মার্কিন নেতৃত্বে নবায়নযোগ্য জ্বালানি গ্রিডে যুক্ত বাংলাদেশ

বিশেষ সংবাদদাতা
  ১৬ নভেম্বর ২০২২, ১১:৪২

যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে নবায়নযোগ্য জ্বালানি গ্রিডে যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ। এ ছাড়া দেশটির মিথেন গ্যাস কমানোর বৈশ্বিক উদ্যোগেও শামিল হয়েছে ঢাকা। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের কৃষি ও প্রাণিসম্পদের সম্ভাব্য ক্ষতি মোকাবিলায় সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। গতকাল মঙ্গলবার মিশরের শার্ম আল শেখে চলমান বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনের ১০ম দিনে যুক্তরাষ্ট্র প্যাভিলিয়নে দেশটির সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জলবায়ুবিষয়ক বিশেষ দূত জন কেরির সঙ্গে বৈঠক করে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন। বৈঠকের পর বাইডেন প্রশাসনের এমন মনোভাবের কথা জানান জন কেরি।

জানা গেছে, জন কেরির সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আলোচনার শুরুতেই আসে গত সোমবার বাংলাদেশসহ জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ ২০ দেশের জন্য জি-৮ ভুক্ত দেশগুলোর গঠিত আর্থিক ফান্ড গ্লোবাল শিল্ডের প্রক্রিয়ার বিষয়টি। এ উদ্যোগে যুক্ত হওয়ার জন্য ড. মোমেনকে ধন্যবাদ জানান কেরি। জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী দেশগুলো থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের ব্যাপারেও যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পাশে থাকবে বলে আশ্বস্ত করেন তিনি। এ ছাড়া বৈঠকে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রিতে সীমিত রাখার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সম্মতির কথাও জানানো হয়। এ উদ্যোগে অন্য বড় দেশগুলোকেও যুক্ত করতে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে সম্মিলিতভাবে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানায় যুক্তরাষ্ট্র।
বৈঠকের পর সাংবাদিকদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেন, আমাদের লস অ্যান্ড ড্যামেজ এজেন্ডায় তোলায় আমি তাকে (জন কেরি) ধন্যবাদ দিয়েছি। বলেছি, আমাদের দেশে সাড়ে ছয় লাখ লোক প্রতিবছর বাস্তুচ্যুত হয় বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাবের কারণে। তিনি আমাদের কাছে চেয়েছিলেন, আমরা যেন বৈশ্বিক মিথেন অঙ্গীকারে যুক্ত হই। আমরা রাজি হয়েছি। আমাদের মিথেনের পরিমাণ কমাতে হবে। কিন্তু এর কারণে ক্ষতি হবে আমাদের কৃষি ও প্রাণিসম্পদের। সে জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কারিগরি সাহায্য দরকার। তিনি বললেন, আমাদের জানান আপনাদের কী ধরনের সাহায্য লাগবে। মিথেন অঙ্গীকারের কারণে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে তাদের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ৪৩০ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করেছে। সুতারং আমি সমাধান পেয়েছি। তিনি আমাদের কৃষি জোটে যুক্ত হওয়ার জন্য বলেছেন। আমরা যুক্ত হয়েছি। তারা আমাদের দেশে পাওয়ার গ্রিডে সহযোগিতা করছে। সেটি নবায়ণযোগ্য জ্বালানির জন্য।
ড. মোমেন আরও বলেন, আমি বলেছি অ্যাডাপটেশন যথেষ্ট নয়। আমরা অ্যাডাপটেশন করেছি এবং যথেষ্ট ভালো করেছি। এর আগে তাকে একটা প্রকল্পের কথা বলেছিলাম, দুর্যোগপ্রবণ ৪৩২ কিলোমিটার এলাকায় বাঁধ উঁচু ও চওড়া করতে চায়। তারা একটি কারিগরি দল পাঠিয়েছিলেন। তারা কারিগরি দিক যাচাই করছেন। আমি বলেছি, উন্নত ২০টি দেশ বিশ্বের ৮০ ভাগ কার্বন নির্গমন করে। তিনি বললেন, যত কার্বন নির্গমন হয়, তার মধ্যে ৩৫ ভাগ কয়েকটি দেশ করে। এর মধ্যে ভারত, চীন, দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রাজিল, ইন্দোনেশিয়া অন্যতম। যুক্তরাষ্ট্র বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রিতে রাখতে প্রকল্প নিয়েছে। তাদের সঙ্গে যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের কয়েকটি দেশও যুক্ত হয়েছে। সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইন্দোনেশিয়া সফরের সময় দেশটিকে এ উদ্যোগে যুক্ত হতে আহ্বান জানিয়েছেন। কেরি বললেন, বাকি যে দেশগুলো আছে তাদের যেন আমরা এ বিষয়ে বলি। তবে আমি জানিয়েছি, এ বিষয়ে অন্য দেশগুলোকে আমাদের জন্য কিছু বলা কঠিন। এর পর তিনি জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে সম্মিলিতভাবে বলার জন্য বাংলাদেশকে আহ্বান জানান।
এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিদ্যুতের ট্রান্সমিশন গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে সাহায্য করবে নবায়ণযোগ্য জ্বালানি পেতে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে এ উদ্যোগের সঙ্গে আর কারা আছে সে সম্পর্কে জানাতে পারেননি ড. মোমেন।