ছেলেকে জঙ্গিবাদে সহযোগিতা করেছেন জামায়াত আমীর : পুলিশ

জামায়াত আমীর শফিকুর রহমান ৭ দিনের রিমান্ডে

নিজস্ব প্রতিবেদক
  ১৩ ডিসেম্বর ২০২২, ১৯:৫৬
জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান তার ছেলে ডা. রাফাত সাদিক সাইফুল্লাহ

জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের আমির ডা. শফিকুর রহমান তার ছেলে ডা. রাফাত সাদিক সাইফুল্লাহ নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ায় জড়িত হওয়ার বিষয়টি জানতে বলে দাবি করেছে পুলিশ। এ ছাড়া তিনি ছেলেকে  জঙ্গি কার্যক্রমে সহযোগিতা করেছেন বলে দাবি তাদের। এজন্য ছেলের বিরুদ্ধে করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় ডা. শফিকুরকে তারা গ্রেপ্তার করেছে বলে জানিয়েছে।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মো. আসাদুজ্জামান। ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সিটিটিসি প্রধান মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘ছেলে নতুন জঙ্গি সংগঠনে জড়িয়েছেন এটা জেনেও সমর্থন দিয়ে গেছেন জামায়াত আমির। একপর্যায়ে তার ছেলে ওই জঙ্গি সংগঠনের সিলেট অঞ্চলের প্রধান সমন্বয়ক হন। ওই সংগঠনে জড়ানো অনেকেই আগে শিবিরের সাথী ও কর্মী ছিলেন। তাদের হিজরতের খরচও দিয়েছেন জামায়াত আমির। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আজ ভোরে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে ডা. শফিকুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে সিটিটিসির একটি দল।’
আসাদুজ্জামান বলেন, ‘গত ৯ নভেম্বর জামায়াত আমিরের ছেলে ডা. রাফাত সাদিক সাইফুল্লাহকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারও আগে সিলেট থেকে হিজরত করা তিন জঙ্গি সদস্যকে যাত্রাবাড়ী থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা প্রত্যেকেই শিবিরের সাথী ছিলেন। সহযোগী আরিফও শিবিরের সাথী ছিলেন।


তিনি বলেন, ‘এর আগে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সিলেট অঞ্চলের প্রধান সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করেছেন জামায়াত আমিরের ছেলে ডা. রাফাত। পরে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার দাওয়াত পেয়ে দলবলসহ তাতে যুক্ত হন তিনি।’
সিটিটিসি প্রধান বলেন, ‘ডা. রাফাত পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন- তার বাবার সম্মতিক্রমেই ২০২১ সালের জুন মাসে বান্দরবান থেকে ফিরে আসেন তিনি। ১১ ছেলেসহ রাফাত যে হিজরত করেছেন এর সবই জানতেন জামায়াত আমির। ক্ষেত্র-বিশেষে তিনি সহযোগিতাও করেছেন। হিজরতের যাবতীয় ব্যয়ভারও তিনি বহন করেছিলেন।’
তিনি বলেন, ডাক্তার শাকের নামে আরেকজনকে আমরা কয়েকদিন আগে গ্রেপ্তার করেছি। তিনি নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার দাওয়াতি শাখার প্রধান ছিলেন। এই সংগঠন থেকে আনুষ্ঠানিক, অনানুষ্ঠানিকভাবে অনেক সহযোগিতাই তারা পেতেন। যারা ডা. রাফাতের সঙ্গে হিজরত করেছেন তারাও জামায়াতের ছাত্র সংগঠন শিবিরের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।’
আসাদুজ্জামান বলেন, ‘নতুন জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জামায়াতের সরাসরি সংশ্লিষ্টতা ও সমর্থন ছিল কি না তা জানতে এবং এই মামলায় জামায়াত আমিরের সরাসরি সম্পৃক্ততার কারণেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিটিটিসি প্রধান বলেন, ‘গ্রেপ্তার এড়াতে ছেলেকে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতা করেছেন জামায়াত আমির। আরও কয়েকজনকে তিনি সহযোগিতা করেছেন। আমরা এসব বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য তাকে জ্ঞিাসাবাদ করব।’
ডা. শফিকুর ছাড়া জামায়াতের অন্য কোনো নেতার জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা পেয়েছেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান বলেন, ‘জামায়াত আমিরের ছেলেই প্রথম হিজরতকারী। তার নেতৃত্বেই একটি বড় অংশ হিজরত করেছে। জামায়াতের আঞ্চলিক পর্যায়ের কিছু নেতার সমর্থন-সহযোগিতা ছিল বলে জেনেছি, কিছু তথ্য পেয়েছি। এ বিষয়ে আরও জানার চেষ্টা করবে পুলিশ।’

জামায়াত আমির শফিকুর রহমান ৭ দিনের রিমান্ডে
জঙ্গিবাদে সম্পৃক্ততার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের আমির ডা. মো. শফিকুর রহমানকে সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানায় সন্ত্রাস বিরোধী আইনে দায়ের করা মামলায় তাকে এ রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়। 
আজ মঙ্গলবার ডা. শফিকুরকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা, পুলিশ পরিদর্শক মো. আবুল বাসার। আসামি পক্ষে রিমান্ড বাতিল ও জামিন চেয়ে আবেদন করেন অ্যাডভোকেট কামাল উদ্দিন আহমেদ, আব্দুর রাজ্জাকসহ কয়েকজন আইনজীবী।
জামিন আবেদন করে তারা বলেন, নির্বাচনের আগে বিরোধীদলগুলো আন্দোলনে প্রস্তুতি নিচ্ছে। যুগপৎ আন্দোলনে জামায়াতে ইসলামও প্রস্তুত। ঠিক তখনই তাকে (ডা. শফিকুর) গ্রেপ্তার করা হলো। রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতি কারণে তাকে গ্রেপ্তার করে এ রিমান্ড আবেদন। বয়স্ক, অসুস্থ বিবেচনায় তার জামিন হওয়া প্রয়োজন।
এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের হয়ে শুনানিতে অংশ নেওয়া ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু জামিনের বিরোধিতা করে রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থনা করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রাজেশ চৌধুরীর আদালত ডা. শফিকুরের সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।