
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউরোপিয়ান নেতাদের ‘দুর্বল’ বলে সমালোচনা করেছেন এবং ইউক্রেনকে দেওয়া দেশটির সমর্থন কমিয়ে দিতে পারেন বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন। মার্কিন রাজনীতিবিষয়ক পত্রিকা পলিটিকোকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে ট্রাম্প বলেছেন, ‘ক্ষয়িষ্ণু’ ইউরোপীয় দেশগুলো অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ করতে অথবা রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের যুদ্ধ অবসানে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে। ইউরোপীয় দেশগুলো কিয়েভকে পতন না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ করতে দিচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন ট্রাম্প।
যুদ্ধের অবসানে যুক্তরাষ্ট্র যে উদ্যোগ নিয়েছে, সেখানে নিজেদের ভূমিকা রাখার চেষ্টা করছেন ইউরোপীয় নেতারা। তারা আশঙ্কা করছেন, দ্রুত সমাধানের লক্ষ্যে গৃহীত এসব পদক্ষেপ এই মহাদেশের দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। শান্তি চুক্তিতে রাজি হওয়ার জন্য জেলেনস্কির ওপর চাপ বৃদ্ধি অব্যাহত রেখেছেন ট্রাম্প এবং মস্কোর কাছে কিছু ভূখণ্ড বা অঞ্চল ছেড়ে দিয়ে সহযোগিতা করতে আহ্বান জানিয়েছেন।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রায় হামলা শুরু করে রাশিয়া। মঙ্গলবার জেলেনস্কি সোশ্যাল মিডিয়া এক্সে লিখেন, ইউক্রেন এবং ইউরোপ যুদ্ধ অবসানের সম্ভাব্য পদক্ষেপের সব উপাদান নিয়ে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। একই সঙ্গে পরিকল্পনার ইউক্রেনের এবং ইউরোপের অংশগুলো এখন আরো পরিপক্ব হয়েছে। এরপরে সাংবাদিকদের তিনি জানান, পরিকল্পনাগুলো বুধবার যুক্তরাষ্ট্রে জমা দেওয়া হবে বলে তার ধারণা। যুদ্ধের অবসানে ইউরোপ সাহায্য করতে পারে কি না এমন প্রশ্নে ট্রাম্প বলেন, তারা কথা বলে কিন্তু কোনো ফলাফল আসে না এবং এই যুদ্ধ কেবল চলছেই এবং চলছেই।
সাক্ষাত্কারে ট্রাম্প দাবি করেন, ইউক্রেনের আলোচক বা সমঝোতাকারীরা যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত প্রস্তাবকে ‘পছন্দ করেছে’। কিন্তু জেলেনস্কি এখনো সেটি পড়েও দেখেননি বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। নির্বাচন আয়োজনের জন্য কিয়েভের প্রতি আহ্বান পুনরাবৃত্তি করে ট্রাম্প দাবি করেছেন, নির্বাচন না করার কারণ হিসেবে যুদ্ধকে ব্যবহার করা হয়েছে। তিনি বলেন, আপনি জানেন, তারা গণতন্ত্রের কথা বলে কিন্তু তা এখন এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যেখানে তা আর গণতন্ত্র থাকে না।
ট্রাম্পের মন্তব্যের পর জেলেনস্কি সাংবাদিকদের বলেন, তিনি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত এবং আইন পরিবর্তনের জন্য প্রস্তাবনা তৈরি করতে বলবেন। তিনি জানিয়েছেন, যদি যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য মিত্রদের সহায়তায় নিরাপত্তা নিয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়, তাহলে আগামী ৬০ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে।
ট্রাম্প দাবি করেন, মতাদর্শগত বিভাজন এখন ইউরোপের সঙ্গে ওয়াশিংটনের জোটকে ভাঙার হুমকির মুখে ফেলেছে। যেসব নেতাদের ট্রাম্প দুর্বল বলে মনে করেন, তারা এখনো মিত্র হতে পারেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা নির্ভর করে। ট্রাম্প বলেন, আমি মনে করি তারা দুর্বল কিন্তু আমি এটাও মনে করি যে, তারা রাজনৈতিকভাবে সঠিক হতে চান।
আমার মনে হয়, তারা জানেন না কী করতে হবে। ট্রাম্প প্রশাসনের ৩৩ পৃষ্ঠার সংবলিত নতুন জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল প্রকাশের পরই প্রেসিডেন্টের এই মন্তব্য এসেছে। এতে ইউরোপের সম্ভাব্য ‘সভ্যতাগত বিলুপ্তি’ সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছে এবং কিছু দেশ এখনো নির্ভরযোগ্য মিত্র হিসেবে থাকতে পারেন কি না সে বিষয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। ট্রাম্পের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়েভেট কুপার বলেছেন, ইউরোপে তিনি দুর্বলতা নয়, বরং শক্তিই দেখতে পান।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের বিষয়টি মূলত দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধদের সন্তানদের জন্য চালু করা হয়েছিল, বিদেশি ধনী পরিবারগুলোর জন্য নয়। ধনীরা এখন এটাকে নিজেদের পুরো পরিবারকে মার্কিন নাগরিক বানাতে জন্মসূত্র নাগরিকত্বকে ব্যবহার করছে।
সাক্ষাত্কারে রিপাবলিকান এই প্রেসিডেন্ট তার জারি করা নির্বাহী আদেশের পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেন, এ মামলায় তার প্রশাসন হেরে গেলে তা হবে ‘ধ্বংসাত্মক’। ট্রাম্প জোর দিয়ে বলেন, জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের মাধ্যমে এখানে জন্ম নেওয়া লাখ লাখ মানুষকে আশ্রয় দেওয়ার সামর্থ্য রাখে না যুক্তরাষ্ট্র। গৃহযুদ্ধ শেষ হওয়ার সেই সময়ের জন্যই এই নিয়মটি ছিল।