তরুণ ভোটার কাছে টানতে চায় বিএনপির তিন সংগঠন

ডেস্ক রিপোর্ট
  ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৩৪

দেশের মোট ভোটারের প্রায় এক-তৃতীয়াংশই তরুণ। ফলে আগামী নির্বাচনে ‘ফ্যাক্টর’ হবে এই তরুণ ভোট। বিষয়টি মাথায় রেখে তরুণ ভোটারদের কাছে টানতে চায় বিএনপির তিন সংগঠন।
এ লক্ষে আগামী মে মাসজুড়ে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপির তিন সংগঠন জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল। কর্মসূচির অংশ হিসেবে তারা যৌথভাবে সেমিনার ও সমাবেশ করবে। এই কর্মসূচি রাজনীতিপাড়ায় নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, সংগঠন তিনটি মে মাসে চারটি বৃহত্তর বিভাগে দুই দিন করে মোট আট দিন সেমিনার ও সমাবেশ করবে। প্রতিটি বিভাগে ভিন্ন ভিন্ন শিরোনামে সেমিনার হবে। আর সমাবেশ হবে অভিন্ন শিরোনামে। এর শিরোনাম: ‘তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশ’।
চট্টগ্রাম বিভাগ দিয়ে কর্মসূচি শুরু হবে। ৯ মে চট্টগ্রামে হবে ‘কর্মসংস্থান ও বহুমাত্রিক শিল্পায়ন নিয়ে তারুণ্যের ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনার। পরদিন ১০ মে হবে সমাবেশ। দ্বিতীয় কর্মসূচি হবে খুলনায়। ১৬ মে খুলনায় হবে ‘শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও মৌলিক অধিকার নিয়ে তারুণ্যের ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনার। পরদিন ১৭ মে সমাবেশ। রাজশাহী-রংপুর বিভাগের কর্মসূচি হবে বগুড়ায়। ২৩ মে বগুড়ায় ‘কৃষি উন্নয়ন, পরিবেশ রক্ষা ও নাগরিক সমস্যা নিয়ে তারুণ্যের ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনার হবে। পরদিন ২৪ মে হবে সমাবেশ। সবশেষ কর্মসূচি হবে ঢাকায়। এই কর্মসূচিতে ঢাকা, ফরিদপুর, সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগ অংশ নেবে। ২৭ মে ঢাকায় ‘তারুণ্যের রাজনৈতিক ভাবনা ও অর্থনৈতিক মুক্তি’ শীর্ষক সেমিনার হবে। পরদিন ২৮ মে হবে সমাবেশ।
 সোমবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তিন সংগঠনের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় দেশের ১০টি সাংগঠনিক বিভাগকে চারটি বৃহত্তর ভাগে বিভক্ত করে এই কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। কর্মসূচির লক্ষ্য হলো তরুণদের জাতীয় রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত করা। একটি গণতান্ত্রিক, জবাবদিহিমূলক ও ন্যায্য রাষ্ট্র নির্মাণের ভিত্তি রচনা করা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য দেন যুবদলের সভাপতি আব্দুল মোনায়েম মুন্না। তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য কেবল একটি রাজনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণ নয়, বরং একটি উন্নয়ন ও উৎপাদনমুখী তথা জনবান্ধব সরকারব্যবস্থার প্রয়াস। যেখানে তরুণেরা কেবল ভোটার নয়, বরং আগামীর নীতিনির্ধারক, চিন্তাশীল অংশীদার ও ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র কাঠামোর নির্মাতা।’
অনুষ্ঠেয় সেমিনারের সংলাপের ভিত্তি বিএনপি ঘোষিত ৩১ দফা রূপরেখার পাশাপাশি দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দিকনির্দেশনা ও রাজনৈতিক দর্শন হবে বলে উল্লেখ করেন যুবদল সভাপতি।
গত সোমবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তিন সংগঠনের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, কর্মসূচির লক্ষ্য হলো তরুণদের জাতীয় রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত করা। একটি গণতান্ত্রিক, জবাবদিহিমূলক ও ন্যায্য রাষ্ট্র নির্মাণের ভিত্তি রচনা করা।
ঘোষিত কর্মসূচির বিষয়ে জানতে চাইলে যুবদল সভাপতি আব্দুল মোনায়েম মুন্না  বলেন, ‘দেশে তরুণ ভোটার চার কোটি। তাঁরা তো নির্বাচনে ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করবেন। তাঁদের বিষয়ে আমাদের কিছু চিন্তাভাবনা আছে। আগামী নির্বাচনকে টার্গেট বলুন...যেকোনো কাজে তরুণদের প্রাধান্য দিতে হবে। কেউ কেউ এক বা দুজনকে ফোকাস করাতে চাইছে। আমাদেরও মেধাবী আছে, সেটি এখানে ফোকাস করতে চাছি। সব মিলিয়ে এই কর্মসূচির মাধ্যমে একটি রাজনৈতিক বার্তা দিতে চাই।’
যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের নেতারা বলছেন, গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। এই গণ-অভ্যুত্থানের নেতৃত্বে ছিলেন তরুণেরা। তাঁরা ছিলেন গণ-অভ্যুত্থানের মূল চালিকা শক্তি। শেখ হাসিনার সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে তিনটি প্রহসনের নির্বাচনে তরুণেরা ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেননি। সব মিলিয়ে আগামী নির্বাচনে তরুণ ভোটার হবেন গুরুত্বপূর্ণ ‘ফ্যাক্টর’। রাজনৈতিক দলগুলোর ভোটের হিসাব-নিকাশ তাঁরা পাল্টে দিতে পারেন। এসব কারণে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তরুণ ভোটারদের আকৃষ্ট করতে চাইছে। এই দিকটি বিবেচনায় নিয়ে তাঁরাও তরুণদের আকৃষ্ট করতে মাসব্যাপী কর্মসূচি নিয়েছেন।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী বলেন, অনেক মেধাবী তরুণ আছেন। তাঁরা দেশ নিয়ে এই তরুণদের ভাবনা জানতে চান। বিএনপি ঘোষিত ৩১ দফার সঙ্গে নতুন ভাবনা সংযুক্ত করতে চান তাঁরা। শুধু মিছিল-মিটিং নয়, অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজও তাঁরা করেন। সেসবের জানান দিতেই এই কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনা অনুযায়ী এই কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির। এই কর্মসূচির মাধ্যমে তরুণদের মধ্যে ছাত্রদল বিষয়ে ‘আলাপ’ তৈরির চেষ্টা থাকবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
নাছির উদ্দীন নাছির বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান (তারেক রহমান) চান, আমাদের তরুণেরা সব সেক্টরে প্রতিনিধিত্ব করুক। সে জন্য তাঁর নির্দেশনায় এই কর্মসূচির মাধ্যমে আমাদের দলের সঙ্গে তরুণদের সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করছি। আমরা সেমিনারে দলের ৩১ দফা নিয়ে তরুণদের ভাবনা জানতে চাইব। সেখানে সামগ্রিক বিষয়েও আলোচনা হবে। তরুণদের পক্ষ থেকে নতুন কোনো প্রস্তাব এলে তা বিবেচনা করা হবে। দলের পলিসি বা সংস্কারসহ যেকোনো বিষয়ে তরুণদের দ্বিমত পোষণেরও সুযোগ থাকবে।’
বিএনপি চায় আগামী দিনে একটা অংশগ্রহণমূলক সংসদ হোক
সেমিনারে অক্সফোর্ড, কেমব্রিজ, হার্ভার্ডসহ বিশ্বের খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় পড়াশোনা করা দেশের শিক্ষার্থী, অধ্যাপনা করা শিক্ষক, বিদেশি গণমাধ্যমে কাজ করা সাংবাদিক, মাইক্রোসফটসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে-খাতে কর্মরত তরুণ, চাকরিজীবী, উদ্যোক্তাদের আমন্ত্রণ জানানো হবে বলে জানান নাছির উদ্দীন নাছির। আমন্ত্রিত তরুণদের মধ্যে বিএনপির সমমনাদের পাশাপাশি অরাজনৈতিক ব্যক্তিরাও থাকবেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমাদের দল তরুণদের কর্মসংস্থানের বিষয়টিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। সেখানে (সেমিনার) তরুণদের কর্মসংস্থান নিশ্চিতে আমাদের দলের পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হবে। এ বিষয়ে তরুণেরা প্রশ্ন করতে পারবেন। এ ছাড়া এই পরিকল্পনা কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে, সে ধারণাও দেওয়া হবে।
মূলত তরুণদের সঙ্গে সম্পর্ক সৃষ্টির জন্য এই কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান নাছির উদ্দীন নাছির। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সাড়ে ১৫ বছর ক্ষমতায় ছিল। ফলে তিনটি জেনারেশনের (প্রজন্ম) সঙ্গে আমাদের দলীয় আলাপের সুযোগ ছিল না। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি। সে জন্য আমরা এই কর্মসূচি গ্রহণ করেছি।