ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে (ডাকসু) ব্যবহৃত ব্যালট পেপার ছাপায় অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। টেন্ডার ছাড়াই নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান নীলক্ষেত গাউসুল আজম মার্কেট থেকে অরক্ষিতভাবে ছাপানো হয়। ছাপানো ব্যালটের সংখ্যা নিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্যে রয়েছে ব্যাপক গরমিল। নিউজ২৪ টেলিভিশনের অনুসন্ধানে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
জানা গেছে, গাউসুল আজম মার্কেটের জালাল প্রেসে ব্যালট পেপার ছাপানো হয়। প্রতিষ্ঠানটির মালিক জানান তিনি ৪৮ হাজার পৃষ্ঠা ব্যালট ছাপিয়েছেন যেখানে প্রতিটি পৃষ্ঠায় দুটি করে ব্যালট ছিল। অর্থাৎ মোট ব্যালট ছাপানো হয়েছে ৯৬ হাজার। সেই ব্যালট কাটা হয় একই মার্কেটের মক্কা পেপার হাউজ নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠানে।
তারা বলছেন, সেখানে ৮৮ হাজারের মতো ব্যালট কাটা হয়েছে। মধ্যরাতে ব্যালট কাটা হয়েছিল বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির এক কর্মী। পরদিন সকাল ৯টায় ব্যালটগুলো নিয়ে যায় সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ব্যালট ছাপার কাজ একমাত্র দরদাতা প্রতিষ্ঠান ছিল আনজা কর্পোরেশন লিমিটেড।
তবে ওয়ার্ক অর্ডার ছাড়া এমআরএম কম্পানি লিমিটেড নামের একটি নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান ব্যালট ছাপার কাজ পায়। অনুসন্ধানে জানা যায়, এই নামে কোনো প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন নেই। ব্যালট ছাপার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ফেরদৌস ওয়াহিদ নামে এক ব্যক্তি। তিনি এমআরএম ইঞ্জিয়ারিং লিমিটেড এর কর্মী। এই প্রতিষ্ঠানের ঠিকানায় গিয়ে দেখা যায় সেখানে ঝুলছে এমএম ইঞ্জিয়ারিং নামের একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যানার।
জানা যায় এই তিনটি প্রতিষ্ঠানের মালিক একই ব্যক্তি যার নাম আমিনুর রহমান মিয়া ওরফে রাসেল। ওয়ার্ক অর্ডার ছাড়াই ব্যালট ছাপার কাজ করেছেন বলে স্বীকার করেন তিনি।
এদিকে ব্যালটের সংখ্যা নিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ব্যাপক গরমিল রয়েছে। নীলক্ষেত গাউসুল আজম মার্কেটের প্রতিষ্ঠান জালাল প্রেস জানায় ডাকসুর জন্য তারা ৯৬ হাজার ব্যালট ছাপিয়েছে। সেই ব্যালট কাটা হয় একই মার্কেটের আরেক প্রতিষ্ঠান মক্কা পেপার হাউসে। তাদের দাবি তারা ৮৮ হাজার ব্যালট কেটেছে তারা। এমআরএম কম্পানির দাবি ব্যালট ছাপানো হয়েছে ৮৬ হাজার ২৪৩টি। অন্যদিকে আনজা কর্পোরেশন লিমিটেড দাবি করেছে তারা ব্যালট ছাপিয়েছে ১ লাখ ৫৩ হাজার।
এসব বিষয়ে কথা বলতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) মুনসী শামস উদ্দিন আহম্মদ বলেন, ‘নির্বাচন সুন্দর সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার জন্য নির্বাচন সংক্রান্ত সংশ্লিষ্ট যাবতীয় কাজকর্ম পরিচালনার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের।’
নীলক্ষেতে ব্যালট ছাপানোর বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের উপপরিচালক ফররুখ মাহমুদ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এই রিপোর্টকে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের মন খারাপ করছে না, এটা ভিসি স্যার ক্লিয়ার করছেন।’
সূত্র : নিউজ২৪ টেলিভিশনের অনুসন্ধানী রিপোর্ট