মনোনয়ন পাননি সিলেটের তিন হেভিওয়েট নেতা

সিলেট বিভাগে বিএনপির মনোনয়ন পেলেন তিন প্রবাসী

ডেস্ক রিপোর্ট
  ০৪ নভেম্বর ২০২৫, ১৩:৪৩
আপডেট  : ০৪ নভেম্বর ২০২৫, ১৪:১০


ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সিলেট বিভাগের চার জেলার ১৯টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ১৪টিতে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। এসব প্রার্থীর মধ্যে যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ তিনজন প্রবাসী আছেন।
সোমবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ সময় তিনি জানান, বাকি আসনে প্রার্থীদের নাম দ্রুত ঘোষণা করা হবে।
প্রার্থী তালিকায় দেখা যায়, সুনামগঞ্জ-২, সুনামগঞ্জ-৪, সিলেট-৪, সিলেট-৫ এবং হবিগঞ্জ-১ আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়নি। এই পাঁচটি আসন ছাড়া বাকি ১৪টি আসনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়।
বিএনপির ঘোষিত প্রার্থীদের মধ্যে সুনামগঞ্জ-১ আসনে আনিসুল হক, সুনামগঞ্জ-৩ আসনে মোহাম্মদ কয়সর আহমেদ, সুনামগঞ্জ-৫ আসনে কলিম উদ্দিন আহমেদ মিলন, সিলেট-১ আসনে খন্দকার আবদুল মুক্তাদির, সিলেট-২ আসনে তাহসিনা রুশদীর লুনা, সিলেট-৩ আসনে এম এ মালিক এবং সিলেট-৬ আসনে এমরান আহমদ চৌধুরী দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন।
মনোনয়ন পাওয়া অন্যরা হচ্ছেন মৌলভীবাজার-১ আসনে নাসির উদ্দিন আহমেদ (মিঠু), মৌলভীবাজার-২ আসনে সওকত হোসেন (সকু), মৌলভীবাজার-৩ আসনে নাসের রহমান, মৌলভীবাজার-৪ আসনে মো. মজিবর রহমান চৌধুরী, হবিগঞ্জ-২ আসনে আবু মনসুর সাখাওয়াত হাসান (জীবন), হবিগঞ্জ-৩ আসনে জি কে গউস এবং হবিগঞ্জ-৪ আসনে এস এম ফয়সাল।
বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছে, সিলেট-৩ আসনে মনোনয়নপ্রাপ্ত এম এ মালিক যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এবং সুনামগঞ্জ-৩ আসনে মনোনয়নপ্রাপ্ত মোহাম্মদ কয়সর আহমেদ যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। তাঁরা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত। গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর তাঁরা দেশে ফিরে স্থানীয় রাজনীতিতে তৎপর হন।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, যুক্তরাজ্যপ্রবাসী এম এ মালেক দীর্ঘ ১৯ বছর পর গত ১৭ অক্টোবর দেশে আসেন। এ সময় তিনি নিজের গ্রামের বাড়ি দক্ষিণ সুরমা উপজেলার তেতলিতে অবস্থান করে নির্বাচনী এলাকার তিন উপজেলায় কিছু সভা-সমাবেশে অংশ নিয়ে কিছুদিন পর দেশ ছাড়েন। পরে আরও কয়েকবার দেশে আসেন। দেশে এসে তিনি নিয়মিতভাবে সভা-সমাবেশে অংশ নেন।
এম এ মালিকের অনুসারীরা বলছেন, তাঁদের নেতা দীর্ঘদিন প্রবাসে থাকলেও নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন। তিনি সশরীর উপস্থিত না থাকলেও তাঁর অনুসারী-সমর্থকেরা দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জে চিকিৎসাশিবির, শীতবস্ত্র বিতরণ, খেলাধুলাসহ নানা ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন।
প্রার্থী হিসেবে এম এ মালিকের নাম ঘোষণার পর একাধিকবার তাঁর মুঠোফোনে কল করেও তাঁর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে তাঁর এক অনুসারী বলেন, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কথা বলায় ২০২১ সালের ২৭ এপ্রিল এম এ মালিকের গ্রামের বাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছিল। তিনি প্রবাসে আওয়ামী লীগ ও দলটির ফ্যাসিস্ট সভাপতি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে নিয়মিত বক্তব্য-বিবৃতি দিয়ে দলের ভেতরে-বাইরে আলোচিত হয়েছেন। তাঁর মতো দলবান্ধব একজন নেতা দলীয় মনোনয়ন পাওয়ায় কর্মীরা আনন্দিত হয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় বিএনপির একাধিক নেতা জানান, দীর্ঘদিন দেশের বাইরে থাকায় এম এ মালিক তুলনামূলকভাবে জনবিচ্ছিন্ন। তাঁর প্রার্থিতায় অনেকে বিস্মিত হয়েছেন। অনেকে এটা মেনে নিতে পারছেন না। এ নিয়ে দলের ভেতরে-বাইরে আলোচনাও চলছে। তবে দলের উচ্চপর্যায়ে তাঁর যোগাযোগ থাকায় অনেকে সাংগঠনিক শাস্তির ভয়ে এ বিষয়ে প্রকাশ্যে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন না।
সিলেট-৩ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। দল যেটা ভালো মনে করেছে, সে সিদ্ধান্তই নিয়েছে। আর দলীয় প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত করতে বিএনপির সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবেন।
এদিকে ৫ আগস্ট–পরবর্তী সময়ে প্রায় এক যুগ পর দেশে ফেরেন সুনামগঞ্জ-৩ আসনে মনোনয়নপ্রাপ্ত মোহাম্মদ কয়সর আহমেদ। স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীরা জানান, এখানে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে স্থানীয় শক্তিশালী প্রার্থী তেমন ছিলেন না। সে কারণে কয়সর সহজেই মাঠের দখল নিয়ে নেন। এর ফলে মনোনয়ন দৌড়েও তিনি এগিয়ে ছিলেন।
মৌলভীবাজার-২ আসনে মনোনয়নপ্রাপ্ত সওকত হোসেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী। কুলাউড়া উপজেলা বিএনপির সাবেক এই সদস্য আগে অনিয়মিতভাবে দেশে আসতেন। তবে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তিনি এলাকায় আছেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১৩ সেপ্টেম্বর কুলাউড়া উপজেলা বিএনপির সম্মেলনে সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তিনি পরাজিত হন। এখন এ আসনে স্থানীয় বিএনপির প্রভাবশালী নেতাদের টপকিয়ে শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন পান সওকত।