সরকারের পদত্যাগসহ বিএনপি যে ১০ দফা দাবি দিয়েছে সেগুলোকে গুরুত্ব দিচ্ছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বিএনপির এই দাবির সঙ্গে জনগণের কোনো সম্পর্ক ও স্বার্থ নেই বলে মনে করছে তারা।
গত ১০ ডিসেম্বর ঢাকার গোলাপবাগে অনুষ্ঠিত বিভাগীয় সমাবেশ থেকে ১০ দফা দাবি ঘোষণা করেছে বিএনপি। সেই ১০ দফার মধ্যে রয়েছে- সরকারের পদত্যাগ, দলনিরপেক্ষ অন্তরবর্তীকালিন সরকার গঠন, বর্তমান নির্বাচন কমিশন বাতিল করে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন, খালেদা জিয়াসহ সব বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীর মুক্তি ইত্যাদি।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকদের মতে, ঢাকায় সমাবেশকে কেন্দ্র বিএনপি যে পরিকল্পনা নিয়ে আগ্রসর হচ্ছিল সরকার ও আওয়ামী লীগ তা ব্যর্থ করে দিয়েছে। বিএনপি ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় ১০ লক্ষাধিক মানুষ সমবেত করে সরকারের পতন ঘটানোর পরিকল্পনা নিয়েছিল। ঢাকায় একটা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে চেয়েছিল। দলটির নেতারা প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছিল খালেদা জিয়া সমাবেশে উপস্থিত হবেন এবং ১০ তারিখের পর থেকে খালেদা জিয়ার কথায় দেশ চলবে। বিএনপির সেই পরিকল্পনা সফল হয়নি।
সরকার ও আওয়ামী লীগের ওই নীতিনির্ধারকরা জানান, বিএনপির ১০ ডিসেম্বরের ষড়যন্ত্র সরকার ও আওয়ামী লীগ ভালোভাবেই মোকাবিলা করতে পেরেছে। ঢাকায় ১০ লাখের বেশি জনসমাগম ঘটানোর কথা দলটির নেতারা বারবার বলেছিল, কিন্তু তারা সেটাও করে দেখাতে পারেনি। জনগণ সাড়া দেয়নি, তাদের সমাবেশে সারাদেশ থেকে কর্মীরা এসেছে, কিন্তু কোনো সাধারণ মানুষ যায়নি। কর্মীদেরকেও তারা মিথ্যা প্রলোভন দিয়ে এনেছে। বিএনপির নেতারা বলেছিল ১০ ডিসেম্বরের পর খালেদা জিয়ার কথায় দেশ চলবে। এভাবে তারা কর্মীদেরকেও ধোকা দিয়েছে। এতে বিএনপির কর্মীরা হতাশ হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে বিএনপি এসব দাবিকে সামনে নিয়ে আন্দোলনেও প্রভাব ফেলতে পারবে না বলে সরকার ও আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধাকরা মনে করছেন। তাদের মতে, আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত। খালেদা জিয়া দুর্নীতির দায়ে সাজা প্রাপ্ত হয়েছেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার আদালতের রায়ে বাতিল হয়েছে, বিশ্বের সব গণতান্ত্রিক দেশেই দলীয় সরকার থাকা অবস্থায়ই নির্বাচন হয়। ফলে এসব দাবি বিএনপি আন্দোলন গড়ে তুলতে পারবে না। এসব দাবিকে গুরুত্ব দেওয়া বা আন্দোলনের ভয়ে ভীত হওয়ার কিছু নেই।
এদিকে রোববার (১১ ডিসেম্বর) বিএনপির ৭ সংসদ সদস্য পদত্যাগ করেছেন। বিএনপির এই সংসদ সদস্যদের পদত্যাগেও একাদশ জাতীয় সংসদে কোনো প্রভাব পড়বে না বলে আওয়ামী লীগ নেতারা জানান।
তারা বলছেন, এখনো সংসদের এক বছর মেয়াদ আছে, এই আসনগুলো শূন্য হলে যথা সময়ে উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই পদত্যাগে সংসদ ও সরকারের ওপর কোনো প্রভাব পড়বে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ বলেন, বিএনপির সমাবেশের আগে দলটির নেতারা বলে আসছিল তারা ১০ লাখ লোকের বেশি লোক আনবে। ঢাকা ঘেরাও করবে, সরকারকে ফেলে দেবে, সর্ববৃহৎ সমাবেশে করবে, কোনো কিছুই তো হয়নি। এগুলো সবই ধোকাবাজি, মানুষকে শোনানো। বাস্তবতার সঙ্গে তাদের বক্তব্যের কোনো মিল নেই। তারা কী দাবি দিয়েছে এগুলোর কোনো গুরুত্ব আছে বলে মনে করি না। ছেঁড়া কাথায় শুয়ে লাখ টাকার স্বপ্ন দেখার মতো।
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, বিএনপির সমাবেশের পর দলের কর্মীরা হতাশ হয়েছে। মিথ্যা প্রলোভন দিয়ে নেতারা তাদের ঢাকায় এনেছিল। বলেছিল ১০ তারিখের পর খালেদা জিয়ার কথায় দেখ চলবে, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। কর্মীরা এসে দেখলো সবই ভাওতাবাজি। বিএনপি নেতারা শুধু দেশের মানুষের সঙ্গে নয়, কর্মীদের সঙ্গেও প্রতারণা করেছে। তারা যে ১০ দফা দিয়েছে এর সঙ্গে দেশের জনগণের কোনো সম্পর্ক নেই। তাদের উদ্দেশ্য দুর্নীতিবাজ নেতা তারেক রহমানকে রক্ষা করা, যারা দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত তাদের রক্ষা করা। তারেক রহমান কোনো রাজনৈতিক নেতা নয়, দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসী, আন্তর্জাতিক মাফিয়াদের সঙ্গে বিভিন্ন সময় ছবিতে তাকে দেখা গেছে। বিএনপি ক্ষমতায় থেকে দুর্নীতি, লুটপাট করেছিল, যারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়েছে তাদের রক্ষার জন্য এই ১০ দফা। আর সাড়ে ৩শ এমপির মধ্যে ৭ জন থাকা, না থাকা কোনো বিষয় না। এদের পদত্যাগে সংসদের বা আওয়ামী লীগ সরকারের কিছু যায়, আসে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সরকারের পদত্যাগ দাবি করে বিএনপি নিজেরাই পদত্যাগ করেছে। তাদের এমপিরা সুযোগ সুবিধা নিয়ে এখন সংসদ থেকে পদত্যাগ করেছে। আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত। পদত্যাগের দাবি করলেই পদত্যাগ হয়ে যায় না। তারা দুর্নীতিবাজ, জঙ্গিবাদীদের নিয়ে সরকার গঠন করতে চায়, ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতায় যেতে চায়। তাদের প্রতি জনগণের কোনো সমর্থন নেই। তাই জনগণ তাদের সমাবেশে সাড়া দেয়নি। দলের কর্মীরা এসেছে সারা দেশ থেকে কিন্তু একজন সাধারণ মানুষও আসেনি। যে দাবি দিয়েছে তাদের এই দাবির ন্যূনতম কোনো মূল্য নেই।