সংস্থা ন্যাশনাল পার্টনারশিপ ফর নিউ আমেরিকানস (এনপিএনএ) বলছে, নতুন এই পরীক্ষাটি আগের মতো সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক নয়, বরং এতে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস ও নাগরিক জ্ঞান নিয়ে আরো বিস্তারিত প্রশ্ন রাখা হয়েছে। যা অনেক আবেদনকারীকে নাগরিকত্বের আবেদন থেকে নিরুৎসাহিত করতে পারে। এনপিএনএ’র নির্বাহী পরিচালক নিকোল মেলাকু বলেছেন, নতুন এই নাগরিকত্ব পরীক্ষা হচ্ছে পরিকল্পিতভাবে তৈরি করা আরেকটি প্রাতিষ্ঠানিক বাধাÑ শেখানোর জন্য নয়, বাদ দেয়ার জন্য, কোনো ব্যক্তির নাগরিক হওয়ার যোগ্যতা, তার অর্থনৈতিক সামর্থ্য, সাক্ষরতা, ঐতিহাসিক মতামত বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কী পোস্ট করেÑ তার ওপর নির্ভর করা উচিত নয়। এনপিএনএ ও ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সান ডিয়েগো ক্যাম্পাসের ইউএস ইমিগ্রেশন পলিসি সেন্টার-এর যৌথ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পরীক্ষার পরিবর্তনের ফলে নাগরিকত্ব আবেদন বাতিলের হার প্রায় ২৪ শতাংশ বেড়েছে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রথম ছয় মাসের তুলনায় বাইডেন প্রশাসনের শেষ ছয় মাসে।
অলাভজনক সংস্থাটি সতর্ক করে বলেছে, প্রক্রিয়াটি কঠিন করার ফলে আবেদন জমে থাকবে, এবং এতে নাগরিকত্ব প্রক্রিয়ার ব্যাকলগ আরো বাড়বে। বর্তমানে নাগরিকত্ব আবেদন প্রক্রিয়াকরণে গড়ে ৫.২ মাস থেকে বেড়ে ৭.৯ মাস লাগছে, এবং এই বিলম্ব আরো বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মেলাকু বলেন, আমরা যখন দেখি নাগরিকত্ব বাতিলের হার ২৪ শতাংশ বেড়েছে, প্রক্রিয়ার সময় দ্বিগুণ হচ্ছে, সরকার বন্ধ থাকার কারণে নাগরিকত্ব অনুষ্ঠানের বাতিল হচ্ছে, আর সারা দেশে অভিবাসী অধিকারকর্মীরা সতর্ক সংকেত দিচ্ছেন তখন বার্তাটা স্পষ্ট। আমরা আমাদের বৈধ অভিবাসন ব্যবস্থার ধ্বংস প্রত্যক্ষ করছি, যা পরিবারগুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে, সমাজকে দুর্বল করছে, এবং সেই গণতন্ত্রকেই দুর্বল করছে, যেটি এই পরীক্ষা উদযাপন করার দাবি করে।ট্রাম্প প্রশাসনের দ্বিতীয় মেয়াদে অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে ব্যাপক দমননীতি গ্রহণের পাশাপাশি বৈধ অভিবাসনের পথও কঠোর করা হয়েছে নাগরিকত্ব আবেদন খতিয়ে দেখা, জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলা এবং ভিসা ও নাগরিকত্বের শর্ত কঠোর করা হয়েছে।
নাগরিক শিক্ষা পরীক্ষায় মৌখিক অংশের এই পরিবর্তন শুধু শুরু হতে পারে। গত সেপ্টেম্বর মাসে, ইউএসসিআইএস পরিচালক জোসেফ এডলো অ্যাক্সিওস-কে বলেন, আগের পরীক্ষাটি ‘অত্যন্ত সহজ’ ছিল।তিনি আরো জানান, তিনি একটি রচনাভিত্তিক অংশ যোগ করার কথা ভাবছেন, যেখানে প্রশ্ন থাকবে যেমন ‘আমেরিকান হওয়া মানে কী?’ বা ‘আপনার প্রিয় প্রতিষ্ঠাতা পিতা কে ছিলেন?’গত সপ্তাহে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ ঘোষণা করেছে, যুক্তরাষ্ট্রে মানবিক কারণে প্রবেশ করা অভিবাসীদের এখন থেকে ১ হাজার ডলারের ফি দিতে হবে।
ডিপার্টমেন্ট জানিয়েছে, এই ফি ‘দায়বদ্ধতা বাড়াতে’ এবং ‘অপব্যবহার রোধে’ কার্যকর হবে।এই ফি প্রতিবছর মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করা হবে এবং প্যারোল অনুমোদনের আগে এটি পরিশোধ বাধ্যতামূলক, যদিও আইন অনুযায়ী নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে ছাড় দেয়া হবে।
ঘোষণার সময় হোমল্যান্ড সিকিউরিটির সহকারী সচিব ট্রিশিয়া ম্যাকলাফলিন বলেন, এই পদক্ষেপ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোমের বৃহত্তর প্রচেষ্টার অংশ যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন ব্যবস্থায় ‘আইন ও শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা’ করার জন্য। ম্যাকলাফলিন বলেন, এই নতুন ফি কার্যকর করার মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও সেক্রেটারি নোম নিশ্চিত করছেন যে, যারা এখানে থাকতে চান, তাদেরও কিছু দায়িত্ব নিতে হবে এবং তারা যেন ব্যবস্থার সুযোগ না নেন। এই প্যারোল ফি ঘোষণা আমাদের অভিবাসন ব্যবস্থাকে রক্ষা করার এবং দেশে আইন ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার আরেকটি হাতিয়ার।