একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র করছে। স্বাধীনতাবিরোধী এই অপশক্তিকে প্রতিহত করতে হবে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কয়েকজন নেতা এ আহবান জানান।
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে গতকাল শনিবার রাজধানীতে বিজয় শোভাযাত্রায় এ আহবান জানানো হয়।
ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ যৌথভাবে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পাশ থেকে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর পর্যন্ত এ শোভাযাত্রার আয়োজন করে।
শোভাযাত্রার আগে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পাশে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান। সমাবেশে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা বক্তব্য দেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘একাত্তর ও পঁচাত্তরের খুনিদের বিরুদ্ধে খেলা হবে। খুনিদের পরাজিত করব। সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে রুখতে হবে। খেলা হবে, প্রস্তুত হয়ে যান। আওয়ামী লীগ আন্দোলনে খেলবে, নির্বাচনেও খেলবে। সেমিফাইনাল সামনে। তারপর ফাইনাল খেলা। আন্দোলনেও তারা হারবে। নির্বাচনেও হারবে ইনশাআল্লাহ।
বিজয় শোভাযাত্রায় ব্যাপক জনসমাগমের কারণে নিজে মোটরসাইকেলে এসেছেন জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমি মোটরসাইকেলে করে এসেছি। চারদিকে শুধু জনগণ, স্লোগান আর স্লোগান, বুড়িগঙ্গা, ধলেশ্বরী, শীতলক্ষ্যার সব ঢেউ যেন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের আজকের এই উত্তাল সমাবেশে আছড়ে পড়ছে। ’
গত ১০ ডিসেম্বর বিএনপির কর্মসূচি প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, জনগণ ১০ তারিখে লাল কার্ড দেখিয়ে দিয়েছে। পেয়েছে অশ্বডিম্ব। ৩০ তারিখেও ঘোড়া ডিম পাড়বে।
বিএনপির কর্মসূচি ২৪ ডিসেম্বরের বদলে ৩০ ডিসেম্বর পালনের ঘোষণা প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘২৪ তারিখে আমাদের জাতীয় সম্মেলন। তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে। গণমিছিল ৩০ তারিখে নিয়ে গেছে। ’ বিএনপির কর্মসূচি নিয়ে দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘কোনো দিকে কান দেবেন না। শান্তিপূর্ণ অবস্থান নিন। ’
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আজ মানুষ অন্নের নিশ্চয়তা পেয়েছে, বস্ত্রের নিশ্চয়তা পেয়েছে। তারা বাসস্থান পেয়েছে। শিক্ষা-চিকিৎসা পাচ্ছে। তাই বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তিকে পরাজিত করে আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। ’
দলের সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘আগামী সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকবে। পৃথিবীর কোনো শক্তি নেই, আওয়ামী লীগকে ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারবে। নির্বাচনে যদি জনগণ ভোট না দেয় আমরা সালাম করে চলে যাব। ’
দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘আজকে বিএনপি-জামায়াত নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। বিএনপি-জামায়াত অরাজকতা সৃষ্টি করে দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়। তাদের এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। ’
সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানানোর দুঃস্বপ্ন দেখে। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে এই দেশ স্বাধীন হয়েছে। তাঁর কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই দেশকে সন্ত্রাস, রাজাকার ও জঙ্গিবাদ মুক্ত করব। ’
সমাবেশে আরো বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া ও কামরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, হাছান মাহ্মুদ ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ প্রমুখ।
বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায় মানুষের ঢল : দুপুর ২টায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনে সমাবেশ শুরু হয়। এর আগে থেকেই শোভাযাত্রায় যোগ দিতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে আসতে থাকেন। সমাবেশ শেষে বিকেল ৪টার আগে বিজয় শোভাযাত্রা শুরু হয়।
ঢাকা মহানগরীর ১৫টি নির্বাচনী এলাকা, ৫১টি থানা এবং শতাধিক ওয়ার্ড থেকে আসা নেতাকর্মীরা নিজ নিজ শাখার ব্যানারসহ শোভাযাত্রা নিয়ে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনের দিকে যান। শোভাযাত্রায় ছিল বর্ণাঢ্য সাজ। ঘোড়ার গাড়ি, হাতি, মিনি ট্রাক, বাদ্যযন্ত্রের দলসহ নেতাকর্মীরা শোভাযাত্রায় যোগ দেন। কোনো দলের মাথায় পতাকা, কোনো দলের মাথায় একই ধরনের ক্যাপ পরা দেখা যায়।
ঢাকার সংসদ সদস্যদের নির্বাচনী এলাকার নেতাকর্মীরা পৃথক ব্যানার নিয়ে মিছিলে আসেন। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়রদ্বয়, ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের নেতৃত্বেও নেতাকর্মীরা শোভাযাত্রায় যোগ দেন। অনেকগুলো ট্রাকে কাগজের কামান, ট্যাংকসহ বিভিন্ন যুদ্ধাস্ত্র নিয়ে সজ্জিত হয়ে শোভাযাত্রায় যোগ দেন ডেমরা থানার অনেক নেতাকর্মী।
যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের নেতৃত্বে বিশাল পতাকা নিয়ে শোভাযাত্রায় যোগ দেয় যুবলীগ। যুব মহিলা লীগের নবনির্বাচিত সভাপতি আলেয়া সরোয়ার ডেইজী ও সাধারণ সম্পাদক শারমিন সুলতানা লিলির সংগঠনের নেতাকর্মীরা শোভাযাত্রায় যোগ দেন।