রাজধানীর পুরান ঢাকার আদালতপাড়া থেকে আনসার আল ইসলামের যে দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে, তারা কারাগারে নিজেদের সেলে দুটি মোবাইল ফোন ব্যবহার করত। এসব ফোন দিয়ে বাইরে থাকা জঙ্গিদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করত তারা। গত রবিবার ঘটনার দিন সকালে এবং আগের দিনও তারা গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি জেলের কারা সেলে মোবাইল ফোনে বাইরে থাকা জঙ্গিদের সঙ্গে কথা বলে পালানোর পরিকল্পনা করে। সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হয় পুরান ঢাকার আদালতপাড়া এলাকায়। গত সোমবার ওই কারাগারের ভেতরে জঙ্গিদের ফোন ঘেঁটে পালানোর পরিকল্পনার আলামত পায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
এদিকে ছিনিয়ে নেওয়া দুই জঙ্গি মইনুল হাসান শামীম ওরফে সামির ওরফে ইমরান এবং আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ওরফে সাজিদ ওরফে শাহাবকে মঙ্গলবার পর্যন্ত ধরতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সব ইউনিট একযোগে জঙ্গিদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রেখেছে। ছিনিয়ে নেওয়া জঙ্গি ও তাদের সহযোগীরা সবাই নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের আসকারী বিভাগের সদস্য। জঙ্গি সংগঠনগুলোর মধ্যে আনসার আল ইসলাম সবচেয়ে বেশি প্রশিক্ষিত ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে দক্ষ। সংগঠনটি পরিচালিত হয় কাট আউট ও সিøপার সেল পদ্ধতি অনুসরণ করে। এ জন্য এ সংগঠনের যে কোনো সদস্যকে ধরাটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।
ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) কর্মকর্তারা বলছেন, পলাতক দুই জঙ্গি যাতে সীমান্ত পাড়ি দিতে না পারে, সে জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
দেশের ভেতর যখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জঙ্গিবিরোধী সাঁড়াশি অভিযান চালান, তখন জঙ্গিদের সীমান্ত পাড়ি দিয়ে পাশের দেশে যাওয়ার অনেক নজির রয়েছে। এ জন্য ছিনিয়ে নেওয়া মৃত্যুদ-প্রাপ্ত দুই জঙ্গি যাতে পাশের দেশে পালাতে না পারে, সে জন্যই সীমান্ত এলাকা কড়া নজরদারিতে রাখা হয়েছে। প্রযুক্তির পাশাপাশি প্রথাগত সোর্স ব্যবহার করে কাজ করা হচ্ছে।
সিটিটিসি সূত্র জানায়, আদালত এলাকার সব সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ও পালিয়ে যাওয়ার সম্ভাব্য বিভিন্ন পথের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। সন্দেহভাজন হিসেবে একাধিক যুবকের ছবি শনাক্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে মোটরবাইকের রেজিস্ট্রেশন নম্বরের সূত্র ধরেও অনুসন্ধান চলছে।
এদিকে জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে যে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে, তারা আরও সাত কার্যদিবস সময় চেয়েছে। এর আগে তিন কার্যদিবসের মধ্যে তাদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছিল। ডিএমপির এই কমিটির দুই জঙ্গি পালিয়ে যাওয়া সংক্রান্ত দায়-দায়িত্ব নির্ধারণ এবং ভবিষ্যতে করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত সুপারিশ করার কথা রয়েছে।
ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) একেএম হাফিজ আক্তার বলেন, তদন্ত শেষ করতে আরও সময় লাগবে। আমরা সব তথ্য সংগ্রহ করেছি। এসব পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন তৈরি করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে যেন এ রকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়, সে জন্য বিস্তারিত সুপারিশ করা হবে।
এদিকে আদালত প্রাঙ্গণ থেকে দুই জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় চার সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের একটি তদন্ত কমিটি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ। কমিটির প্রধান করা হয়েছে সুরক্ষা সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (কারা অনুবিভাগ) মো. হাবিবুর রহমানকে। কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে হবে। কমিটিন সদস্য হিসেবে রয়েছেন পুলিশ মহাপরিদর্শকের একজন প্রতিনিধি (ডিআইজি পদমর্যাদার নিচে নন), অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক ও ঢাকার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট।