ছাত্র বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে গতকাল সিলেট নগরীর মিরের ময়দান, সুবিদবাজার, সাগরদীঘির পাড় এলাকায় দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। এতে পথচারী সহ কমপক্ষে ৩০ জন আহত হয়েছেন। সংঘর্ষের সময় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। এ সময় পুলিশ টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও লাঠিচার্জ চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় সিলেট নগরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। ছাত্র বিক্ষোভের আশঙ্কায় নগরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য মোতায়েন রাখা হয়েছে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে- দুপুরে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকে অবস্থান নেয়। ওখান থেকে তারা নগরের বন্দরবাজার অভিমুখে ‘মার্চ ফর জাস্টিজ’র র্যালি বের করেন। প্রথমে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকশ’ শিক্ষার্থী অংশ নেয়। পথে পথে তাদের এই র্যালিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এসে যোগ দেয়
তাদের র্যালিটি পাঠানটুলা এলাকায় আসামাত্র পুলিশ বাধা দেয়। কিন্তু শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বেশি থাকায় তারা বাধা ডিঙিয়ে সামনের দিকে আসতে থাকেন। এ সময় বিপুল সংখ্যক পুলিশ সহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা নগরের সুবিদবাজার পয়েন্ট এলাকায় ব্যারিকেড দেয়। ফলে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটক থেকে আসা শিক্ষার্থীরা সুবিদবাজারের ব্যারিকেডে আটকে যায়। ব্যারিকেড তুলে দিতে পুলিশকে শিক্ষার্থীদের তরফ থেকে বার বার অনুরোধ জানানো হলেও পুলিশ তাদের সরে যেতে নির্দেশ দিচ্ছিলো। বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা ব্যারিকেড তুলে নিতে পুলিশকে অনুরোধ জানায়। এক পর্যায়ে তারা তর্কেও জড়িয়ে পড়ে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, শিক্ষার্থীরা সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। বিক্ষোভ চলাকালে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সড়কের দু’পাশে শত শত যানবাহন আটকে যায়। বেলা ১টার দিকে শিক্ষার্থীদের বহরটি পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে সামনে এগুতে থাকে। তাদের গন্তব্য ছিল নগরের বন্দরবাজার এলাকা। ওখানে এসে সমাবেশের মাধ্যমে কর্মসূচি শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু মিছিলটি মিরের ময়দান এলাকায় পৌঁছামাত্র পেছন দিক থেকে পুলিশ ব্যাপক হারে লাঠিচার্জ শুরু করে। এ সময় টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে। এতে শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। তাদের মধ্যে একদল শিক্ষার্থী মিরের ময়দানের গলি, অপর দল সাগরদিঘীর পাড় এলাকায় অবস্থান নিয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। ওই দুটি স্থানে পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। এলাকার লোকজন জানিয়েছেন- পুলিশের টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেডে অনেক শিক্ষার্থী আহত হয়। তারা সাগরদিঘীরপাড়, মিরের ময়দান এলাকায় বাসা বাড়িতে অবস্থান নেন। পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবে কারও অবস্থা তেমন গুরুতর ছিল না বলে জানান তারা। তবে পুলিশের হামলার সময় শিক্ষার্থীদের চিৎকারে আশপাশের বাসাবাড়িতে থাকা লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এদিকে- শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আন্দোলনের ভারপ্রাপ্ত সমন্বয়ক ফয়সল হোসেন বলেছেন- ‘আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন কর্মসূচি পালন করছিলাম। পুলিশ প্রথমে বাধা দেয়। পরে পেছন দিক থেকে টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে। এতে নারী শিক্ষার্থী সহ ২০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে জানান তিনি।’ স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ‘সংঘর্ষের সময় ইটপাটকেলের আঘাতে পথচারীদের মধ্যে কয়েকজন আহত হয়েছেন। ঘটনার পর সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার আজবাহার আলী শেখ জানিয়েছেন, কিছু লোক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করেছিল। আমরা তাদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছি। তবে কোনো হতাহত হয়নি। কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।