গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকা সত্ত্বেও নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে রিজভী

খোঁজে পাচ্ছে না পুলিশ
নিজস্ব সংবাদদাতা
  ০৬ ডিসেম্বর ২০২২, ১২:০২

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর বিরুদ্ধে রাজধানীর একাধিক মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি রয়েছে। অথচ গ্রেফতারি পরোয়ানা মাথায় নিয়েই নিয়মিত নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করছেন। এছাড়া দলীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে মিছিল-মিটিংয়েও অংশগ্রহণ করছেন। তবে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি থাকলেও তাকে গ্রেফতার করছে না পুলিশ।
পুলিশ বলছে, রিজভীর বিরুদ্ধে কোনো গ্রেফতারি পরোয়ানা থানায় আসেনি। থানায় আসলে অবশ্যই তাকে গ্রেফতার করা হবে। তবে আদালত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রিজভীর বিরুদ্ধে যে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে তা ঠিকানায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ি ভাঙচুর মামলায় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন। আদালতে হাজির না হওয়ায় তার বিরুদ্ধে এ গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। চলতি বছরের ২ মার্চ রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইন ও বিস্ফোরকদ্রব্য আইনের পৃথক দুই মামলার অভিযোগপত্র গ্রহণের জন্য দিন ধার্য ছিল। ওইদিন রিজভী আদালতে উপস্থিত হননি। বিচারক অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।
২০২১ সালের ২৫ নভেম্বর রাজধানীর বাড্ডা থানার বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় রিজভীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত। একই বছরের ২৫ অক্টোবর রাজধানীর শাহবাগ থানার বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় রিজভী বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন মহানগর দায়রা জজ আদালত।


আদালত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রিজভীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পরই আমরা তার সংশ্লিষ্ট ঠিকানায় গ্রেফতারি পরোয়ানা পাঠিয়ে দিয়েছি। আমাদের এখানে কোনো গ্রেফতারি পরোয়ানা পেন্ডিং নেই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একাধিক আইনজীবী বলেন, রিজভীর বিরুদ্ধে যে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি রয়েছে তা সরকারের সিদ্ধান্ত ছাড়া পুলিশ বাস্তবায়ন করবে না। সরকারের ইচ্ছায় গ্রেফতার হবেন রিজভী আর সরকারের ইচ্ছায়ই জামিন পাবেন। তাই রিজভীর মামলা নিয়ে আমাদের চিন্তা নেই।
এদিকে সোমবার (৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে রিজভী দাবি করেন, ৪ ডিসেম্বর দুপুর থেকে ৫ ডিসেম্বর দুপুর পর্যন্ত সারাদেশে বিএনপির ২৮৪ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গত ৩০ নভেম্বর রাত থেকে ৪ ডিসেম্বর দুপুর পর্যন্ত অন্ততপক্ষে এক হাজার ৩১ জন, ৪ ডিসেম্বর দুপুর থেকে ৫ ডিসেম্বর দুপুর পর্যন্ত ২৮৪ জন, দুইদিনে এক হাজার ৩১৫ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, হামলা-মামলা-গ্রেফতার করে জনগণের আন্দোলনকে দমানো যাবে না। দেশের মানুষের অধিকার ও গণতন্ত্র ফেরাতে বিএনপিসহ গোটা জাতি আজ ঐক্যবদ্ধ। যেকোনো ত্যাগের বিনিময়ে হারানো গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা ও বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার শপথ নিয়েছে তৃণমূল। কোনো বাধাই বিএনপির কর্মসূচি ঠেকাতে পারবে না। দেশব্যাপী গ্রেফতার ও মিথ্যা মামলা দায়েরের ঘটনায় আমি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত বানোয়াট মামলা প্রত্যাহার ও গ্রেফতারদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি।
রোববার (৪ ডিসেম্বর) রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে রিজভী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার বাসার সামনে সেই বালুর ট্রাকের কায়দায় চেকপোস্ট-ব্যারিকেড দিয়ে পুলিশ অবরোধ করে রেখেছে। এটি নেত্রীর ওপর নির্যাতনের আরেকটি নতুন মাত্রা। এমনিতেই খালেদা জিয়াকে বন্দি করে রাখা হয়েছে, তার ওপর একের পর এক বন্দিত্বের ঘেরাটোপে তাকে আরও কঠোরভাবে বন্দি করে রাখার পায়তারা চলছে।
বিএনপির নেতাকর্মীরা জানান, শনিবার বা রোববার নয়, প্রতিদিনই রিজভী নয়পল্টন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনসহ একাধিক কর্মসূচিতে তিনি অংশ নেন। একটা সময়ে তিনি দলীয় কার্যালয়ে থাকলেও এখন বাসা থেকে নিয়মিত কার্যালয়ে আসেন। সেখানে তিনি নেতাকর্মীদের সঙ্গে আড্ডা দেন। কার্যালয়ের সামনে তিনি মিছিলেও অংশ নেন।
অধিকাংশ মামলায় রিজভীর ঠিকানা দেওয়া হয়েছে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়। এ বিষয়ে পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, রিজভীর বিরুদ্ধে কোনো গ্রেফতারি পরোয়ানা আমাদের থানাতে আসেনি। আসলে আমরা অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আব্দুল্লাহ আবু  বলেন, একাধিক মামলায় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন, তা বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব পুলিশের। পুলিশের উচিত আদালতের আদেশ পালন করা।