শোকাবহ ‌১৫ আগস্ট আজ

বাঙালির শোকের দিনে গোপালগঞ্জে যত আয়োজন
ডেস্ক রিপোর্ট
  ১৫ আগস্ট ২০২৪, ০০:০৭

আজ ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৭৫ সালের এই দিনে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়, রচনা করা হয় ইতিহাসের এক কলঙ্কিত অধ্যায়।
বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবার এবং নিকটাত্মীয়সহ ২৬ জনকে ওই রাতে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা সে সময় তৎকালীন পশ্চিম জার্মানিতে অবস্থান করায় প্রাণে বেঁচে যান।
১৫ আগস্ট রাতে ধানমন্ডির বাড়িতে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে হত্যা করা হয় তার সহধর্মিণী শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব, ছেলে শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শিশুপুত্র শেখ রাসেল, পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, বঙ্গবন্ধুর একমাত্র ভাই শেখ আবু নাসের, বঙ্গবন্ধুর ফোন পেয়ে তার জীবন বাঁচাতে ছুটে আসা নিরাপত্তা কর্মকর্তা কর্নেল জামিল, এসবির কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান ও সেনা সদস্য সৈয়দ মাহবুবুল হককে।
বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে যুবলীগ নেতা শেখ ফজলুল হক মনির বাসায় হামলা চালিয়ে তাকে, তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মনি, বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাতের বাসায় হামলা করে তাকে ও তার কন্যা বেবী, পুত্র আরিফ সেরনিয়াবাত, নাতি সুকান্ত বাবু, সেরনিয়াবাতের বড় ভাইয়ের ছেলে সজীব সেরনিয়াবাত এবং এক আত্মীয় রেন্টু খানকে হত্যা করা হয়।
১৯৭৫ সাল থেকে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার আগ পর্যন্ত রাষ্ট্রীয়ভাবে অবহেলিত থাকতো ইতিহাসের কলঙ্কময় এই দিনটি। ৯৬ সালে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রথম শোক দিবস পালনের সিদ্ধান্ত হয়। ২০০১ সালে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট ক্ষমতায় এলে সে সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়। তবে ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় এসে আবার রাষ্ট্রীয়ভাবে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয়।
গত ৫ আগস্ট গণআন্দোলনের মুখে বঙ্গবন্ধুকন্যা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ায় এবার ভিন্ন প্রেক্ষাপট এসেছে বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুবার্ষিকীতে। এ বছর রাষ্ট্রীয়ভাবে দিবসটি পালিত হচ্ছে কিনা তা জানা যায়নি। সরকারের কোনও কর্মসূচিও পাওয়া যায়নি। যদিও বিগত বছরগুলোতে রাষ্ট্রপতি এই দিনে টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন।
মঙ্গলবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে জাতীয় শোক দিবসের সাধারণ ছুটি বাতিল করা হয়েছে। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, উপদেষ্টা পরিষদের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপে ব্যাপক ঐকমত্যের ভিত্তিতে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ঘোষিত ১৫ আগস্টের সাধারণ ছুটি বাতিলের বিষয়টি উপদেষ্টামণ্ডলীর বৈঠকে অনুমোদিত হয়েছে।
গত দেড় দশক ধরে বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুবার্ষিকীতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বাণী দিয়ে এসেছেন। তবে এবার কোনও বাণী পাওয়া যায়নি।
এদিকে, শোক দিবসে বঙ্গবন্ধুর দল আওয়ামী লীগেরও কোনও আনুষ্ঠানিক কর্মসূচি পাওয়া যায়নি। দলটির বিভিন্ন পর্যায় থেকে দাবি করা হয়েছে, দিনটি স্মরণে তারা কর্মসূচি পালন করবে।
শোক দিবসে প্রতি বছর আওয়ামী লীগ ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে, টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধে ও বনানী কবরস্থানে ১৫ আগস্টের নিহতদের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন করতো। এছাড়া ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে মিলাদসহ বিশেষ প্রার্থনা ও কাঙালি ভোজের আয়োজন করা হতো।
আওয়ামী লীগের সভাপতি সদ্য পদত্যাগী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার এক বার্তায় শোক দিবস পালনের জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় তার ফেসবুক পেজে শেখ হাসিনার ওই বার্তা আপলোড করেছেন। এতে শেখ হাসিনা দেশবাসীকে উদ্দেশ করে বলেছেন, আপনাদের কাছে আবেদন জানাই যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে ভাবগম্ভীর পরিবেশে জাতীয় শোক দিবস ১৫ আগস্ট পালন করুন। বঙ্গবন্ধু ভবনে পুষ্পমাল্য অর্পণ ও দোয়া-মোনাজাত করে সকলের আত্মার মাগফেরাত কামনা করুন।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে ভারতে চলে যান। বর্তমানে তিনি দিল্লিতে অবস্থান করছেন।

বাঙালির শোকের দিনে গোপালগঞ্জে যত আয়োজন
আজ ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস। বাঙালির শোকের দিন। স্বাধীনতার স্থপতি, মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৯তম শাহাদাতবার্ষিকী। ১৯৭৫ সালের এই দিনে ইতিহাসের নৃশংস ও মর্মস্পর্শী এক হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বাংলাদেশের মানুষ হারায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। বীরত্ব, ত্যাগ, দৃঢ়প্রত্যয়, নেতৃত্বগুণ; একজন রাজনীতিক হিসেবে এর সব কটির সম্মিলন জাতি দেখেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মধ্যে, যা সহজেই তাঁকে স্বাধীনতার স্থপতি ও জাতির পিতার মর্যাদায় আসীন করেছে। ঘাতকেরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করলেও তিনি স্থান পেয়েছেন বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে। আজ শোকের দিনে বাঙালি তাদের মহান নেতাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে।
শোক দিবস উপলক্ষে গোপালগঞ্জে রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। যথাযথ মর্যাদায় জাতির পিতার শাহাদাতবার্ষিকী পালন করবে তারা। বিশেষ করে দিবসটি যথাযথ মর্যাদায় পালনের জন্য একাধিক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে জেলা আওয়ামী লীগ। এই উপলক্ষে সকাল ৭টায় পুরো জেলায় জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ, সংগঠনের সর্বস্তরের কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ এবং কালো পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে দলীয় কর্মসূচি শুরু হবে।
সকাল ৭টা ২০ মিনিটে জেলা আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে জাতির পিতার  প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন। সেখানে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হবে। সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার সমাধি সৌধের বেদিতে শ্রদ্ধা নিবেদন। দুপুর ১২টায় টুঙ্গিপাড়ায় জাতির জনকের সমাধি সৌধ কমপ্লেক্স চত্বর জামে মসজিদে ১৫ আগস্টে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় মিলাদ ও দোয়া মাহফিল, দুপুর সাড়ে ১২টায় আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। একই দিন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে।
জাতীয় শোক দিবসে এসব কর্মসূচি আয়োজনের কথা বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জিএম শাহাবুদ্দিন আজম। তিনি বলেন, ‘দিবসটি উপলক্ষে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় এবং সমগ্র জেলায় সকাল ৭টায় জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ, দলীয় ও কালো পতাকা উত্তোলন করা হবে। সকাল ৭টা ২০ মিনিটে জেলা আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন। এরপর বঙ্গবন্ধুর সমাধি সৌধের বেদিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে। দুপুরে সমাধি সৌধ কমপ্লেক্স চত্বর জামে মসজিদে ১৫ আগস্টে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় মিলাদ ও দোয়া মাহফিল এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। দোয়া মাহফিল শেষে তবারক বিতরণ করা হবে। দিবসটি সফল করতে জেলা আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের সব নেতাকর্মী এবং সর্বস্তরের মানুষ উপস্থিত থাকবেন বলে আশা করছি আমরা। এবার এগুলো থাকছে দিবসের কর্মসূচি। এসব আয়োজনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের পরিসমাপ্তি ঘটে।’
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাসভবনে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবার হত্যা করা হয়। বঙ্গবন্ধু ছাড়াও সেই রাতে তাঁর সহধর্মিণী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, তিন ছেলে শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শিশুপুত্র শেখ রাসেল, পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, বঙ্গবন্ধুর একমাত্র ভাই শেখ আবু নাসের, বঙ্গবন্ধুর ফোন পেয়ে তাঁর জীবন বাঁচাতে ছুটে আসা কর্নেল জামিলউদ্দিন আহমেদ, এসবির কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান ও সেনাসদস্য সৈয়দ মাহবুবুল হককে হত্যা করা হয়। ওই রাতেই বঙ্গবন্ধুর ভাগনে যুবলীগের নেতা শেখ ফজলুল হক মনির বাসায় হামলা চালিয়ে তাঁকে এবং তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মনিকে হত্যা করা হয়। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত ও তাঁর কন্যা বেবি, পুত্র আরিফ সেরনিয়াবাত, নাতি সুকান্ত বাবু, সেরনিয়াবাতের বড় ভাইয়ের ছেলে সজীব সেরনিয়াবাত এবং এক আত্মীয় আবদুল নঈম খানকেও হত্যা করা হয়। ওই সময় বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে অবস্থান করায় বেঁচে যান।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ইনডেমনিটি (দায়মুক্তি) অধ্যাদেশের মাধ্যমে বিচারের পথ রুদ্ধ করা হয়। এমনকি খুনিদের দেশের বাইরে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়। দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার পর খুনিদের বিচার শুরু হয়। একইসঙ্গে ১৫ আগস্টকে জাতীয় শোক দিবস ও এই দিনে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। পরে উচ্চ আদালত ১২ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন। এখন পর্যন্ত ছয় আসামির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। একজন বিদেশে মারা গেছেন। পাঁচ জন পলাতক। 
এদিকে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ঘোষিত ১৫ আগস্টের সাধারণ ছুটি বাতিল করা হয়েছে। মঙ্গলবার অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।