চট্টগ্রামে ভাত খাওয়ার সময় যুবদলকর্মীকে গুলি করে হত্যা

বনানীতে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ছুরিকাঘাতে ‘ছাত্রদল কর্মী’ নিহত
ডেস্ক রিপোর্ট
  ২০ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০৯
আপডেট  : ২০ এপ্রিল ২০২৫, ১২:১৮
মুহাম্মদ মানিক আবদুল্লাহ ও জাহিদুল ইসলাম পারভেজ

চট্টগ্রামের রাউজানে এক যুবদলকর্মীকে গুলি করে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল শনিবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে উপজেলার বাগোয়ান ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের গরিব উল্লাহপাড়া গ্রামের ভান্ডারী কলোনির একটি বাসায় ভাত খাওয়ার সময় সন্ত্রাসীরা তাঁকে গুলি করে হত্যা করেন। এ ঘটনায় একই দলের প্রতিপক্ষের লোকজন জড়িত বলে সন্দেহ নিহত ব্যক্তির পরিবারের।
নিহত যুবদলকর্মীর নাম মুহাম্মদ মানিক আবদুল্লাহ (৩৬)। তিনি গরিব উল্লাহপাড়া গ্রামের আবদুল মোতালেবের ছেলে। দীর্ঘদিন সংযুক্ত আরব আমিরাতে ছিলেন তিনি। গত বছরের অক্টোবরে তিনি দেশে আসেন। স্থানীয় রাজনীতিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত মানিক আবদুল্লাহ। এলাকার বিভিন্ন স্থানে তিনি গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছবিসহ তোরণ নির্মাণ এবং ব্যানার টাঙিয়ে প্রচারণা চালিয়ে আসছিলেন।
পরিবার ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গেছে, মানিক আবদুল্লাহ দেশে ফেরার পর স্ত্রী, ১০ বছর বয়সী ১ ছেলে ও ৫ বছরের মেয়েকে নিয়ে চট্টগ্রাম নগরের একটি বাসায় ভাড়ায় থাকতেন। স্ত্রী-সন্তান ছাড়া গ্রামে এলে ভান্ডারী কলোনির ওই বাসাটিতে ভাত খেতেন। গতকাল রাতেও আরেক যুবদলকর্মীসহ তিনি ওই বাসাটিতে ভাত খাচ্ছিলেন। এ সময় বাসাটিতে ঢুকে ১২ থেকে ১৫ জন সন্ত্রাসী গুলি করে তাঁকে হত্যা করেন। তাঁর শরীরের তিনটি স্থানে গুলি লাগে। হত্যার পর সন্ত্রাসীরা অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলে চলে যান।
নিহত ব্যক্তির ছোট ভাই সাকিল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, একই দলের প্রতিপক্ষের কিছু নেতা-কর্মী তাঁর ভাই মানিক আবদুল্লাহর ওপর তিন মাস আগেও হামলা করেছিলেন। ভাইয়ের ওপর ক্ষোভ থেকে তাঁর কোচিং সেন্টার ও তাঁর বোনের বাড়িতেও হামলা করা হয়। ওই সন্ত্রাসীরাই তাঁর ভাইকে ভাত খাওয়ার সময় গুলি করে হত্যা করেছেন। তিনি বলেন, ‘বিগত সরকারের সময় নির্যাতনের শিকার হয়ে বিদেশে থাকতে হয়েছে আমার ভাইকে। দেশে ফেরার পর দলের প্রতিপক্ষের হাতে জীবন দিতে হলো। আমি হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’
পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তিনটি গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়েছে। নিহত যুবদলকর্মীর মাথা, ঊরু ও পায়ে গুলি করা হয়। লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হবে।
জানতে চাইলে রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া  বলেন, একটি বাসায় দুজন রাতের খাবার খাচ্ছিলেন, এ সময় গুলি করে মানিককে হত্যা করা হয়েছে। তবে তাঁর সঙ্গে থাকা অন্যজনের কোনো খোঁজ মেলেনি। সন্ত্রাসীরা তাঁকে অপহরণ করেছেন, নাকি তিনি পালিয়ে গেছেন, সে বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। ওসি আরও বলেন, মানিককে কিছু সন্ত্রাসী হত্যার পরিকল্পনা করছিলেন, এমন খবর তাঁরা আগে জেনেছেন। এ বিষয়ে তাঁকেও সতর্ক করা হয়েছিল। সন্ত্রাসীদের ধরতে অভিযান চলছে বলে জানান ওসি।

প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ছুরিকাঘাতে ‘ছাত্রদল কর্মী’ নিহত
রাজধানীর বনানীতে বেসরকারি প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসে ছুরিকাঘাতে জাহেদুল ইসলাম পারভেজ নামে এক ছাত্রদল কর্মী খুন হয়েছেন।
শনিবার (১৯ এপ্রিল) বিকেল ৪টার পর এ ঘটনা ঘটে। নিহত পারভেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র। তার বাড়ি ময়মনসিংহে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ক্যাম্পাসের পাশে একটি দোকানে বন্ধুদের সঙ্গে সিঙাড়া খাচ্ছিলেন পারভেজ। তাদের পাশে সদ্য ভর্তি হওয়া ইংরেজি ও ইন্টারন্যাশনাল হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্টের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের বন্ধু ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্সের দুই ছাত্রী ছিলেন। এক পর্যায়ে দুই ছাত্রী অভিযোগ করেন পারভেজ তাদের উত্ত্যক্ত করেছেন। তারা বিষয়টি প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটির প্রক্টরকে জানান।
এরপর প্রক্টর পারভেজকে ডেকে নেন। সেখানে তিনি দাবি করেন, বন্ধুদের সঙ্গে নিজেদের আলাপের বিষয় নিয়ে হাসাহাসি করছিলেন, কাউকে উত্ত্যক্ত করেননি। এক পর্যায়ে ওই দুই ছাত্রীর কাছে ক্ষমা চাইতে বলা হলে পারভেজ ক্ষমাও চান।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে জানান, প্রক্টর ডেকে নেয়ার পর সেখানেই ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থীরা পারভেজকে হুমকি দেন। প্রক্টরের অফিস থেকে বেরিয়ে আসার পর কিছু বহিরাগত এসে আক্রমণ করেন। একপর্যায়ে ধারালো কিছু দিয়ে পারভেজের বুকে আঘাত করে তারা পালিয়ে যান। রক্তাক্ত পারভেজকে উদ্ধার করে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এমন ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত উল্লেখ করে দুঃখ প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাসেল সারোয়ার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। এজহার হাতে পেলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে। শুধু বাগবিতণ্ডা নাকি অন্য কোনও কারণ আছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পারভেজকে হত্যা ছিল পূর্বপরিকল্পিত’
এদিকে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম পারভেজকে (২২) হত্যা পূর্বপরিকল্পিত বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। শনিবার (১৯ এপ্রিল) দিবাগত রাতে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এমন দাবি করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনটি বলেছে, শনিবার (১৯ এপ্রিল) বিকাল ৪টায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সক্রিয় কর্মী ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের মেধাবী শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম পারভেজ নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হন।
ঘটনাস্থলে কী হয়েছিল, তার বর্ণনা দিয়ে তারা বলছে, শহীদ জাহিদুল ইসলাম পারভেজ ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার বিরুনিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও দুই-তিনজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বসে সিঙাড়া খাচ্ছিলেন। এমন সময় ছাত্র মেহেরাজ ইসলাম এবং আরও দুজন ছাত্রীসহ কয়েকজন ওই পথে হেঁটে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ তারা পারভেজকে উদ্দেশ করে ‘এদিকে তাকাচ্ছ কেন?’, ‘এদিকে তাকালে চোখ তুলে দেব’— এ ধরনের টিজিংমূলক উসকানিমূলক মন্তব্য করতে থাকেন।
‘পারভেজ জবাবে বলেন, কী দোষ করেছি ভাই? এতে তারা উত্তেজিত হয়ে ওঠে এবং পারভেজের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। এরপর উভয় পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়। বিষয়টি মীমাংসার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. আব্দুস সালাম হস্তক্ষেপ করেন এবং উভয় পক্ষকে মীমাংসা করে দেন।
বৈষম্যবিরোধী নেতাদের বিষয়ে সংগঠনটি বলেছে, কিন্তু দুঃখজনকভাবে, মেহেরাজ ইসলাম গং এই মীমাংসা মানতে অস্বীকৃতি জানিয়ে ১০-১৫টি লাশ ফেলার হুমকি দিয়ে বহিরাগতদের ডেকে আনেন। এই হামলায় মেহেরাজ ইসলামের সাথে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বনানী থানা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক শোভহান নিয়াজ তুষার এবং বৈষম্যবিরোধী কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব হৃদয় মিয়াজী নেতৃত্বে বেশ কিছু উচ্ছৃঙ্খল সন্ত্রাসী জড়িত ছিল। তারা পারভেজকে ছুরি দিয়ে বুকের ওপর আঘাত করে হত্যা করে।
‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরের মীমাংসার পর যখন হুমকি-ধমকি চলছিল, তখন শহীদ পারভেজ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে নিরাপত্তা চেয়ে আকুতি জানিয়েছিলেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ বা প্রশাসন কোনো ধরনের সহায়তা করেনি।
‘আমরা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা, দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, পারভেজ ইসলামের ওপর চালানো এই হামলা ছিল পূর্বপরিকল্পিত। নতুবা সামান্য একটি ঘটনার জেরে, প্রক্টরের মীমাংসার পরও একজন মেধাবী ছাত্রকে প্রকাশ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ছুরি মেরে হত্যা করার প্রশ্নই আসে না।
বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রদলের সাংগঠনিক কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করার উদ্দেশ্যে, ছাত্রলীগের কায়দায় বৈষম্যবিরোধী নেতারা দীর্ঘদিন ধরে নানা ধরনের হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছিল। এরই ধারাবাহিকতায় একটি পরিকল্পিত চক্রান্তের অংশ হিসেবে ছাত্রদলকে নেতৃত্বশূন্য ও ক্যাম্পাসে দুর্বল করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। ছাত্রদলের রাজনীতিতে শিক্ষার্থীদের সক্রিয় অংশগ্রহণকে নিরুৎসাহিত করতে তারা একের পর এক ভয়াবহ কৌশল নিচ্ছে।
সংগঠনটি বলছে, আমরা এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারী, ইন্ধনদাতা, হুকুমদাতা এবং হামলাকারী সন্ত্রাসীদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
‘আমরা জাতির সামনে প্রকৃত সত্য তথ্য তুলে ধরার আহ্বান জানাচ্ছি। এমন বর্বর, কাপুরুষোচিত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। গণতান্ত্রিক ছাত্ররাজনীতি চলবে, চলতেই থাকবে। ইনশাআল্লাহ।’