আগামী বছর হজে যেতে সরকারিভাবে দুটি প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। ঘোষিত সাশ্রয়ী সাধারণ প্যাকেজ-১ অনুযায়ী খরচ ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৭৮ হাজার ২৪২ টাকা।
সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রায় প্রত্যেক হজযাত্রীর চলতি বছরের প্যাকেজ-১ এর চেয়ে এক লাখ ৯ হাজার ১৪৫ টাকা কম খরচ হবে। অন্য প্যাকেজে (প্যাকেজ-২) খরচ ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৭৫ হাজার ৬৮০ টাকা।
এ বছর সরকারিভাবে হজে যেতে সাধারণ প্যাকেজে ৫ লাখ ৮৭ হাজার ৩৮৭ টাকা খরচ হয়েছিল। বিশেষ হজ প্যাকেজের মূল্য ছিল ৯ লাখ ৩৬ হাজার ৩২০ টাকা। এবার বিশেষ প্যাকেজ থাকছে না।
বুধবার (৩০ অক্টোবর) সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ‘হজ প্যাকেজ-২০২৫’ ঘোষণা করেন ধর্ম বিষয়ক উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী বছরের ৫ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হতে পারে। চলতি বছরের মতো আগামী বছরও (২০২৫ সাল) বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ করতে পারবেন। এর মধ্যে ১০ হাজার সরকারি ব্যবস্থাপনায় এবং বাকি হজযাত্রীরা যাবেন বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ এজেন্সিগুলোর মাধ্যমে।
এর আগে হজ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত নির্বাহী কমিটির সভায় হজ প্যাকেজ নির্ধারণ করা হয়েছে বলেও জানান উপদেষ্টা।
উপদেষ্টা বলেন, বেসরকারি মাধ্যমের সাধারণ হজ প্যাকেজ মূল্য ৪ লাখ ৮৩ হাজার ১৫৬ টাকা। সাধারণ হজ প্যাকেজ গ্রহণ করে এজেন্সি একটি অতিরিক্ত বিশেষ প্যাকেজ ঘোষণা করতে পারবে।
সরকারি দুটি প্যাকেজেই প্রত্যেক হজযাত্রীকে খাবার বাবদ কমপক্ষে ৪০ হাজার টাকার সমপরিমাণ সৌদি রিয়াল এবং কোরবানি বাবদ ৭৫০ সৌদি রিয়াল আবশ্যিকভাবে সঙ্গে নিতে হবে বলে জানিয়েছেন উপদেষ্টা।
একই সঙ্গে দুটি প্যাকেজে অ্যাটাচ বাথসহ মক্কা ও মদিনায় বাড়ি বা হোটেলের প্রতি রুমে সর্বোচ্চ ৬ জনের আবাসন ব্যবস্থা থাকবে। বাড়ি/হোটেল কক্ষে/ফ্লোরে রেফ্রিজারেটরের ব্যবস্থা থাকবে।
‘'দুই প্যাকেজে মক্কা, মদিনা ও জেদ্দায় বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে ওষুধ ও প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা দেওয়া হবে। ৪৬ জন হজযাত্রীর জন্য একজন হজ গাইডের ব্যবস্থা করা হবে’ বলেন খালিদ হোসেন।
তিনি জানান, মক্কার হোটেল/বাড়ি থেকে বাসযোগে মিনার তাঁবুতে এবং মিনা-আরাফাহ-মুজদালিফা-মিনা ট্রেনযোগে যাতায়াত করতে হবে দুই প্যাকেজের হজ যাত্রীদের।
উপদেষ্টা বলেন, অতিরিক্ত অর্থ দিয়ে মক্কা ও মদিনায় বাড়ি/হোটেলে ২, ৩ ও ৪ সিটের রুম এবং শর্ট প্যাকেজের সুবিধা গ্রহণ করা যাবে।
প্যাকেজ-১ এ আরও যেসব সুযোগ-সুবিধা থাকছে
ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, মক্কায় হারাম শরিফের বহিঃচত্বর থেকে তিন কিলোমিটারের মধ্যে আবাসন। হারাম শরিফ যাতায়াতে বাসের ব্যবস্থা করা। মদিনায় মসজিদে নববি থেকে সর্বোচ্চ দেড় কিলোমিটারের মধ্যে আবাসন হবে।
‘মিনায় গ্রিন জোনে (জোন-৫) তাঁবুর অবস্থান এবং মিনা-আরাফায় ‘ডি’ ক্যাটাগরির সার্ভিস সুবিধা দিতে হবে। মক্কার হোটেল/বাড়ি থেকে বাসযোগে মিনার তাঁবুতে এবং মিনা-আরাফাহ-মুযদালিফা-মিনা ট্রেনযোগে যাতায়াত করবেন।’
মিনা এবং আরাফায় মোয়াল্লেম খাবার পরিবেশন করবে বলে জানিয়েছেন খালিদ হোসেন।
প্যাকেজ-২ এ আরও যেসব সুযোগ-সুবিধা থাকছে
প্যাকেজ-২ এর অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা তুলে ধরে উপদেষ্টা বলেন, মক্কায় হারাম শরিফের বহিঃচত্বর থেকে দেড় কিলোমিটারের মধ্যে আবাসন হবে। মদিনায় মার্কাজিয়া (সেন্ট্রাল এরিয়া) এলাকায় আবাসনের ব্যবস্থা করা হবে।
মিনায় ইয়োলো জোনে (জোন-২) তাঁবুর অবস্থান এবং মিনা-আরাফায় আপগ্রেডেড ‘ডি’ ক্যাটাগরির সার্ভিস সুবিধা পাবেন এ প্যাকেজের হজযাত্রীরা।
বেসরকারি প্যাকেজের সুবিধা
ধর্ম বিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, মক্কায় হারাম শরিফের বহিঃচত্বর থেকে তিন কিলোমিটারের মধ্যে আবাসন। হারাম শরিফ যাতায়াতে বাস ব্যবস্থা করতে হবে।
মদিনায় মসজিদে নববি থেকে সর্বোচ্চ দেড় কিলোমিটারের মধ্যে আবাসন। অ্যাটাচ বাথসহ প্রতি রুমে সর্বোচ্চ ৬ জনের আবাসন ব্যবস্থা ও মিনায় হজযাত্রীদের তাঁবু গ্রিন জোনে (জোন-৫) এবং ‘ডি’ ক্যাটাগরির সার্ভিস নিশ্চিত করতে হবে।
মিনা এবং আরাফায় মোয়াল্লেম খাবার পরিবেশন করবেন। মক্কা-মিনা-আরাফা-মুজদালিফা যাতায়াতের জন্য ট্রেন/বাস (প্রতি ১০০ জনে একটি বাস অথবা ৫০ জনের ডাবল ট্রিপ) ব্যবস্থা করতে হবে।
মক্কা, মদিনা ও জেদ্দায় বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে ওষুধ ও প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা দেওয়া হবে। ৪৬ জন হজযাত্রীর জন্য একজন হজ গাইডের ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানান খালিদ হোসেন।
তিনি আরও জানান, আগামী বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে হজ ভিসা ইস্যু শুরু হবে। ২৯ এপ্রিল থেকে হজ ফ্লাইট শুরু হবে।
সৌদি রিয়ালের মূল্য গত হজের চেয়ে ২.৭৬ টাকা (৩২.৫০-২৯.৭৪) অর্থাৎ ৯.২৮ শতাংশ বেড়েছে বলেও জানিয়েছেন উপদেষ্টা।
আগামী ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত হজের প্রাথমিক নিবন্ধন চলবে জানিয়ে খালিদ হোসেন বলেন, এবার নিবন্ধনের সময় আর বাড়ানো হবে না।
আগামী বছর হজে যেতে গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে হজের প্রাথমিক নিবন্ধন শুরু হয়েছে। তিন লাখ টাকা জমা দিয়ে প্রাথমিক নিবন্ধন করতে হচ্ছে। হজ প্যাকেজ মূল্যের বাকি টাকা প্যাকেজে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। নিবন্ধন চলবে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত।
প্রাথমিক নিবন্ধন শুরু হলেও প্যাকেজ ঘোষণা না হওয়ায় সাড়া নেই হজযাত্রীদের। তাই এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জনের বিপরীতে প্রায় দুই মাসে নয় হাজার ৩১৫ জন হজযাত্রী প্রাথমিক নিবন্ধন করেছেন।