ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বিশেষজ্ঞদের বৈঠক

গণভোটের সময় ও নোট অব ডিসেন্টে আটকা সমঝোতা

ডেস্ক রিপোর্ট
  ০৭ অক্টোবর ২০২৫, ২২:৫১

গণভোটের মাধ্যমে জুলাই সনদের আইনিভিত্তি দিতে একমত রাজনৈতিক দলগুলো। তবে দুটি বিষয়ে জটিলতা রয়েছে। প্রথমত গণভোট সংসদ নির্বাচনের দিনে নাকি আগে। দ্বিতীয়ত যেসব প্রস্তাবে নোট অব ডিসেন্ট (আপত্তি) রয়েছে, সেগুলোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত কী হবে-এ বিষয়ে মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বিশেষজ্ঞদের বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়। কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বৈঠকে নেতৃত্ব দেন। তবে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এ ব্যাপারে  আজ  রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আবারও বৈঠক করবে কমিশন। 
জানতে চাইলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) যুগান্তরকে বলেন, ৫ তারিখে রাজনৈতিক দলগুলো যে মতামত দিয়েছে, সেগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করে কীভাবে একটি জায়গায় আসা যায়, সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।
তিনি বলেন, এর আগে সনদ বাস্তবায়ন ইস্যুতে বিশেষজ্ঞদের মতামত ছিল-সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে সুপ্রিমকোর্টের মতামত নেওয়া। কিন্তু সেটি আর থাকছে না। কারণ রাজনৈতিক দলগুলো সেখান থেকে সরে এসেছে। মঙ্গলবারের বৈঠকে সে বিষয়টি আলোচনা হয়েছে। এছাড়াও কীভাবে গণভোট হতে পারে, সে বিষয়ে আলোচনা এসেছে।
গণভোট একটি বিষয়ের ওপর হবে কিনা জানতে চাইলে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, গণভোট সাধারণত একটি বিষয়ের ওপর হয়। কিন্তু এর বাইরে একাধিক বিষয় বা প্রশ্নের ওপরও হতে পারে। সেক্ষেত্রে সনদের যেসব প্রস্তাবে নোট অব ডিসেন্ট আছে, সেগুলোর ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত হবে, সেটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে ওনারা (বিশেষজ্ঞরা) চূড়ান্ত কোনো মতামত দেননি। এখনও বিষয়টি আলোচনা পর্যায়ে আছে। এ ব্যাপারে বুধবারও (আজ) আলোচনা হবে। এরপর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ওইদিন বৈঠক হবে। আশা করি সেই বৈঠকে একটি সিদ্ধান্ত আসবে।
বিশেষজ্ঞ হিসাবে বৈঠকে অংশ নেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এম এ মতিন, বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন মোহাম্মদ ইকরামুল হক, সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট ড. শরিফ ভূঁইয়া, ব্যারিস্টার তানিম হোসেইন শাওন ও ব্যারিস্টার ইমরান সিদ্দিক।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, বৈঠকে রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান ভিন্ন ভিন্ন। বিএনপি চাচ্ছে, জাতীয় নির্বাচনের দিনে গণভোট। জামায়াতে ইসলামী চাচ্ছে, জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট। জাতীয় নাগরিক পার্টির বক্তব্য নির্বাচনের দিন ভোট হতে পারে। তবে ব্যালটে প্রস্তাব হতে হবে একটি। সেটি হলো জুলাই সনদ বাস্তবায়ন হবে কিনা সে ব্যাপারে সাধারণ মানুষ মতামত দেবে। গণভোটের ব্যালটে একটি নয়, একাধিক প্রস্তাবের মত দিয়েছেন কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ। এক্ষেত্রে নোট অব ডিসেন্টকে আলাদা করে রাখতে বলা হয়েছে। 
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, জুলাই সনদের ৮৪টি ধারা। এই ধারাগুলো গণভোটে দেওয়া সম্ভব নয়। অধিকাংশ দলের মত হলো, ব্যালটে উল্লেখ থাকবে, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন হবে কি না? সেক্ষেত্রে ‘হ্যাঁ’ এবং ‘না’ এই সিদ্ধান্তে জনগণ তাদের রায় দেবে।
সূত্র আরও জানায়, গণভোট বিশাল ব্যয়বহুল এবং বড় প্রস্তুতির বিষয়। এক্ষেত্রে জাতীয় নির্বাচনের আগে এত ব্যয়বহুল সিদ্ধান্তে সরকার যাবে না। ফলে সংসদ নির্বাচনের দিনই ভিন্ন ব্যালটে গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। অন্যদিকে গণভোট আয়োজনের জন্য সংবিধানিক আদেশ দাবি করছে জামায়াত এবং এনসিপি। অন্যদিকে বিএনপি চায় অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে গণভোট আয়োজন। সে বিষয়টিও আজকে সিদ্ধান্ত হবে। 
ঐকমত্য কমিশনের পক্ষে বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান এবং ড. মো. আইয়ুব মিয়া।