ডয়েচে ভেলের সাংবাদিক বললেন

এমন ধ্বংসযজ্ঞ শিক্ষার্থীদের দ্বারা সম্ভব নয়

ডেস্ক রিপোর্ট
  ৩১ জুলাই ২০২৪, ১১:৫৫

সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর শেষে কোটা সংস্কার আন্দোলনের কারণে সৃষ্ট সহিংসতা ও পরবর্তী বাংলাদেশ বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে জার্মানভিক্তিক সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলের এশিয়া বিভাগের প্রধান দেবারতি গুহ বলেছেন, ‘এমন ধ্বংসযজ্ঞ শিক্ষার্থীদের দ্বারা সম্ভব নয়।’
ডয়েচে ভেলেকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ টেলিভিশনের আর্কাইভ ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। আমি যখন সেটা দেখলাম তখন আমার নিশ্চিত মনে হলো এটা সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাজ না। আমিও বিশ্বাস করি এখানে তৃতীয়পক্ষ আছে, সেটা যেই হোক না কেন। তৃতীয়পক্ষটা কে সেটা আমি বলতে পারি না, তদন্তের মধ্য দিয়ে বেরিয়ে আসবে। আন্দোলনকারীরাও বলছে তারা এই ধরনের সহিংসতার সঙ্গে যুক্ত নয়। এটা খুবই দুঃখজনক যে শান্তিপূর্ণ একটি আন্দোলন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলো ‘
তার দেখা সহিংসতাকালে বাংলাদেশ ও বর্তমান পরিস্থিতি বিষয়ে জানতে চাইলে দেবারতি গুহ বলেন, ‘আজ বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় শোক পালন করা হয়েছে। কিছু সময় শিথিল করে কারফিউও চলছে। এখনও ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে কিছু কর্মসূচি চলছে। আমি বাংলাদেশে থাকাকালীন হাসপাতালে গিয়েছি, যেখানে আহত অবস্থায় অনেকে চিকিৎসাধীন। সেখানে কেবল ছাত্র আছে তা নয়, পুলিশ এবং সাংবাদিকও রয়েছে। অন্তত চার জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন, আমাদের একজন প্রতিনিধিসহ অনেকে আহত হয়েছেন। আমার মনে হয়েছে অনেকটা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে। কিন্তু শোক, প্রতিবাদ এখনও চলছে। শুরুতে পূর্ণাঙ্গ কারফিউ, এরপর দিনের একটা সময় শিথিল করে কারফিউ দেওয়া চলছে। আমি নিজে বাইরে যাওয়ার সময় কারফিউ পাস ব্যবহার করেছি। এখনও ফেসবুক-টিকটক নিষিদ্ধ। এরকম দীর্ঘসময় ধরে চলতে পারে না।’
অনেক আন্দোলনকারীকে আটক করা হয়েছে সেটার প্রতিক্রিয়া এবং আটকদের পরিবার কেমন দুশ্চিন্তার মধ্যে আছে, জানতে চাইলে ডয়েচে ভেলের এশিয়া বিভাগের প্রধান বলেন, ‘আমি আশা করবো রিমান্ডের নামে তাদের ওপর নির্যাতন করা হবে না। বাংলাদেশের ইতিহাসে এ ধরনের নির্যাতন হতে আমরা দেখেছি। যখন বিরোধীদল ক্ষমতায় ছিল তখনও। সেটা নিয়ে আমি চিন্তিত এবং আমার ধারণা বেশিরভাগ বাংলাদেশি সেটা নিয়ে চিন্তিত।’
ক্ষমতা প্রশ্নে শেখ হাসিনার অবস্থান নিয়ে জানতে চাইলে এই সাংবাদিক জানান, যদিও তিনি এর উত্তর দেওয়ার জন্য সঠিক ব্যক্তি নন, তবে তিনি মনে করেন শুরুতে যে আন্দোলন শান্তিপূর্ণ ছিল সেটি সঠিক সময়ে সামাল দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকার বেশ কয়েকটি ভুল করেছে। দ্বিতীয়ত, আওয়ামী লাগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগকে সম্পৃক্ত করা ঠিক হয়নি। তৃতীয়ত, পুলিশের আরও মানবিক আচরণ করা উচিত ছিল। আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালানো ঠিক হয়নি, বিশেষত ছাত্রদের ওপর। যদিও সেখানে ছাত্র ছাড়াও সরকারি কর্মকর্তা, সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। চতুর্থত, বক্তব্য বিভ্রান্তি ছড়াতে পারে কিনা সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও সতর্ক থাকতে পারতেন। শেখ হাসিনার জন্য এই আন্দোলন বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। এমন কোনও রাজনৈতিক দল নেই যারা তার পদত্যাগ চাইতে পারে। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন ছবিও পোস্ট হয়েছে যে- রাতে আটক, দিনে নাটক। বছরের পর বছর বেকারত্ব, দুর্নীতির কারণে বেশ অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। কিন্তু আমি কোন সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক দল থেকে এ ধরনের কোনও দাবি দেখিনি।