মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। দেশের উন্নয়ন ও অর্জন এসেছে এ দলের হাত ধরেই। অন্যদিকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে ক্যান্টনমেন্টে আবির্ভাব ঘটেছে বিএনপির। এর পর তারা অপকৌশলে ক্ষমতায় গিয়ে ধারাবাহিকভাবে খুনের রাজনীতি করে গেছে। একই সঙ্গে স্বাধীনতাবিরোধীদের সঙ্গে আঁতাত এবং তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করে গেছে। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পেরিয়ে গেছে।
এখনো এ দেশে খুনির দল (বিএনপি) রাজনীতির মাঠে বিরোধী দল হিসেবে থাকবে তা জনগণ চায় না। জনগণ চায়, মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দলের বিরুদ্ধে মাঠেও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দলই থাকবে। সে কারণে বিরোধী দলে বিএনপির বিকল্প দল তৈরি করতে হবে। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সভায় বক্তারা এসব কথা বলেছেন। সভায় উপস্থিত দলটির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। গণভবনে গতকাল শনিবার সকালে শুরু হয় এ সভা, চলে দুপুর পর্যন্ত।
সূত্রমতে, সভায় উপস্থিত কেউ কেউ একাধিকবারও বক্তব্য রেখেছেন। নেতাদের কথায় দেশের চলমান রাজনীতি, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা পরিস্থিতি, আগামী জাতীয় নির্বাচন ও দলের জাতীয় কাউন্সিলের প্রসঙ্গ উঠে আসে। সভায় সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সঞ্চালনা করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
সভায় উপস্থিত একাধিক সদস্য জানান, দেশের রিজার্ভ ও ব্যাংকিং ব্যবস্থা নিয়ে যে শঙ্কা দেশে ও বিদেশে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, তা ঠিক নয় বলে আলোচনাকালে ড. মশিউর রহমানের বিশদ বিশ্লেষণে উঠে আসে। তিনি দুবার এ প্রসঙ্গে কথা বলেন। তিনি জানান, যে প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে দেশ চলছে, এভাবে চলতে থাকলে দেশে ঘাটতি হওয়ার কোনো শঙ্কা থাকবে না। এ সময় তিনি গুজব ও অযাচিত সমালোচনার বিপরীতে সংশ্লিষ্টদের তথ্যসমৃদ্ধ বক্তৃতার তথ্য তুলে ধরেন।
অন্য এক সদস্য দলের সভাপতি শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে বলেন, করোনাকালে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এবং সুপরিকল্পিত কর্মসূচি নিয়ে আপনি এ মহামারী মোকাবিলা করেছেন। পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশ এটি সামলাতে গিয়ে হিমশিম খেয়েছে। বাংলাদেশ সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণে করোনামুক্ত হয়েছে। তিনি বলেন, করোনার মতো মহামারী আপনার (শেখ হাসিনা) নেতৃত্বে আমরা মোকাবিলা করতে পেরেছি, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দাও আমরা মোকাবিলা করতে পারব। কারণ অনেক আগে থেকেই আমাদের দেশ এ বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করে আসছে।
উপদেষ্টা পরিষদের আরেক সদস্য একই বিষয়ের পুনরাবৃত্তি করে বলেন, বিশে^ খাদ্য ঘাটতির বিষয়টি ফলাও করে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় আসছে। কিন্তু বাংলাদেশে খাদ্য ঘাটতি হওয়ার শঙ্কা নেই। কারণ ইতোমধ্যে শাকসবজি থেকে শুরু করে ধানসহ সব শষ্য উৎপাদনে দেশ মনোযোগী হয়েছে। আপনি (শেখ হাসিনা) বারবার কৃষক ও চাষি থেকে শুরু করে সবাইকে কৃষিজ পণ্য উৎপাদনের তাগিদ দিয়ে আমাদের সেই শূন্যতা পূরণে বড় ভূমিকা রেখেছেন। আশা করছি এ অগ্রহায়ণের ফসল ওঠার পরই এর বড় নজির আমরা দেখতে পাব।
সারাদেশে বিএনপির সভা-সমাবেশ ও শোডাউনের বিষয়ে সভায় এক সদস্য বলেন, বিএনপি যতই সভা-সমাবেশ করুক তাতে তাদের খুনের রাজনীতি ঢাকা পড়বে না। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর সেনা, বিমান ও পুলিশ হত্যায় মেতেছিল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান। জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর তার স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও সন্তান তারেক রহমানও সেই দুর্নীতি ও খুনের রাজনীতিতে আছে। এর ফলস্বরূপ সাবেক তত্ত্বাধায়ক সরকারের মামলায় খালেদা ও তারেক দণ্ডপ্রাপ্ত। এদের খুন ও সন্ত্রাসের রাজনীতি দেখতে দেখতে একটা প্রজন্ম বেড়ে উঠেছে। ফলে তারা যত আন্দোলন ও সমাবেশই করুক, এ দেশের মানুষ রাষ্ট্রক্ষমতায় তাদের দেখতে চায় না। দেখতে চায় না বিরোধী দলের রাজনীতিতেও। এ সময় উপদেষ্টা পরিষদের এ সদস্য বিএনপির বিকল্প হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দলগুলোকে রাজনীতিতে উৎসাহী করার পরামর্শ দেন।
উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হেসেন আমু সভায় বলেন, আগামী নির্বাচন হবে সংবিধান অনুযায়ী। এর ব্যত্যয় ঘটবে না। কেউ সংবিধানের বিপরীতে গিয়ে হত্যা, খুন ও ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হলে আইনি ও রাজনৈতিকভাবে তা মোকাবিলা করা হবে।
এ ছাড়া দলের ত্যাগী নেতাদের দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে আনার জন্য পরামর্শ দেন একাধিক উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য।
সভায় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মোহাম্মদ জমির বলেন, অনেক সময় দেখা যায় বিদেশিদের সব কথার জবাব শুধু প্রধানমন্ত্রী দিচ্ছেন। সব কথার জবাব শুধু প্রধানমন্ত্রীকে কেন দিতে হয়? বিদেশিরা যখন যে বিষয়ে প্রশ্ন তোলে তখন সে সংশ্লিষ্টদের জবাব দিতে হবে। ব্যবসা বাণিজ্যের ইস্যু হলে ব্যবসায়ীরা এর জবাব দেবেন। তিনি বলেন, আমরা অনেক সময় যখন বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে কথা বলি তখন তারা যৌক্তিক বিষয়ও মানতে চান না। সরকারের উন্নয়ন ও সফলতার অনেক তথ্যই তারা স্বীকার করতে চান না।
এ সভার বিষয়ে জানতে চাইলে দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মোজাফফর হোসেন পল্টু ব্যস্ত আছেন জানিয়ে এড়িয়ে যান। আরেক উপদেষ্টা খন্দকার গোলাম মওলা নকশেবন্দীর কাছে সভার বিষয় সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিষয়ে কথা হয়েছে।
সভার পরিবেশ অনেকটা আড্ডার মতো ছিল, আমাদের সময়কে জানিয়েছেন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও নাট্যব্যক্তিত্ব আতাউর রহমান। তিনি বলেন, খুবই খোলামেলা কথা হয়েছে। যে যার অভিমত ব্যক্ত করেছেন। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সবাই আশাবাদী বক্তব্য দিয়েছেন।
সূচনা বক্তব্যে সভার সভাপতি শেখ হাসিনা দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি ও বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণ, ইতিহাস ও করণীয় বিষয়ে বক্তৃতা দেন।
উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন সতীশ চন্দ্র রায়, ড. অনুপম সেন, অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পু, অ্যাম্বাসেডর মোহাম্মদ জমির, ড. মির্জা এম. এ জলিল, মো. রশিদুল আলম, প্রফেসর ড. মো. হোসেন মনসুর, আবদুল খালেক, ড. শামসুল আলম, একেএম রহমত উল্লাহ প্রমুখ।