শক্তিশালী দেশগুলোর ধ্যান-ধারণা নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী

বাংলাদেশ ভালো করছে, তাই এদের আটকাও

কূটনৈতিক প্রতিবেদক
  ২০ ডিসেম্বর ২০২২, ১১:৪১

শক্তিশালী দেশগুলোরে চাপিয়ে দেওয়া কোনো মডেল বাংলাদেশ গ্রহণ করবে না বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। আজ সোমবার সন্ধ্যায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন তিনি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘শক্তিশালী দেশগুলোর নিজেদের ধ্যান-ধারণা আছে। তারা মনে করে, সে ধ্যান-ধারণা অন্য দেশও ফলো করবে। আমরা জাতিসংঘে প্রায়ই বলি- একই মডেল সব জায়গায় গ্রহণযোগ্য নয়। কান্ট্রি টু কান্ট্রি মডেল ভ্যারি করে। ওরা মনে করে তাদের যে মডেল ওটাই ঠিক। ওটাই তারা ইমপোস করতে চায়। আমরা সেই ইমপোজিশানে নাই।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যেহেতু আমরা গোলামির মতো অবস্থায় নাই, সেজন্য তারা আমাদের বেশি প্রেসার দেয়। তারা সঙ্গে কিছু লোকজন নিয়ে আমাদের প্রেসার দেয়। তাদের মডেল একটা আছে, ফাইন। কিন্তু আমরা অন্যের কাছে যাই না। তাদের মডেলের ভালো-মন্দ আছে। সব মডেলের ভালো-মন্দ আছে। সুতরাং তারা অনেক সময় চায় তার মডেলটা ফলো করার। কিন্তু চাপিয়ে দেওয়া কোনো মডেল বাংলাদেশ গ্রহণ করবে না।’  
রাজধানীর শাহীনবাগে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে ঘটে যাওয়া অপ্রীতিকর ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দেশটির সঙ্গে সম্পর্কের কোনো অবনতির আশঙ্কা আছে কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে ড. মোমেন বলেন, ‘এটা ছোটখাটো ঘটনা, তাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের ব্যাপ্তি অনেক বিস্তৃত এবং গভীর।’
কূটনীতিকদের নিরাপত্তাসংক্রান্ত একাধিক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ২০০৪ সালে ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর সিলেটে বোমা হামলার ন্যাক্কারজনক ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, ‘বিএনপি সরকারের আমল ছাড়া বাংলাদেশে কোনো রাষ্ট্রদূতের ওপর সরাসরি হামলার ঘটনা ঘটেনি।’
‘মায়ের কান্না’ নামের সংগঠন কেন মার্কিন দূতাবাসে যোগাযোগ না করে ওখানে স্মারকলিপি দিতে গেল? এমন প্রশ্ন সংগঠনটির কাছে জিজ্ঞাসা করার তাগিদ দিয়ে মন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্রদূতকে রাস্তা-ঘাটে ধরে স্মারকলিপি দেয়ার কোনো কালচার বাংলাদেশে নেই।’ সরকার এমনটি করতে উৎসাহিত করছে কিনা? জানতে চাইলে মন্ত্রীর সাফ জবাব, ‘না আমার যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণে বিশ্বাস করি এবং তা উৎসাহিত করি। এভাবে স্মারকলিপি দেওয়ার চেষ্টাকে আমরা উৎসাহিত করি না।’
মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস শাহীনবাগের যে বাড়িতে গিয়েছিলেন তার দরজা পর্যন্ত ‘মায়ের কান্না’ নামের একটি সংগঠনের লোকজনকে অ্যালাও করা হলো কেন? এমন সম্পূরক প্রশ্নে ড. মোমেন বলেন, ‘আমরা তো জানতামই না উনি ওখানে গেছেন।’
সরকারের বিরুদ্ধে একটা সফট ক্যাম্পেইন চলছে কি না? এমন প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, এটা পারসেপশনের ওপর নির্ভর করে। আসলে এটা পশ্চিমাদের মজ্জাগত। তারা কোথায় যদি কোনো নির্বাচন হতে দেখে এবং সেই দেশ যদি দরিদ্র  হয় বা উন্নয়নশীল দেশ হয় তখন সেখানে তারা নানা অবজারভেশন দেয়।’
তিনি বলেন, ‘প্রথমত অনেকের অবিশ্বাস করে বাংলাদেশ এত ভালো করল কেমনে? ভালো করছে সুতরাং ওদের দাবাইয়া রাখো। দাবাইয়া রাখতে হলে ওখানে কিছু সমস্যা তৈরি করতে হবে, অস্থিরতা সৃষ্টি করতে। দে দেশে অস্থিরতা হয়েছে, সে দেশ ধ্বংস হয়ে গেছে। আপনি লিবিয়ার দিকে থাকান। তারা অনেক ভালো ছিল, তারা ঋণ নিতো না। অস্থিরতায় সব শেষ হয়ে যায়। এরা অনেকে দেখতেছে, বাংলাদেশ ভালো করছে, তাই এদের আটকাও। এটা মজ্জাগত সমস্যা।’
এটা কারা করে? জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘যারা শক্তিশালী বুদ্ধিমান দেশ তারা করে। আর এর সঙ্গে কিছু কিছু দেশীয় লোক এর সঙ্গে যোগ দেয়। যোগ দিয়ে তারা পায়ে কুড়াল মারে। তাদের কিছু লক্ষ্য থাকে।’
তাদের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়ন হচ্ছে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘না হচ্ছে না। তাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক খুব ক্লোজ। আমাদের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক অনেক ভালো। যার কারণে তারা আমাদের অনেক কিছু বলতে পারে।’