প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়। গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা হিসেবে কেপিআইভুক্ত (কি পারফরম্যান্স ইনডিকেটর) এলাকা। সেই স্থাপনায় মধ্যরাতে আগুন নিয়ে উদ্বিগ্ন সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে গোটা দেশের মানুষ। ভস্মীভূত হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ পাঁচ মন্ত্রণালয়ের নথি। আগুন লাগার ধরন দেখে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি ‘পরিকল্পিত নাশকতা’ হতে পারে। এমনকি ব্যবহার করা হতে পারে রিমোট কন্ট্রোল। তাদের বক্তব্যে রয়েছে ফায়ার সার্ভিসের ভূমিকাসহ নানান ধরনের প্রশ্ন।
পরিকল্পিত আগুন?
আগুনের ঘটনা নিয়ে ফায়ার সার্ভিসের সাবেক কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা প্রশ্ন তুলেছেন। তারা বলছেন, সচিবালয়ের ভেতরে থাকা নিরাপত্তাকর্মীদের ব্যর্থতা ছিল। তৃতীয় কোনো পক্ষ সুযোগ নিয়ে আগুন লাগাতে পারে। এছাড়া এত ভয়াবহ ও দীর্ঘক্ষণ ধরে দাউ দাউ করে জ্বলা আগুন ‘রিমোট কন্ট্রোলের’ মাধ্যমে লাগানো হতে পারে বলে ধারণা করছেন তারা।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও ফায়ার সার্ভিসসহ দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা তদন্ত শেষ হওয়ার আগে আগুনের সূত্রপাত ও কারণ নিয়ে কিছু বলতে নারাজ। কিন্তু রাজনৈতিক দল ও ছাত্র-আন্দোলনের শীর্ষ নেতারা সন্দেহের তীর ছুড়ে বলেছেন- ‘এটি পরিকল্পিত আগুন’।
দুর্ঘটনাজনিত শর্টসার্কিট হতে পারে, আরেকটি পরিকল্পিতভাবে শর্টসার্কিট দিয়ে আগুন সৃষ্টি করা যেতে পারে। এর জন্য ওই ছয়তলায় থাকতে হবে না। আগে থেকে পরিকল্পনা করে দুটি বৈদ্যুতিক তার একসঙ্গে লাগিয়ে বারুদ, গান পাউডার কিংবা কেমিক্যাল রেখে নিচে বৈদ্যুতিক প্লাগ অন করলে বৈদ্যুতিক স্পার্কের কারণে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে পারে।- ফায়ার সার্ভিসের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবু নাঈম মো. শাহিদউল্লাহ
এটিকে সরকারের গোয়েন্দা ব্যর্থতাও বলেছেন কেউ কেউ। তবে পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, গোয়েন্দা তথ্যের ব্যাপারে পর্যাপ্ত বা অপর্যাপ্ত তথ্য থাকলে সরকার ব্যবস্থা নিতো। তথ্যের প্রবাহটা ঠিক আছে কি না সেটাও তদন্ত কমিটির মাধ্যমে খতিয়ে দেখতে হবে। কিন্তু নিশ্চয়ই তথ্য থাকলে আমরা বসে থাকতাম না।
দুর্ঘটনাজনিত শর্টসার্কিট হতে পারে, আরেকটি পরিকল্পিতভাবে শর্টসার্কিট দিয়ে আগুন সৃষ্টি করা যেতে পারে। এর জন্য ওই ছয়তলায় থাকতে হবে না। আগে থেকে পরিকল্পনা করে দুটি বৈদ্যুতিক তার একসঙ্গে লাগিয়ে বারুদ, গান পাউডার কিংবা কেমিক্যাল রেখে নিচে বৈদ্যুতিক প্লাগ অন করলে বৈদ্যুতিক স্পার্কের কারণে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে পারে।- ফায়ার সার্ভিসের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবু নাঈম মো. শাহিদউল্লাহ
দুর্ঘটনার আগুন এভাবে লাগে না
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ইঞ্জিনিয়ার আলী আহমেদ খান জাগো নিউজকে বলেন, ‘সচিবালয় তো রাষ্ট্রের ‘কি’ পয়েন্ট, কেপিআইভুক্ত এলাকা। যদিও এখানে আগেও একাধিকবার আগুন লেগেছে। পিডব্লিউ কাজও করেছে। আবার কেন তাহলে আগুন লাগলো? আমরা অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, এভাবে কখনো দুর্ঘটনার আগুন লাগে না।
স্ট্যান্ডার্ড গার্মেন্টসে লাগা আগুনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে ফায়ার সার্ভিসের সাবেক এই কর্মকর্তা বলেন, ‘দুর্বৃত্তরা যখন আগুন লাগায় তখন একসঙ্গে একাধিক স্থানে আগুন লাগে। এমন দুর্বৃত্তায়নের আগুন আমি আগেও দেখেছি। এখানেও (সচিবালয়) তাই হয়েছে। এটা শর্টসার্কিট না, আগুন লাগানো হয়েছে।’
নথি গায়েব করার সুযোগ
রাষ্ট্রের এমন স্পর্শকাতর ও গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় আগুন লাগাটা কোনোভাবেই মানা যায় না উল্লেখ করে ফায়ার সার্ভিসের সাবেক মহাপরিচালক ইঞ্জিনিয়ার আলী আহমেদ খান জাগো নিউজকে বলেন, ‘এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। আপনি জানেন এখানে অনেক কিছু আছে চুরি হতে পারে, কিন্তু আপনি দরজা খুলে রাখলে হবে? এখানে তাই হয়েছে। এত এত গুরুত্বপূর্ণ নথি। সেখানে চুরি হতে পারে, নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা। সেখানে লোকাল গার্ড ছিল, নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা তো তাদের বিজনেসের অংশ। সেখানে সরকার-পুলিশ কতক্ষণ থাকবে? তার চেয়ে তো নিজের নিরাপত্তা নিজেকেই রাখতে হবে। কে কে ছিল, কে ঢুকেছিল সেটা বের করতে হবে।’
রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে আগুন যদি লাগাতে হয় তবে ভবনে বৈদ্যুতিক স্পার্ক যেখানে হবে সেখানে ডিভাইস রেখে দূরে বসেও আগুন লাগানো যায়। ২৫ ডিসেম্বর সরকারি ছুটি ছিল। হয়তো দুর্বৃত্তরা এই ছুটির সুযোগে পরিকল্পিতভাবে আগুন লাগাতে পারে।- আবু নাঈম মো. শাহিদউল্লাহ
এছাড়া ফায়ার সার্ভিসের ভূমিকা নিয়েও সমালোচনা করে বলেন, ‘এখানে ফায়ার সার্ভিস ছিল। ভেতরে ফায়ার স্টেশন আছে। আর ক্যামেরা তো আছেই। সার্বক্ষণিক দেখভালের লোক আছে। সচিবালয়ের ভেতরে ও বাইরে এক বা দুজন লোক ছিল না, দেড়-দুই শতাধিক নিরাপত্তাকর্মী ছিল। তারা কি সবাই একসঙ্গে ঘুমাচ্ছিল? সেটা তো হতে পারে না।’
নাশকতা বিবেচনায় গুরুত্বসহ তদন্ত হোক
এ ঘটনাকে নাশকতা বিবেচনায় অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখার অনুরোধ জানিয়ে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ইঞ্জিনিয়ার আলী আহমেদ বলেন, ‘এটা ডিজাস্টার। কেউ চান্স নিয়েছে মনে হচ্ছে। গুরুত্ব সহকারে নাশকতার ঘটনা কি না তা খতিয়ে দেখার আহ্বান।’
দুর্ঘটনাজনিত শর্টসার্কিট হতে পারে, আরেকটি পরিকল্পিতভাবে শর্টসার্কিট দিয়ে আগুন সৃষ্টি করা যেতে পারে। এর জন্য ওই ছয়তলায় থাকতে হবে না। আগে থেকে পরিকল্পনা করে দুটি বৈদ্যুতিক তার একসঙ্গে লাগিয়ে বারুদ, গান পাউডার কিংবা কেমিক্যাল রেখে নিচে বৈদ্যুতিক প্লাগ অন করলে বৈদ্যুতিক স্পার্কের কারণে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে পারে।- ফায়ার সার্ভিসের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবু নাঈম মো. শাহিদউল্লাহ
‘নাশকতা’ হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক (অপারেশনস) মেজর (অব.) একেএম শাকিল নেওয়াজ বলেন, ‘সচিবালয়ে লাগা আগুন নির্বাপনে ১০ ঘণ্টা সময় নেওয়া অবিশ্বাস্য। সচিবালয়ে আগুন লাগানো হয়েছে। নাশকতার যথেষ্ট কারণ আছে। যে সব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বেশি দুর্নীতির অভিযোগ সে সব জায়গায় আগুন লাগছে। আরেক ভবনে তো আগুনই লাগেনি।’
সচিবালয়ে লাগা আগুন নির্বাপনে ১০ ঘণ্টা সময় নেওয়া অবিশ্বাস্য। সচিবালয়ে আগুন লাগানো হয়েছে। নাশকতার যথেষ্ট কারণ আছে। যে সব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বেশি দুর্নীতির অভিযোগ সে সব জায়গায় আগুন লাগছে। আরেক ভবনে তো আগুনই লাগেনি।- ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক (অপারেশনস) মেজর (অব.) একেএম শাকিল নেওয়াজ
তিনি বলেন, ‘গতকাল ছুটির দিন ছিল। রাত দেড়টায় আগুন লাগলো, যেখানে বাইরের মানুষের প্রবেশের সুযোগ নেই। এর মধ্যে একটা পক্ষের ৪০ ঘণ্টার আল্টিমেটাম চলছে। কারা আল্টিমেটাম দিয়েছে তাদের ধরতে হবে। মধ্য রাতে লাগা আগুন নেভাতে ১০ ঘণ্টা লাগলো কেন- তাও দেখতে হবে।’
দুর্ঘটনায় একসঙ্গে তিন জায়গায় আগুন লাগার কথা নয়
একেএম শাকিল নেওয়াজ বলেন, ‘যদি দুর্ঘটনাজনিত আগুন হয় তাহলে এক জায়গায় লাগার কথা। একসঙ্গে তিন জায়গায় আগুন লাগার কথা নয়। লাগানো হলেই তিন জায়গায় আগুন জ্বলবে। তো পুলিশ, আনসার, বিজিবি ছিল। চারদিকে লাইট বন্ধ ছিল। ফায়ার সার্ভিস কী করলো? তাদের কী দুর্বলতা ছিল? বঙ্গবাজার ১০ গজের ভেতরে, সেই আগুনও তারা দ্রুত নেভাতে পারলো না। সচিবালয় কেপিআইভুক্ত প্রতিষ্ঠান, সেখানেও তারা আগুন নেভাতে পারছেন না। এটা হয় না, মানা যায় না। তাদের ব্যর্থতাকেও তদন্তের বিবেচনায় আনতে হবে।’
তদন্ত কমিটিতে অভিজ্ঞ-বিশেষজ্ঞদের রাখা হয়নি
সচিবালয়ে লাগা আগুনের ঘটনায় উচ্চপদস্থ তদন্ত কমিটি গঠন নিয়ে সমালোচনা করেন তিনি। বলেন, ‘এখানে এক্সপার্ট কে? যাদের কমিটিতে রাখা হয়েছে তারা অভিজ্ঞতা ছাড়া কীভাবে আগুনের মোটিভ, নাশকতা শনাক্ত করবে? ফায়ার সার্ভিসের ভূমিকা যেখানে প্রশ্নবিদ্ধ, তাদের আবার কমিটিতে রাখা হয়েছে। তদন্ত কমিটিতে র্যাব-পুলিশের অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের রাখার পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিসের সাবেক অভিজ্ঞ ও বিশেষজ্ঞদের রাখতে হবে। তদন্ত কমিটিতে অগ্নিকাণ্ড সংক্রান্ত অভিজ্ঞদের রাখা উচিত।’
দাহ্যবস্তু নেই, আগুন কীভাবে ওপরে গেলো?
ফায়ার সার্ভিসের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবু নাঈম মো. শাহিদউল্লাহ জাগো নিউজকে বলেন, ‘এত দ্রুততার সঙ্গে ছয়তলার দুই প্রান্তে আগুন পৌঁছে যাওয়া এবং সেখান থেকে চারটি ফ্লোরে প্রসারিত হওয়া রহস্যজনক। কারণ সেখানে কোনো উচ্চ দাহ্যবস্তু, কেমিক্যাল ও ইলেট্রিক্যাল সংযোগ তেমন ছিল না। মাঝামাঝি লিফট থেকেও আগুন লাগার আশঙ্কা নেই। কারণ সেখানে করিডোর আছে, দুই প্রান্তে অফিসগুলোতে পৌঁছাতে গেলে কিছু জায়গা আছে সেখানে কোনো দাহ্যবস্তু নেই। ভবনের দুই প্রান্ত থেকে আগুন কীভাবে ওপরে গেলো এসব দেখে মনে হচ্ছে স্বাভাবিক কোনো আগুন না।’
দুর্ঘটনাজনিত শর্টসার্কিট হতে পারে, আরেকটি পরিকল্পিতভাবে শর্টসার্কিট দিয়ে আগুন সৃষ্টি করা যেতে পারে। এর জন্য ওই ছয়তলায় থাকতে হবে না। আগে থেকে পরিকল্পনা করে দুটি বৈদ্যুতিক তার একসঙ্গে লাগিয়ে বারুদ, গান পাউডার কিংবা কেমিক্যাল রেখে নিচে বৈদ্যুতিক প্লাগ অন করলে বৈদ্যুতিক স্পার্কের কারণে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে পারে।- ফায়ার সার্ভিসের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবু নাঈম মো. শাহিদউল্লাহ
শর্টসার্কিট দুই ভাবে হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দুর্ঘটনাজনিত শর্টসার্কিট হতে পারে, আরেকটি পরিকল্পিতভাবে শর্টসার্কিট দিয়ে আগুন সৃষ্টি করা যেতে পারে। এর জন্য ওই ছয়তলায় থাকতে হবে না। আগে থেকে পরিকল্পনা করে দুটি বৈদ্যুতিক তার একসঙ্গে লাগিয়ে বারুদ, গান পাউডার কিংবা কেমিক্যাল রেখে নিচে বৈদ্যুতিক প্লাগ অন করলে বৈদ্যুতিক স্পার্কের কারণে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে পারে।’
রিমোট কন্ট্রোল দিয়ে আগুন লাগানো হতে পারে!
ফায়ার সার্ভিসের সাবেক মহাপরিচালক আবু নাঈম মো. শাহিদউল্লাহ বলেন, ‘রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে আগুন যদি লাগাতে হয় তবে ভবনে বৈদ্যুতিক স্পার্ক যেখানে হবে সেখানে ডিভাইস রেখে দূরে বসেও আগুন লাগানো যায়। ২৫ ডিসেম্বর সরকারি ছুটি ছিল। হয়তো দুর্বৃত্তরা এই ছুটির সুযোগে পরিকল্পিতভাবে আগুন লাগাতে পারে।’
আপনি জানেন এখানে অনেক কিছু আছে চুরি হতে পারে, কিন্তু আপনি দরজা খুলে রাখলে হবে? এখানে তাই হয়েছে। এত এত গুরুত্বপূর্ণ নথি। সেখানে চুরি হতে পারে, নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা। সেখানে সরকার-পুলিশ কতক্ষণ থাকবে? তার চেয়ে তো নিজের নিরাপত্তা নিজেকেই রাখতে হবে। কে কে ছিল, কে ঢুকেছিল সেটা বের করতে হবে।- আলী আহমেদ খান
‘সচিবালয়ে ছুটির দিনেও নিরাপত্তাকর্মী ও গার্ড থাকেন। তাদের পরিবারকে ব্ল্যাকমেইল, তাকে ধরিয়ে দেওয়া কিংবা সম্পত্তি নষ্ট করে দেওয়ার ব্ল্যাকমেইল করে এসব নিরাপত্তাকর্মীদের ব্যবহার করা হতে পারে আগুন লাগানোর ক্ষেত্রে। হয়তো ওই নিরাপত্তাকর্মী জানেনই না আগুনের বিষয়ে। তাকে হয়তো বলা হতে পারে যে, অমুক জায়গায় একটি ‘সুইচ অন করে দিতে হবে।’
কমিটিতে এক্সপার্টদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে
তিনি বলেন, ‘উচ্চ পর্যায়ের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে এক্সপার্টদের অন্তর্ভুক্ত করার প্রয়োজনীয়তা আছে। কেমিক্যাল এক্সপার্ট, এক্সপ্লোসিভ (বিস্ফোরক) এক্সপার্ট এবং ইলেকট্রিক্যাল এক্সপার্টদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে কমিটিতে, কারণ তারা ‘ক্লু’ বের করতে পারবে। যারা পরিকল্পিতভাবে আগুন লাগায় তারা আলামত নষ্ট করার জন্য অনেক ব্যবস্থা রাখতে পারে। বৈদ্যুতিক তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলে অভিজ্ঞরা দেখলেই বুঝতে পারবেন শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত নাকি অন্য কোনোভাবে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে।’
গণপূর্তের বড় ধরনের গাফিলতি
ফায়ারের সাবেক ডিজি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবু নাঈম বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিসের ল্যাডারবাহিত (টিটিএল) যে গাড়িগুলো ছিল সেগুলো সচিবালয়ের গেট দিয়ে প্রবেশ করতে পারেনি। কারণ গণপূর্ত ইচ্ছামতো শোভাবর্ধন করে গেট ছোট করেছে। ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে গণপূর্তকে চিঠি পর্যন্ত দেওয়া ছিল। কিন্তু শোভাবর্ধন কমে যাবে বলে গণপূর্ত ফায়ার সার্ভিসের কথা মানেনি। কেপিআইভুক্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তায় কোনো রকমের সমঝোতা গ্রহণযোগ্য নয়।’
দুর্ঘটনাজনিত শর্টসার্কিট হতে পারে, আরেকটি পরিকল্পিতভাবে শর্টসার্কিট দিয়ে আগুন সৃষ্টি করা যেতে পারে। এর জন্য ওই ছয়তলায় থাকতে হবে না। আগে থেকে পরিকল্পনা করে দুটি বৈদ্যুতিক তার একসঙ্গে লাগিয়ে বারুদ, গান পাউডার কিংবা কেমিক্যাল রেখে নিচে বৈদ্যুতিক প্লাগ অন করলে বৈদ্যুতিক স্পার্কের কারণে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে পারে।- ফায়ার সার্ভিসের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবু নাঈম মো. শাহিদউল্লাহ
আগুনের কারণ জানাতে সময় চান ফায়ারের ডিজি
জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল জাগো নিউজকে বলেন, ‘সবকিছু নিয়ে তদন্ত হচ্ছে। আগুনের ঘটনায় মন্ত্রণালয় একটি তদন্ত কমিটি করেছে। সেখানে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা আছেন। এছাড়া ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে একটি অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।’
সচিবালয় তো রাষ্ট্রের ‘কি’ পয়েন্ট, কেপিআইভুক্ত এলাকা। যদিও এখানে আগেও একাধিকবার আগুন লেগেছে। পিডব্লিউ কাজও করেছে। আবার কেন তাহলে আগুন লাগলো? আমরা অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, এভাবে কখনো দুর্ঘটনার আগুন লাগে না।- ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ইঞ্জিনিয়ার আলী আহমেদ খান
রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে আগুন লাগানো হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তদন্ত চলমান। কমিটিতে অনেক অভিজ্ঞতাসম্পন্নরা রয়েছেন। শুক্রবার তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করবেন, এরপর এক্সপার্ট ওপিনিয়ন দেবেন, এরপর বলা যাবে আসলে ঘটনা কী।’
তদন্ত কমিটিকে তথ্য দিয়ে সহায়তার আহ্বান সরকারের
সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে আগুন লাগার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটিকে তথ্য দিয়ে সহায়তার জন্য গণমাধ্যমসহ অন্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ব্রিফিংয়েসরকারের পরিবেশ এবং পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘গণমাধ্যমকর্মীরা অনেকেই ঘটনাস্থলে আগে পৌঁছেছিলেন, তাদের কাছে বিভিন্ন তথ্য থাকতে পারে। অনেক প্রশ্ন অনেকের মনে আছে, সব প্রশ্নের উত্তর যদি আমরা আমাদের মতো করে দিতে থাকি তাহলে তো তদন্ত কমিটি করে লাভ হচ্ছে না। যার যা বক্তব্য আছে তা তদন্ত কমিটির কাছে দিলে তা তদন্তে সহায়ক হবে।’