শুল্ক-কর বাড়ানোর অধ্যাদেশ প্রত্যাহারের আহ্বান নাগরিক কমিটির

ডেস্ক রিপোর্ট
  ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ২২:৪৪

শতাধিক পণ্য-সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ও সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের জারি করা অধ্যাদেশ প্রত্যাহার করে অবিলম্বে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ট্রাকসেল চালুর দাবি জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক কমিটি।
শনিবার (১১ জানুয়ারি) কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এ আহ্বান জানান নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন।
লিখিত বক্তব্যে আখতার হোসেন বলেন, সম্প্রতি সরকার রাজস্ব আয় বাড়াতে শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ও সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর জন্য দুটো অধ্যাদেশ জারি করেছে। এর ফলে মূল্যস্ফীতি ও ব্যবসার খরচ বাড়বে, যা সাধারণ মানুষের জীবনমানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। সরকার তার রাজস্ব আয় বাড়ানোর জন্য করের আওতা বাড়াবে এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কিন্তু কর বাড়ানোর ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মান যাতে নেমে না যায় ও তাদের ভোগান্তি যাতে না বাড়ে সে বিষয়টি সরকারকে খেয়াল রাখতে হবে।
তিনি বলেন, বিগত অবৈধ সরকারের গণবিরোধী লুটেরা অর্থনৈতিক নীতি ও বিদেশে সীমাহীন অর্থপাচারের ফলে সাধারণ মানুষ ও মধ্যবিত্তের জীবন ইতিহাসের সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় আছে। মহামারি করোনায় নিঃস্ব হয়ে শহর ছেড়ে গ্রামে গিয়েছিল অনেক পরিবার, যারা আর শহরে ফিরতে পারেনি। সরকারি মেগা প্রজেক্টে বিদেশ থেকে কর্মী এনে কাজ করানো হয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশের বেকার শ্রমিক বসতভিটা, কৃষিজমি ও হালের গরু বিক্রি করে বিদেশে কাজ করতে গিয়ে প্রতারিত হয়েছে। কারণ, বিদেশে শ্রমিক পাঠানোর সেক্টরে তৈরি হয়েছিল সিন্ডিকেট। গার্মেন্টসে কাজ করতে গিয়ে নারীশ্রমিক বারবার বঞ্চিত হয়েছে ন্যায্য মজুরি থেকে, বেঁচে থাকার ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধা থেকে। আর শিক্ষিত মধ্যবিত্ত তার কষ্টের কথা বলতে না পেরে হয় বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে, না হয় দেশেই মানবেতর জীবন বেছে নিতে হচ্ছে।
‘২০২৪ সালে এ মধ্যবিত্ত, এ গার্মেন্টস শ্রমিক, এ সাধারণ মানুষ অবৈধ সরকারের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে এসেছিল। তাদের প্রত্যাশা ছিল ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচারের পতনের পর ন্যূনতম জীবনযাপনের উপকরণগুলো তাদের জন্য সহজলভ্য হবে, ভেঙে যাবে লুটেরার সিন্ডিকেট, বাড়বে তাদের ক্রয়ক্ষমতা, ফিরে পাবে তাদের আত্মমর্যাদা।’

নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব বলেন, বিগত অবৈধ সরকারের সীমাহীন দুর্নীতি ও বিদেশে অর্থপাচারের কারণে দেশের অর্থনীতির অবস্থা খুবই ভঙ্গুর ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তলানিতে। এ অবস্থায় বিগত অবৈধ সরকার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে চার দশমিক সাত বিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। আপনারা জানেন যেকোনো দেশের জন্য আইএমএফের ঋণ হলো ঋণপ্রাপ্তির সর্বশেষ আশ্রয়। এ কঠিন ঋণের শর্ত হিসেবে রাজস্ব বাড়ানোর সিদ্ধান্তের অংশ হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকার সম্প্রতি এ অধ্যাদেশগুলো জারি করেছে।

তিনি বলেন, টিসিবির মাধ্যমে গরিব জনগণ যাতে স্বল্পমূল্যে নিত্যপণ্য কিনতে পারে তার জন্য ট্রাকে করে তেল, ডাল ও চাল বিক্রয় করে। এটি একটি অবমাননাকর প্রক্রিয়া। আমরা দেখেছি, এ দেশের নাগরিক কীভাবে ট্রাকের পেছনে ৫ টাকা ১০ টাকা কমে চাল, ডাল ও তেল কেনার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকে। এ ধরনের প্রান্তিক মানুষদের রাষ্ট্রের কাছ থেকে ন্যূনতম যে অধিকার তাও ট্রাকসেল বন্ধ ঘোষণার মাধ্যমে কেড়ে নেওয়া হয়েছে। আমরা কল্পনা করতে পারি না জনগণের প্রতি কতটা দায়হীন অনুভব করলে সরকার এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারে!
অর্থনীতির পুনরুদ্ধারে বিকল্প হিসেবে নাগরিক কমিটির প্রস্তাব

★ প্রত্যক্ষ করের আওতা বাড়াতে হবে ও কর জাল সম্প্রসারণ করতে হবে, যা সরাসরি সাধারণ মানুষের জীবনমানের ক্ষতি করবে না। আমরা জানি প্রত্যক্ষ কর বাড়ানো সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জিং। কিন্তু গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত সরকারকে অবশ্যই সে চ্যালেঞ্জ নিতে হবে।

★ বিদ্যমান কর কাঠামোয় যে সীমাহীন দুর্নীতি হয়, তা বন্ধ করার উদ্যোগ নিলে রাজস্ব আয় বাড়বে।

★ বিগত সরকার ১৫ বছরে বিদেশে ২৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পাচার করেছে বলে শ্বেতপত্র কমিটির প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। সেগুলো দেশে ফেরত আনার জন্য সরকারকে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

★ গত ১৫ বছরে দেশের ব্যাংকগুলোকে দেউলিয়া করে ৯২ হাজার কোটি টাকা লোপাট করা হয়েছে ও খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় দুই লাখ কোটি টাকা। এগুলো আদায়ের উদ্যোগ নিতে হবে।

★ দেশে বিদ্যমান অর্থঋণ আদালত (২০০৩) সরকারকে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল করার যাবতীয় আইনি সুযোগ দিয়েছে। সরকার এ সুযোগ ব্যবহার করে দ্রুত একটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করে খেলাপি অর্থ আদায় ও অনাদায়ে তাদের সম্পত্তি ক্রোক করতে পারে।
‘বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষকে নতুন করে দুর্ভোগের দিকে ঠেলে দেওয়া জাতীয় নাগরিক কমিটি কোনোভাবেই সমর্থন করে না। সরকারের প্রতি আমাদের আহ্বান এমন কিছু করবেন না যাতে রক্ত দিয়ে স্বৈরাচার উৎখাত করা সাধারণ জনগণের জীবনযাপনের কষ্ট বেড়ে যায়।’