
নিউইয়র্কে নির্মিত বাংলা স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ইলাইজা ইন্ডিয়ান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল অব সিনসিনাটিতে শ্রেষ্ঠ পরিচালকের পুরস্কার পেয়েছে। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কুইন্স–ভিত্তিক চলচ্চিত্র নির্মাতা রাজীদ সিজন এই পুরস্কার অর্জন করেন। রোববার (৭ ডিসেম্বর) ওহাইও অঙ্গরাজ্যের সিনসিনাটি শহরের মারিমন্ট থিয়েটারে আনুষ্ঠানিকভাবে তার হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।
প্রতিবছর আয়োজিত ইন্ডিয়ান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল অব সিনসিনাটিতে উপমহাদেশের মানুষের গল্পভিত্তিক দেশ–বিদেশে নির্মিত চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয়। নিউইয়র্কস্থ ভারতীয় হাইকমিশনের পৃষ্ঠপোষকতায় চার দিনব্যাপী এই উৎসব সিনসিনাটির তিনটি ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হয়।
বছরের শুরুতে উৎসবযাত্রা শুরুর পর থেকে 'ইলাইজা'এখন পর্যন্ত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে মোট নয়টি পুরস্কার অর্জন করেছে। সম্প্রতি অস্কার–যোগ্যতা সম্পন্ন তাসবির চলচ্চিত্র উৎসবে ছবিটি ‘তাসবির এমারেল্ড অ্যাওয়ার্ড’ লাভ করে।
নিউইয়র্কে বসবাসরত একটি বাংলাদেশি অভিবাসী পরিবারকে কেন্দ্র করে নির্মিত 'ইলাইজা' ছবিতে হলুদ ট্যাক্সির মেডালিয়ন সংকট, ট্রান্সজেন্ডার জীবনের বাস্তবতা এবং জীবনের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরা হয়েছে। পাশাপাশি এতে আত্মহত্যা প্রতিরোধের গুরুত্বপূর্ণ বার্তাও উঠে এসেছে।
পরিচালক রাজীদ সিজন বলেন, “জীবনের লড়াইয়ে অনেক মানুষ হতাশা ও মানসিক চাপে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন। এই চলচ্চিত্রের মাধ্যমে আমি আত্মহত্যার বিরুদ্ধে কথা বলতে চেয়েছি। কারণ প্রতিটি জীবনই অমূল্য।”
উৎসবের পরিচালক রাতী আপানা বলেন, “এ বছর আমরা বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য ও পুরস্কারপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র প্রদর্শন করেছি। সিনসিনাটিতে এই উৎসব অত্যন্ত জনপ্রিয়। জুরি সদস্যরা 'ইলাইজা' চলচ্চিত্রে রাজীদের পরিচালনাগত দক্ষতা ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির জন্য তাকে শ্রেষ্ঠ পরিচালক পুরস্কারে সম্মানিত করেছেন। ছবিটি আবেগঘন এবং দর্শকের সঙ্গে গভীর সংযোগ তৈরি করে।”
চলচ্চিত্রে হায়দার চরিত্রে অভিনয় করেছেন এজাজ আলম। তিনি বলেন, “নিউইয়র্কে দীর্ঘদিন অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও এটি আমার প্রথম চলচ্চিত্র। একজন অভিবাসী হিসেবে গল্পটি আমাকে গভীরভাবে স্পর্শ করেছে।”
ইলাইজার মা ‘নীলিমা’ চরিত্রে অভিনয় করা দেবজানী ব্যানার্জি বলেন, “রাজীদের কাজের প্রতি আগ্রহ থেকেই এই ছবিতে যুক্ত হয়েছি। কলকাতার মেয়ে হিসেবে বাংলা ভাষা ও গল্পের প্রতি আমার আলাদা টান আছে। 'ইলাইজা' দর্শকের অনুভূতির গভীরে পৌঁছাতে সক্ষম।”
দর্শক ক্রিস্টিন ব্রিজার্স বলেন, ছবিটি তাকে গভীরভাবে আবেগাপ্লুত করেছে। তিনি জানান, নিজের মেয়েকে আত্মহত্যায় হারানোর অভিজ্ঞতার কারণে 'ইলাইজা'র গল্প তার জীবনের সঙ্গে মিলে গেছে এবং পরিচালক রাজীদ সিজনের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পেয়ে তিনি কৃতজ্ঞ।