ডিসেম্বরের মধ্যে তিস্তা মহাপরিকল্পনা প্রস্তুত হবে

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান
ডেস্ক রিপোর্ট
  ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২২:৩৪

পানিসম্পদ, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, নদীপাড়ের মানুষর দুঃখ দুর্দশা লাঘবে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে তিস্তা মহাপরিকল্পনা চূড়ান্তভাবে প্রস্তুত করা হবে।
রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার রেলসেতু এলাকায় তিস্তা নিয়ে করণীয় শীর্ষক গণশুনানিতে তিনি এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ান হাসান বলেন, তিস্তা কোনো দেশের একক নদী না। কেউ যদি মনে করে তিস্তা কারো একক নদী, তা হবে তাদের ভুল ধার না। কেউ যদি আমাদের বন্ধু হয় তাহলে বর্ষায় পানি ছাড়ার আগে কেন আমাদের জানায় না। এ অঞ্চলের ৪৫ কিলোমিটার নদীভাঙন এলাকা তার মধ্যে ২২ কিলোমিটার বেশি ভাঙনপ্রবণ। তাই আগামী মার্চের মধ্যে টেন্ডার আহ্বান করে নদীভাঙন রোধে কাজ শুরু করার জন্য আমি পানি উন্নয়ন বোর্ডকে নির্দেশ দিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আপনাদের অনেক প্রত্যাশা। কিন্ত আমাদের কাছে তেমন অর্থ নেই। তবুও নদীর পাড়ের মানুষের দুঃখ দুর্দশা ঘোচাতে তিস্তা পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আমরা উদ্যোগ নিয়েছি।
একই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, বিগত সরকার প্রধান বলে গেছেন, আমরা যা ভারতকে দিয়েছি ভারত তা চিরকাল মনে রাখবে। কিন্তু ভারত মনে রাখার মতো এদেশকে কিছুই দেইনি। আমরা ভারতকে চাপ দিয়ে তিস্তার ন্যায্য হিস্যা আদায় করবো। তিস্তা যেন এ এলাকার মানুষের জন্য আশীর্বাদ হয়।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে শিরদাঁড়া উঁচু করে দাঁড়িয়েছে জানিয়ে আসিফ মাহমুদ বলেন, তিস্তা চুক্তি বাস্তবায়ন এবং পানির হিস্যা আদায়ের ক্ষেত্রে ভারতের সঙ্গে মাথা উঁচু করে কথা বলবে বাংলাদেশ।
আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, আন্তর্জাতিক পানি আইনের ভিত্তিতে কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টি করা হবে, যাতে ভারত চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে বাধ্য হয়। ২০১১ সাল থেকে বাংলাদেশ তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ের জন্য একটি খসড়া নিয়ে ঘুরছে। তবে, বিগত ফ্যাসিবাদী সরকার ভারতকে শুধু ছবি তোলার সুযোগ দিয়েছে, কিন্তু তিস্তার ব্যাপারে কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়নি।
তিনি বলেন, তিস্তার চরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ করা হবে। ফসলের ন্যায্যমূল্য যাতে কৃষকেরা পায় সেজন্য এ এলাকায় কোল্ড স্টোরেজ নির্মাণ, তিস্তা নদীতে আরও একটি সেতু নির্মাণ করা হবে। উত্তরাঞ্চলে কৃষি শিল্পের বিপ্লব ঘটানো হবে।
রংপুর জেলা প্রশাসক মো. রবিউল ফয়সালের সভাপতিত্বে গণশুনানি অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব একেএম তারিকুল আলম, কাউনিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি এমদাদুল হক ভরসা, লালমনিরহাট জেলা বিএনপির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক একেএম মমিনুল হক, কাউনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহিদুল হকসহ অনেকে বক্তব্য দেন।
রংপুরের পাঁচ জেলার ১২ উপজেলার ৪৪ ইউনিয়নের মধ্যদিয়ে প্রবাহিত হয়েছে তিস্তা। এ নদীর সাথে ২২টি নদী যুক্ত। সেই নদী সাধারণ মানুষের মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। এ নদী শাসনের মাধ্যমে ১১৫ কিলোমিটার নদীর গতি- প্রকৃতি নিয়ন্ত্রণ, ভাঙন প্রতিরোধ, বাঁধ নির্মাণ ও মেরামত কাজের মাধ্যমে বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ হ্রাস, ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নদী খনন, নদী প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ ও নদী পুনরুদ্ধার, চ্যানেল ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নদীর নাব্যতা বৃদ্ধি, খননকৃত মাটি ভরাট স্থানে অর্থনৈতিক অঞ্চল, পাওয়ার প্লান্ট ও স্যাটেলাইট টাউন সেচের মাধ্যমে কৃষি ব্যবস্থার উন্নয়ন, শুষ্ক মৌসুমে পানি প্রবাহ নিশ্চিতকরণ প্রকল্পের মাধ্যমে এলাকার পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার দাবি জানান তারা।