সিদ্ধান্ত বদল

ফের আন্দোলনে নামছেন পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা

শিক্ষা ডেস্ক
  ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১৮:১৭

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আশ্বাসে সাময়িকভাবে আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছিলেন পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৮টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করে তারা এ ঘোষণা দিয়েছিলেন। তবে ২৪ ঘণ্টা না পেরোতেই সিদ্ধান্ত পাল্টে ফেলেছেন তারা।
সাময়িকভাবে আন্দোলন স্থগিতের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে ফের কর্মসূচি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। বুধবার (২৩ এপ্রিল) বিকেলে কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা বলছেন, তারা সরকার তথা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তাদের আশ্বাসে ভরসা রাখতে পারছেন না। এজন্য দেশের সব পলিটেকনিকের প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করে আন্দোলন প্রত্যাহার এবং নতুন কর্মসূচি ঠিক করতে বৈঠক ডেকেছেন।
কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের সেল সম্পাদক (অস্থায়ী) মো. সাব্বির আহমেদ বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় যে কমিটি গঠন করেছে, তার ওপর শিক্ষার্থীরা ভরসা করছেন না। আগেও এমন কমিটি হয়েছিল, কিন্তু দাবি-দাওয়া পূরণ হয়নি। তাই সব শিক্ষার্থীর সম্মতিতে আন্দোলন স্থগিতের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আগামীকাল আমরা কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি সম্মেলন করবো। সম্মেলনে অংশ নিতে বিভিন্ন বিভাগীয় পর্যায়ে থেকে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিরা ঢাকা এসে পৌঁছেছেন। অন্যদেরও আমরা চলে আসতে বলেছি। সেখানে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
দুপুর ২টার কিছুক্ষণ পর ‘বিশেষ বার্তা’শিরোনামে একটি বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের সেল সম্পাদক সাব্বির আহমেদের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২২ এপ্রিল মঙ্গলবার রাতে কারিগরি ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ কর্তৃক প্রেস রিলিজে উল্লিখিত চলমান আন্দোলন সাময়িক স্থগিতের নির্দেশ সব সাধারণ শিক্ষার্থীদের সম্মতিক্রমে প্রত্যাহার করা হলো। পরবর্তী কর্মসূচি কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিদের বৈঠকের পর ঘোষণা করা হবে।
এদিকে মঙ্গলবার রাতে আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেওয়ার পর পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা কড়া সমালোচনা শুরু করেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শিক্ষার্থীদের অনেকে লেখেন, কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা টাকা খেয়ে আন্দোলন স্থগিত করেছেন। তারা এ সিদ্ধান্ত মানেন না।
বুধবার সকাল থেকে কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের ফেসবুক পেজে দফায় দফায় নির্দেশনা দেওয়া শুরু হয়। আজ দুপুর ১টার দিকে প্রথমে একটি ‘জরুরি নোটিশ’ উল্লেখ করে পোস্ট দেওয়া হয়। সেখানে বলা হয়, যে সব পলিটেকনিকের প্রশাসনিক ভবন তালা রয়েছে, তা সেই অবস্থাতেই অব্যাহত থাকবে।
জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর পদে পদোন্নতিতে ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের ৩০ শতাংশ কোটার রায় বাতিলসহ ৬ দফা দাবি আদায়ে কয়েকমাস ধরে আন্দোলন করছেন সারাদেশের ৪ লাখেরও বেশি পলিটেকনিক শিক্ষার্থী। প্রথম দিকে তারা স্মারকলিপি দেওয়া ও মানববন্ধন কর্মসূচি করেছেন। পরে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেও দাবি আদায় না হওয়ায় গত ১৬ এপ্রিল রাজধানীর তেজগাঁওয়ে সাতরাস্তা মোড় অবরোধ করেন। এতে রাজধানীতে ব্যাপক যানজট শুরু হয়।
একই দিনে সারাদেশে অবরোধ কর্মসূচি করেন শিক্ষার্থীরা। কুমিল্লায় শিক্ষার্থীদের অবরোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা লাঠিচার্জ করেন। এতে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের আন্দোলন আলোচনায় আসে।
এদিকে ১৭ এপ্রিল তারা সারাদেশে রেলপথ ব্লকেড কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন। পরে সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে তাদের আশ্বাস দেওয়া হলে কর্মসূচি শিথিল করে আলোচনা বসেন শিক্ষার্থীরা। তবে সেই আলোচনা ফলপ্রসূ না হওয়ায় ধারাবাহিক কর্মসূচি করে আসছিলেন তারা।
সোমবার (২১ এপ্রিল) সন্ধ্যায় আবারও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন তারা। সেখানে মন্ত্রণালয় ৮ সদস্যের কমিটি গঠন করে তিন সপ্তাহ সময় চান। এর প্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন স্থগিত করে ক্লাসে ফিরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বলে জানায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
প্রথমে মন্ত্রণালয়ের এ দাবি প্রত্যাখ্যান করলেও মঙ্গলবার রাতে জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকে সাময়িকভাবে আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেন পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা। তবে সেই সিদ্ধান্ত বদল করে আবারও কর্মসূচি দিতে যাচ্ছেন তারা।