ওসমান হাদির জানাজা সম্পন্ন

ডেস্ক রিপোর্ট
  ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪:৪১
আপডেট  : ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪:৫৬

বড় ভাই আবু বকর সিদ্দিকের ইমামতিতে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদির জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুর আড়াইটায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় হাজারো জনতার অংশগ্রহণে হাদির জানাজা শুরু হয়।
জানাজায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ স্থানীয় নেতারা অংশ নেন।
জানাজা শেষে ওসমান হাদির মরদেহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নেওয়ার কথা রয়েছে। সেখানেই জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধি চত্বরে তাকে দাফন করা হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমদ।
এদিকে ওসমান হাদির জানাজাকে কেন্দ্র করে সংসদ ভবন ও এর আশপাশের সড়কে মোতায়েন করা হয় সেনাবাহিনী, বিজিবিসহ বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালায় পুলিশ। কঠোর নিরাপত্তার চাদরে বেস্টিত সংসদ ভবন এলাকা।
এদিকে শরীফ ওসমান হাদির জানাজার পর মিছিল নিয়ে সবাইকে শাহবাগে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের।
তিনি বলেন, আমরা এখানে কান্না করার জন্য দাঁড়াইনি, ভাইয়ের বদলা নিতে জানাজায় দাঁড়িয়েছি।
কোনও ধরনের সহিংসতার আহ্বানে সাড়া না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে জাবের বলেন, ইনকিলাব মঞ্চ থেকে সব ধরনের সিদ্ধান্ত জানানো হবে।
তিনি বলেন, এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও হাদির ওপর হামলাকারীকে গ্রেফতার করা হয়নি। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদাবক্স চৌধুরীকে সপ্তাহব্যাপী তাদের পদক্ষেপ সম্পর্কে জনগণকে জানানোর দাবি জানান তিনি।

ওসমান হাদির জানাজায় যোগ দিতে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে হাজারো মানুষ

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির জানাজায় অংশ নিতে জাতীয় সংসদ ভবন সংলগ্ন মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে জড়ো হয়েছেন বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার হাজারো মানুষ। একের পর এক মিছিল এসে প্রবেশ করছে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে।
আজ শনিবার সকাল সাড়ে ১১টায় ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, মিছিল থেকে ‘আমরা সবাই হাদি হবো, যুগে যুগে লড়ে যাবো’, ‘হাদি ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দেব না’—এমন স্লোগান দেওয়া হচ্ছে। হাদির জানাজা কেন্দ্র করে এলাকায় শোকাবহ পরিবেশ বিরাজ করছে।
জানাজা উপলক্ষে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ ও আশপাশে নেওয়া হয়েছে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সেনাবাহিনীর পাশাপাশি পুলিশ, র‌্যাব ও আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা টহল দিচ্ছেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) জানায়, জানাজাকে কেন্দ্র করে সংসদ ভবন এলাকা ও আশপাশে প্রায় এক হাজার বডি ওর্ন ক্যামেরাসহ পর্যাপ্তসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ডিএমপি কমিশনারের নির্দেশনায় পুরো এলাকায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে।
নিরাপত্তার স্বার্থে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে প্রবেশের প্রতিটি পয়েন্টে বসানো হয়েছে নিরাপত্তা চৌকি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, অংশগ্রহণকারীরা কোনো ব্যাগ বা ভারি বস্তু নিয়ে এলাকায় প্রবেশ করতে পারবেন না। পাশাপাশি পুরো এলাকায় ড্রোন উড়ানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
বিপুল জনসমাগম ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সকাল ১০টায় খেজুরবাগান ক্রসিং থেকে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ পর্যন্ত সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হয়। ট্র্যাফিক পুলিশ সাধারণ যানবাহনকে বিকল্প সড়ক ব্যবহারের অনুরোধ জানিয়েছে।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তপশিল ঘোষণার পরদিন ১২ ডিসেম্বর দুপুরে ঢাকার পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে শরিফ ওসমান বিন হাদিকে মাথায় গুলি করে দুর্বৃত্তরা। তিনি ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক এবং ঢাকা–৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র্য প্রার্থী ছিলেন।
গুরুতর আহত ওসমান হাদিকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য ১৫ ডিসেম্বর তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার তিনি মারা যান।