হোয়াইট হাউসে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রত্যাবর্তনের পর আজ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শততম দিন। এই ১০০ দিনে বিশ্বকে ব্যাপকভাবে নাড়া দিয়েছেন ট্রাম্প। একদিকে দেশে দেশে মার্কিন বৈদেশিক সহায়তা বন্ধ করেছেন। অন্যদিকে কয়েক দফায় চড়া শুল্কারোপ আর স্থগিত করে সব দেশকে ব্যতিব্যস্ত করে রেখেছেন। শতকরা ১৪৫ ভাগ শুল্কারোপ করে চীনের বিরুদ্ধে বাণিজ্যযুদ্ধে জড়িয়েছেন। আবার শুল্কারোপ হ্রাস করার কথাও বলেছেন। ব্যাপক চাপ দিয়ে ইরানকে এনেছেন আলোচনার টেবিলে।
গ্রিনল্যান্ড দ্বীপ ও পানামা খাল কিনতে চেয়েও বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি ক্ষমতায় বসার আগে থেকেই কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য করার খায়েশ ব্যক্ত করেছেন। এভাবে বিশ্বে এক টালমাটাল অবস্থার সৃষ্টি করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। পরে কিছু বিষয়ে ট্রাম্প অবশ্য কঠোর অবস্থান থেকে কিছুটা সরে এসেছেন, যেমন শুল্ক আরোপের সময়সূচি ও মাত্রা।
রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ ঘিরে সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের অবস্থানের বিপরীতেও অবস্থান নিয়েছেন ট্রাম্প। প্রকাশ্যেই রুশ বয়ানের প্রতি নমনীয়তা দেখিয়েছেন। ইসরায়েলের হত্যাযজ্ঞের মধ্যে গাজা ভূখণ্ড থেকে ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে সেখানে বিলাসবহুল পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলার কথাও বলেছেন। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ট্রাম্পের নাটকীয়ভাবে অবস্থান বদলানোর সম্ভাবনা কম।
ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের ভিত্তিপ্রস্তর হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ার নীতি তথা ‘আমেরিকা ফার্স্ট পলিসি’। এই নীতি বাস্তবায়নে তাঁর প্রয়াসে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের মিত্ররা দূরে সরে যাচ্ছে আর প্রতিদ্বন্দ্বীরা এখন আগের চেয়ে বেশি সরব হচ্ছে। ট্রাম্পের অধিকাংশ পদক্ষেপ এত বেশি অনিশ্চয়তা তৈরি করছে যে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আশঙ্কা, সবকিছু আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা প্রায় দুঃসাধ্য হবে।\
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের ভিত্তিপ্রস্তর হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ার নীতি তথা ‘আমেরিকা ফার্স্ট পলিসি’। এই নীতি বাস্তবায়নে তাঁর প্রয়াসে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের মিত্ররা দূরে সরে যাচ্ছে আর প্রতিদ্বন্দ্বীরা এখন আগের চেয়ে বেশি সরব হচ্ছে। ট্রাম্পের অধিকাংশ পদক্ষেপ এত বেশি অনিশ্চয়তা তৈরি করছে যে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আশঙ্কা, সবকিছু আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা প্রায় দুঃসাধ্য হবে।
ক্ষমতায় বসার পর নিজ দেশে হাজার হাজার সরকারি কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করেছেন ট্রাম্প। সিএনএনের তথ্য থেকে জানা যায়, এ পর্যন্ত প্রায় ১ লাখ ২১ হাজার কর্মচারীকে বরখাস্ত করেছে তাঁর প্রশাসন। আবার হাজার অভিবাসীকে দেশ থেকে তাড়িয়েছেন। এর মধে৵ আদালত অবশ্য ট্রাম্পের কর্মী ছাঁটাইয়ের কিছু পদক্ষেপ ঠেকিয়ে দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের বিশিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২০ কোটি ডলার আর্থিক অনুদান স্থগিত করেছেন ট্রাম্প। ট্রাম্পের এ প্রস্তাবের বিরুদ্ধে মামলা করেছে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়।
এদিকে ট্রাম্প ইউরোপীয় ইউনিয়নের জন্যও উদ্বেগ সৃষ্টি করেছেন। ইউরোপীয় মিত্ররা এখন মার্কিন অস্ত্রের ওপর নির্ভরতা কমাতে নিজেদের প্রতিরক্ষা শিল্পে বিনিয়োগ বাড়ানোর কথা ভাবছে। জার্মানির চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মেৎর্স ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনে জয়ের পরই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইউরোপের সম্পর্ক নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, ট্রাম্প যদি ‘আমেরিকা ফার্স্ট৴’ নীতিকে ‘আমেরিকা একা’ নীতিতে পরিণত করেন, তাহলে ইউরোপের জন্য দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা কঠিন হবে। এমন পরিস্থিতিতে কানাডা ইউরোপের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা সম্পর্ক জোরদারের চেষ্টা করছে।
বিবিসি জানায়, নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের ভোটে জয়ী হয়ে এ বছরের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রে ঐতিহাসিক প্রত্যাবর্তন ঘটেছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের। ২০২৪ সালের নভেম্বরে তাঁকে যাঁরা ভোট দিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে আছেন ট্রাকচালক, অবসরে যাওয়া ব্যক্তি ও ব্যবসায়ীসহ অনেকে। দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম ১০০ দিনে ট্রাম্প যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাতে তাঁর কট্টর সমর্থকদের কতটা সমর্থন আছে, সেটিও একটি প্রশ্ন। এ ছাড়া ট্রাম্প তাঁর প্রতিশ্রুতি কতটা পূরণ করতে পেরেছেন, সমর্থকেরা কি এখনো ট্রাম্পের একনিষ্ঠ সমর্থক হয়েই আছেন, নাকি তাঁদের মনে হচ্ছে, তাঁরা ভুল করেছেন—এসব প্রশ্নের জবাব খুঁজতে বিবিসি ট্রাম্পের পাঁচজন সমর্থকের সঙ্গে কথা বলেছে। জবাবে তাঁদের কেউ ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের পক্ষে, কেউ বিপক্ষে মত দিয়েছেন।
সব মিলিয়ে পুরো বিশ্বব্যবস্থাকে ওলটপালট করে দিচ্ছেন ট্রাম্প। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসস্তূপ থেকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন যে বিশ্বব্যবস্থা গড়ে উঠেছে, তার ভিত্তি ১০০ দিনের কম সময়ে নড়বড়ে করে তুলেছেন ৪৭তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এর প্রভাব তো ভালোমতোই দেখা যাচ্ছে বিশ্ববাজারে। এরই মধ্যে পড়ে গেছে ডলারের দাম। আর বিশ্বজুড়ে বেড়েছে অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কা।