ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের অবনতিতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইন্ধন রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমদ সোহেল তাজ। স্বাধীনতা রক্ষার জন্য প্রয়োজনে ভারতের বিরুদ্ধেও যুদ্ধ করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। সোহেল তাজ অভিযোগ করেন, শেখ হাসিনাকে ভারত ১৫ বছর ধরে বাংলাদেশে নিযুক্ত করে রেখেছিল। তাই উৎখাতের পর তিনি সেখানেই চলে গেছেন। আর তাকে উৎখাত মানেই ভারতকে বিতাড়ন করা।
একটি জাতীয় দৈনিককে একান্ত সাক্ষাৎকার দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ও দলের সহসম্পাদক সোহেল তাজ। জনবিচ্ছিন্ন আওয়ামী লীগ অনেকটা মাফিয়া কায়দায় রাষ্ট্র ও দল পরিচালনা করেছে উল্লেখ করে সোহেল তাজ বলেন, জনগণ ব্যাপকভাবে সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় প্রস্তুত হয় বিস্ফোরণের প্রক্রিয়া। এর চূড়ান্ত বিস্ফোরণ ঘটে জুলাই-আগস্টে ছাত্র গণঅভ্যুত্থানে। ইকো চেম্বার পার্টি আওয়ামী লীগ জনগণের এই মনোভাব বুঝতে পারেনি। ফলে দেশত্যাগ ছাড়া তাদের কোনো উপায় ছিল না।
আওয়ামী লীগ এবং সকল রাজনৈতিক দলকে আত্মসমালোচনা করার আহ্বান জানিয়ে সোহেল তাজ বলেন, আত্ম উপলব্ধি করে অনুশোচনা খুবই প্রয়োজন । জনবিচ্ছিন্ন আওয়ামী লীগ অনেকটা মাফিয়া কায়দায় রাষ্ট্র ও দল পরিচালনা করেছে। রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে ব্যবহার করে দলের সশস্ত্র কর্মী দিয়ে ২ হাজারেরও বেশি মানুষকে হত্যা করেছে। ৬০০এর বেশি মানুষ অন্ধ। হাজার হাজার মানুষ পঙ্গু। দেশের ইতিহাসে এমন নির্মম নিষ্ঠুর ও জঘন্যতম গণহত্যা কখনো হয়নি। শেখ হাসিনা স্বৈরশাসকের মাত্রাও পেরিয়ে গেছেন। তিনি নির্বিচারে শিশু হত্যা করেছেন, যুদ্ধেও এত শিশু নিহত হয় না। ক্ষমতা ধরে রাখার এরকম অপচেষ্টা আগে কেউ কখনোই করেনি।
আওয়ামী লীগের ঝটিকা কর্মসূচিকে কোন দৃষ্টিতে দেখছেন?...এমন প্রশ্নের জবাবে সোহেল তাজ বলেন, এটি আওয়ামী লীগকে ধ্বংস ও নিরীহ কর্মীদের বিপদে ফেলার আরেকটি নির্লজ্য প্রচেষ্টা। কেননা এর মধ্য দিয়ে যারা এই দলটাকে ডুবিয়েছে তারাই আবার ক্ষমতায় ফিরে আসতে চাচ্ছে । কিন্তু এটি অসম্ভব।
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার কথা বলা হচ্ছে, এই প্রেক্ষাপটে মন্তব্য জানতে চাইলে সাবেক এই স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, কিছু অর্থবহ সংস্কারের পর দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে নির্বাচন হওয়া উচিত। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ কিংবা বাদ দিয়ে নির্বাচন করাটা ঠিক হবে না।
আওয়ামী লীগের সংকটকালে দলের দায়িত্ব নিতে বললে কী করবেন সোহেল তাজ? এই প্রশ্নের উত্তরে তার সাফ কথা, বর্তমান প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা যখন আত্মোপলব্ধি, আত্মসমালোচনা, অনুশোচনা ও জনগণের কাছে ক্ষমা চাইবে; অপরাধীদের বিচারের আওতায় এনে শাস্তি দেওয়া হবে– তখন তিনি বিষয়টি বিবেচনায় নিতে পারেন, তার আগে নয়।
অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে প্রত্যাশা প্রসঙ্গে সোহেল তাজ বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যেসব ইস্যুর কথা বলেছে, তার সবটাই তিনিও চান। যেখানে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে। বৈষম্য থাকবে না। অন্যায়-অনিয়ম ও দুর্নীতি দূর হবে। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ও মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা হবে। এসব করতে হলে পর্যাপ্ত সংস্কারের প্রয়োজন। নিশ্চয়ই তা করবে অন্তর্বর্তী সরকার।
অন্তর্বর্তী সরকারে আমন্ত্রণ জানানো হলে যাবেন কিনা- এমন প্রশ্নের জাবাবে সোহেল তাজ জানান, এ মুহূর্তে তিনি সরকারে যেতে চান না। স্বাস্থ্যসচেতনতা নিয়ে কাজ করছেন, এটি নিয়েই থাকতে চান। সূত্র : সমকাল