মাহফুজ, নাহিদ ও আসিফের পদত্যাগের কানাঘুষা

বিএনপির সুপার গেমে- জামায়াতের ওভারট্রাম্প

ডেস্ক রিপোর্ট
  ৩০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৪:১৫

নির্বাচন নিয়ে সময়ক্ষেপণের মাঝে ভিন্ন কিছুর আতঙ্কে বিএনপি। যে কারণে আগামী দিনের ক্ষমতার নিশ্চিত উচ্চাকাক্সক্ষার মাঝে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাও দলটির শীর্ষ পর্যায়ে। একদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের সঙ্গে মুখযুদ্ধ, আরেকদিকে জামায়াতের সঙ্গে এত দিনের মিতালিতে ভাটা। অবিশ্বাসও চরমে। এর জেরে দ্রুত এবং বিস্ময়কর-অবিশ্বাস্যভাবে পীর চরমোনাইর সঙ্গে ১০ দফা, খেলাফত মজলিসের সঙ্গে ৭ দফা চুক্তি। যেখানে মাত্র কদিন আগেও আয়োজন চলেছে জামায়াত-চরমোনাই-হেফাজতের ঐক্য নিয়ে। সেখানে এখন ঐক্যের চাকা উল্টো দিকে।
জামায়াত আমির চলে যান চরমোনাই পীরের বাড়িতে। বিএনপির মহাসচিব ইসলামী আন্দোলনের দলীয় অফিসে। উপদেষ্টা নাহিদ বলেন, বিএনপি আরেকটি ১/১১ আনতে চায়। উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেন, এ দেশে আর সামরিক শাসন আসবে না। হাসনাত বলেন, ক্ষমতামুখী না হয়ে জনতামুখী হতে। এখানে কে কার পক্ষে-বিপক্ষে, এক উল্টাপাল্টা কথামালা। এমন তৎপরতার মাঝেই ন্যূনতম সংস্কার শেষে দ্রুত সংসদ নির্বাচনের পাশাপাশি ইসলামি শরিয়াহবিরোধী কোনো সিদ্ধান্ত না নেওয়ার বিষয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও বিএনপির মধ্যে দফারফা। ঐক্যের দৌড়ে এর আগে জামায়াতের আমির ২১ জানুয়ারি বরিশালে চরমোনাইর পীর ফজলুল করিমের বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে গেছেন। এর কয়েক দিনের মাথায় চরমোনাই-বিএনপির ১০ দফা। এর আগেও খেলাফত মজলিস ৭ দফার ভিত্তিতে বিএনপির সঙ্গে একটা রফাদফা হয়। এ দলগুলোর ভেতরের হিসাব যার যার কাছে পরিষ্কার। বিএনপির সঙ্গে সমঝোতা হলে এসব দলের নির্বাচনে কিছু আসন নিশ্চিত হয়। এর মাঝে বিএনপির আগামীতে জাতীয় ঐক্যের সরকারের একটি বার্তাও মেলে।
এর মাঝেই ভারতের জাতীয় প্রজাতন্ত্র দিবসে বিএনপি-জাতীয় পার্টির কয়েক নেতা ভারতীয় দূতাবাসের প্রোগ্রামে যখন ব্যস্ত, ঠিক সেই মুহূর্তে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান চীনের আয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ সোশ্যাল রিলেশন প্রোগ্রাম অর্থাৎ শীতবস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে। জামায়াতের প্রকাশ্যে চীনকে ধারণ করার মধ্যেও লুকিয়ে আছে কিছু মেসেজ। ভারতীয় প্রজাতন্ত্র দিবসে জামায়াতের এ মেসেজের সঙ্গে আরও অনেক কিছুরই সংযোগ, যা কারও কারও কল্পনারও বাইরে। পরে আবার চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েনের সঙ্গে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও বৈঠক করেছেন।
বারিধারায় চীনের দূতাবাসে এ বৈঠক হয় প্রায় ঘণ্টাব্যাপী। বৈঠকের খবরটি চাপা রাখার ব্যাপারে উভয় পক্ষের মাঝেই ছিল বেশ সাবধানতা। এসব ঘনঘটার সমান্তরালে চীনের সঙ্গে সরকারের কিছু বিষয়ে সমঝোতা। চিকিৎসার জন্য ভারতের বিকল্প হিসেবে চীনকে বেছে নেওয়ার চিন্তা। চীনের সঙ্গে ইঁদুর-বিড়াল খেলতে গিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাস্তানাবুদ হওয়ার ঘটনার এক বছরও যায়নি। গত নির্বাচনের পর শেখ হাসিনা চীন সফরে গিয়ে খালি হাতে ফিরে এসেছিলেন। কিন্তু প্রচার করেছিলেন বিশাল প্রাপ্তি ও সম্মানিত হওয়ার খবর। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং যে শেখ হাসিনাকে বলেছিলেন, আগে নিজ দেশের সার্বভৌমত্ব অর্জন করে আসুন, তারপর অন্য কথা। সেই কথা লুকানো হয়েছিল। সেই খবর বেশি দিন গোপন থাকেনি। এদিকে ছাত্রদের নাগরিক কমিটিও এগোচ্ছে। সে ক্ষেত্রে তিন ছাত্র উপদেষ্টা মাহফুজ, নাহিদ, আসিফের বিদায় ঘটতে পারে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ থেকে। এতে উপদেষ্টা পরিষদে রদবদল অপেক্ষা করছে। সেখানে যোগ হতে পারেন বিভিন্ন দল ও মহলের সঙ্গে বোঝাপড়াসম্পন্ন ৫-৬ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি। তা হবে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বোঝাপড়াতেই। সে ক্ষেত্রে উপদেষ্টা পরিষদের আওতা বাড়তে পারে। এ-সংক্রান্ত কানাঘুষাও ব্যাপক। সেই সঙ্গে আলোচিত ওয়ান ইলেভেন আমলে নতুন দল গঠনের উদ্যোগ ব্যর্থ হওয়া নতুন করে আলোচিত। এবার সাবজেক্ট-অবজেক্টে কিছু ফের রয়েছে। এবার প্রেক্ষাপটও ভিন্ন।
উপমহাদেশে দল গড়ার ইতিহাসে দেখা যায়, দল গড়ে উঠেছে দুভাবে। একটি ইনডাকটিভ পদ্ধতির, আরেকটি ডিডাকটিভ। ব্রিটিশ আমলে কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ গড়ে উঠেছিল ইনডাকটিভ পদ্ধতিতে। পাকিস্তান আমলে সামরিক শাসকেরা মুসলিম লীগের ওপর ভর করে রাজনীতি করেছেন। আওয়ামী লীগ, ন্যাপ ও কমিউনিস্ট পার্টি গড়ে উঠেছে ডিডাকটিভ পদ্ধতিতে। বাংলাদেশ আমলে আওয়ামী লীগ, জাসদ ছিল স্বাধীনতার পর সবচেয়ে বড় দল। জাসদও গঠিত হয়েছিল ডিডাকটিভ পদ্ধতিতে। এরপর প্রেসিডেন্ট জিয়া গঠন করলেন বিএনপি। এ দলটিও গঠিত হয়েছে ইনডাকটিভ পদ্ধতিতে। এরশাদও জাতীয় পার্টি গঠন করেছিলেন ইনডাকটিভ পদ্ধতিতে। মইনউদ্দিন-ফখরুদ্দীনরাও ইনডাকটিভ পদ্ধতিতে দল গঠন করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন।
এবার ছাত্রদের নিয়ে এবং দিয়ে ইনডাকটিভ আর ডিডাকটিভের রসায়ন ঘটানোর ব্যাপক আয়োজন। প্রথাগত রাজনীতির আদুভাইদের জন্য তা উদ্বেগের। আবার তাদের কারও কারও বিশ্বাস, নতুন এ দল টিকবে না। কারণ ছাত্রদের উদ্যোগ সফল হওয়ার কোনো অবজেকটিভ প্রস্তুতি নেই। এখানে তারা বড়জোর জাসদের পরিণতি দেখেন। জাসদ গঠিত হয়েছিল তখনকার ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে রেডিক্যাল বক্তব্য দিয়ে। সে সময় প্রায় ৯০ শতাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ছিল জাসদ ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু ব্যাপক পেশীজীবীকে তারা সম্পৃক্ত করতে পারেনি। ফলে একসময় এসে এই দল শুকিয়ে মরে যায়। আবার জিয়াউর রহমান ভাসানী ন্যাপসহ বিভিন্ন কর্নারের নিষ্ঠাবান ও অভিজ্ঞদের টেনে এনে বিএনপিকে পাকাপোক্তভাবে প্রতিষ্ঠা করেছেন। কিন্তু এরশাদ তা পারেননি।
সূত্র: ঠিকানা