সেই মুফতি মহিবুল্লাহর বিষয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিল পুলিশ

ডেস্ক রিপোর্ট
  ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ২৩:৪৭

টঙ্গীর মরকুন টিএন্ডটি বাজার জামে মসজিদের খতিব মুফতি মহিবুল্লাহ মিয়াজী অপহৃত হয়েছেন বলে থানায় যে অভিযোগ করা হয়েছে- তা সঠিক নয় বলে দাবি করেছে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ। খতিব মোহাম্মদ মহিবুল্লাহ মিয়াজি স্বেচ্ছায় পঞ্চগড় গিয়েছিলেন বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে।
মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. তাহেরুল হক চৌহান।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার জানান, টঙ্গী পূর্ব থানার মরকুন টিএন্ডটি বাজার জামে মসজিদের খতিব মুফতি মহিবুল্লাহ মিয়াজী অপহরণের বিষয়ে গত ২৪ অক্টোবর টঙ্গী পূর্ব থানায় মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় ওই ইমাম সাহেবকে অপহরণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়। 
মামলার তদন্তকারী টিম টিএন্ডটি কলোনীর মুফতি মহিবুল্লাহর নিজ বাসা থেকে ঘটনাস্থল পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ ও তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তা নেওয়া হয়। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে খতিব মহিবুল্লাহ মিয়াজী জানান, খতিব তার বাসা থেকে বের হয়ে একাকি হেঁটে নিমতলী সিএনজি পাম্প হয়ে পূর্বাইন থানাধীন মাজুখান ১৪তলা পার হয়ে সামনে এগিয়ে যান। বাদী তার এজাহারে ৪-৫ জন ব্যক্তি তাকে অ্যাম্বুলেন্স তুলে নিয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করলেও এই তিন ঘণ্টা সময়ের মধ্যে কোনো ধরনের অ্যাম্বুলেন্সের চলাচল সিসি ক্যামেরায় দেখা যায়নি। 
বুধবার (২২ অক্টোবর) সাড়ে ১১টার দিকে সময় খতিব মিয়াজীর অবস্থান ঢাকা মহানগরীর সোবাহানবাগ এলাকা সংলগ্ন প্লাজা এআর-এর পাশে দেখা যায়। এরপর তিনি ঢাকার গাবতলী শ্যামলী কাউন্টার থেকে দুপুর ২টার দিকে টিকিট কেটে ঢাকা থেকে পঞ্চগড়গামী ‘শ্যামলী পরিবহণ’-এর বাসে উঠেন। যাত্রাপথে বাস বগুড়া জেলার শেরপুর থানাধীন পেন্টাগন হোটেলে যাত্রাবিরতিতে তিনি বাস থেকে নেমে হোটেলে নামাজ পড়ে দ্রুত বাসে উঠেন। বিষয়টি পেন্টাগন হোটেলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণে পাওয়া গেছে। 
পেন্টাগন হোটেলে মাগরিবের নামাজের জন্য সন্ধ্যা ৫টা ৪০ মিনিটে যাত্রাবিরতি করলে তিনি বাস থেকে হোটেলে নেমে নামাজ পড়ে দ্রুত বাসে উঠেন। পরে রাত সাড়ে ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে পঞ্চগড় জেলার সর্বশেষ বাসস্টেশনে নেমে তিনি সামনের দিকে হাঁটতে থাকেন। ওই সময় তিনি সামনে পঞ্চগড় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, জেলা পুলিশ লাইনস দেখতে পান। তিনি কিছুদূর এগিয়ে অন্ধকার একটি জায়গায় রাস্তার পাশে প্রসাব করতে গেলে প্রস্টেট গ্রন্থির রোগের কারণে তার পায়জামা ও পাঞ্জাবি ভিজে গেলে তিনি তার নিজ হাতে পায়জামা ও পাঞ্জাবি খুলে ফেলেন। কিন্তু কিছুটা ঠান্ডা অনুভব করায় এবং শরীর ক্লান্ত থাকায় তার পক্ষে পায়জামা ও পাঞ্জাবি পরিধান করা সম্ভব হয়নি। এ সময় রাস্তায় কুঁড়িয়ে পাওয়া সোনালী রংয়ের ছোটতলা যুক্ত একটি শিকল তিনি পায়ে জড়িয়ে রাস্তার পাশে ঘুমিয়ে পড়েন। ঘুম থেকে জেগে তিনি দেখতে পান তিনি পঞ্চগড় সদর হাসপাতালে আছেন। আশেপাশের ওলামায়ে কেরামরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তার অবচেতন মনে তিনি বিভিন্ন ধরনের কথাবার্তা বলেন।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার জানান, বর্তমানে মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে। খতিবের বক্তব্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এই ঘটনায় অন্য কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী জড়িত রয়েছে কিনা বা কারো প্ররোচনায় এ কাজ করেছেন কিনা- তা এখনো স্পষ্ট নয়। আরও অধিক তদন্তের মাধ্যমে পুরো বিষয়টি স্পষ্ট করে পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।