৭ মাস পর বাড়ি গেলো শহীদ হাসানের মরদেহ

ডেস্ক রিপোর্ট
  ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০৩

সাতমাস পর বাড়ি ফিরলো জুলাই আন্দোলনে শহীদ মো. হাসানের (২২) মরদেহ। শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) মরদেহ ভোলার সদর উপজেলার সাহামাদার গ্রামে পৌঁছালে হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।
মো. হাসান উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাহামাদার গ্রামের মো. মনির হোসেনের ছেলে। গত ৫ আগস্ট ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে ছাত্র-জনতার মিছিলে গিয়ে শহীদ হন তিনি।
স্বজন ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিখোঁজ ছিলেন হাসান। রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতাল ও মর্গে ঘুরেও তার কোনো সন্ধান পায়নি স্বজনরা। অবশেষে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে মিলে হাসানের মরদেহ। শুক্রবার হাসানের পরিবারের ক‌াছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়। পরে শনিবার সকালে নিজ গ্রামে জানাজা শেষে মরদেহ দাফন করা হয়।
হাসানের মা গোলেনূর বেগম জানান, দুই মেয়ে ও দুই ছেলের মধ্যে হাসান দ্বিতীয়। তার বাবা দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালালেও অসুস্থতার কারণে ঠিকমত কাজ করতে পারেন না। তাই অভাবের কারণে পড়াশুনা বাদ দিয়ে কয়েক বছর আগে চাকরির জন‌্য যান ঢাকায় যান হাসান। সর্বশেষ কাপ্তান বাজারের এরশাদ মাকের্টে একটি ইলেকট্রনিক্স দোকানে চাকরি করতেন হাসান। তার বেতনের টাকায় চলতো সংসার।
৫ আগস্ট যাত্রাবাড়‌ীতে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন হাসান। লোকমুখে শুনেছেন গুলিবিদ্ধ হাসানকে কয়েকজন হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতাল ও মর্গে খোঁজাখুঁজি করি। কোথাও পাওয়া যায়নি তাকে।
জানুয়ারি মাসে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে থাকা কয়েকটি অজ্ঞাতপরিচয় মরদেহের মধ্যে প্রাথমিকভাবে হাসানকে শনাক্ত করে স্বজনরা। পরে ডিএনএ পরীক্ষায় হাসানের পরিচয় শনাক্ত হয়। শুক্রবার হাসানের মরদেহ তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
রাত ১২টার দিকে হাসানের মরদেহ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছে। শনিবার সকাল ১০টার দিকে সাহামাদার মাধ‌্যমিক বিদ‌্যালয়ের মাঠে জানাজা শেষে বেলা ১১টায় বাড়ির পাশে কবরস্থানে দাফন করা হয় হাসানকে।
হাসানের চাচা মো. নুরে আলম জানান, জানুয়ারি মাসে ঢাকা মেডিকেলের মর্গে প্রাথমিকভাবে তিনিসহ পরিবারের লোকজন হাসানের মরদেহ শনাক্ত করেন। পরে হাসানের বাবা-মা ডিএনএ পরীক্ষা করেন। এরপর নিশ্চিত হন হাসানের মরদেহ।
হাসানের ভগ্নীপতি মো. ইসমাইল হোসেন জানান, তার দোকানে কয়েক বছর ধরে ছিলেন হাসান। সবার সঙ্গে হাসানের ভালো সম্পর্ক ছিল। আমি দোকানে না গেলেও হাসান ঠিকমতো আমার ব‌্যবসা পরিচালনা করতো। হ‌াসানকে ছোট ভাইয়ের মতো দেখে রাখতাম। হাসান যেমন ভদ্র তেমন সাহসী ছিলেন।
জাতীয় নাগরিক কমিটি ভোলার সংগঠক মো. শাহাদাৎ খন্দকার জানান, জুলাই-আগস্টের সব হত‌্যাকাণ্ডের বিচার ও শহীদ পরিবারের পাশে সব সময় সরকারকে পাশে থাকার জন‌্য জোর দাবি করছি। শহীদ পরিবারের সব সুযোগ-সুবিধা সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে।
এদিকে হাসানের দাফন শেষে দুপুর ১২টার দিকে হাসানের কবরস্থানের সামনে থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। বিক্ষোভে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচার ও আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবি করেন বৈষম‌্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষ‌ার্থী ও সমন্বয়করা।