ছাত্রলীগকে বিএনপি-জামায়াতের অপপ্রচারের জবাব দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, জবাব দেওয়া বেশি কিছু না। তারা যেটা লিখবে, সেখানে কমেন্টে গিয়ে তারা অতীতে কী করেছে, সেটা লিখে দিলেই হয়। এরপর আর তারা অপপ্রচার করবে না। এটা ছাত্রলীগ ভালোভাবেই করতে পারবে।
মঙ্গলবার (৬ ডিসেম্বর) ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগের ৩০তম সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
সরকারপ্রধান বলেন, দেশে ১০০টা অর্থনৈতিক অঞ্চল করে দিচ্ছি। আজ সকালেও একটার উদ্বোধন করলাম। জাপান, চীন, ভারত, সৌদি আরব ও সিঙ্গাপুর বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী। যারাই বিনিয়োগ করতে চায়, তাদের জায়গা ও নানা সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছি।
এসময় গুজবে কান না দেওয়ার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, একটা শ্রেণি গুজব ছড়াচ্ছে। তারই ফলে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এটা চোরের সঙ্গে সখ্য কি না জানি না। আমি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। প্রতিটি ব্যাংকে পর্যাপ্ত টাকা আছে। অতএব গুজবে কান দেবেন না।
এসময় খাদ্য ও বিদুৎ-জ্বালানি ব্যবহারে আরও সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি ছাত্রদের লেখাপড়া করে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করারও আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা প্রত্যেকেই মেধাবী। পড়াশোনা করে বিসিএস পরীক্ষাসহ সব পরীক্ষায় অংশ নেবে। প্রতিটি ক্ষেত্রে অংশ নিয়ে মেধার সাক্ষর রাখতে হবে। শুধু রাজনীতি নয়, পাশাপাশি সব কিছুতে নিজেদের অবস্থান রাখতে হবে।
বিএনপির কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা দেশের স্বাধীনতাই চায়নি তারা এ দেশের উন্নয়ন কখনোই দেখবে না। মানুষ সামনের দিকে আগায়, বিএনপি ক্ষমতায় এলে পেছনে যায়, ভূতের মতো। তারা মনে হয় ভূতের রূপ নিয়েই আসে আমাদের দেশে।
ছাত্রলীগের কার্যক্রমের প্রশংসা করে তিনি বলেন, ছাত্রলীগ সব সময় মানুষের পাশে থাকে, তাদের ধন্যবাদ জানাই। করোনায় যখন বাবা-মায়ের মৃত্যুতে ভাইবোন পর্যন্ত মরদেহ ফেলে চলে যেত বা আক্রান্ত হলে ছেড়ে চলে যেত-তখন তাদের পাশে ছিল ছাত্রলীগ। তাদের চিকিৎসা দেওয়া, খাদ্যের ব্যবস্থা করার কাজটি করেছে ছাত্রলীগের নেতারা। সিলেটের বন্যার দুঃসময়ে মানুষের পাশেও ছিল এ ছাত্রলীগ। ওই দুর্গম এলাকায়ও তারা ছুটে গেছে, মানুষের পাশে থেকেছে। কৃষকের ধান কাটায়ও অগ্রবর্তী ছিল ছাত্রলীগ। আমার নির্দেশ মতো সবার আগে তারা কৃষকের ধান কেটে দিয়েছে। পরে কৃষক লীগ স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ অনেকেই মাঠে নেমেছে। তবে ছাত্রলীগই আগে নেমেছে। সব সময় ছাত্রলীগ অগ্রসেনা।
মানুষের ভোট চুরি করলে মানুষ ছেড়ে দেয় না-এটা খালেদা জিয়ার মনে থাকা উচিত। আমাদের অপবাদ দেওয়া হয়-ভোট চুরির। আমরা ভোট চুরি করতে যাবো কেন? জনগণ স্বতঃফূর্তভাবে আমাদের ভোট দেয়। ভোট চুরি, ভোট কারচুপির কালচার কে দিয়েছে? জিয়াউর রহমান। হ্যাঁ, না ভোট দিয়ে জনগণের ভোট ছিনিয়ে নিয়েছে। না ব্যালট পাওয়া যায়নি। সব হ্যাঁ ভোট ছিল।
সাজাপ্রাপ্ত আসামি খালেদা-তারেকের সঙ্গে হাত মিলিয়ে যারা এখন গণতন্ত্রের কথা বলে দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক জ্ঞানী-গুণী মানুষও জিয়ার সঙ্গে হাত মিলিয়ে কথা বলেছিলেন। এখনো অনেকে আছেন খালেদা জিয়া-তারেক রহমানের সঙ্গে। মানি লন্ডারিং, অস্ত্র কারবারি ও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার আসামি তারেক। খালেদা জিয়া এতিমের টাকার আত্মসাতের মামলার আসামি। এ অপরাধীদের সঙ্গে এখন অনেক জ্ঞানী-গুণীও গণতন্ত্রের কথা বলেন। তারা বুদ্ধিজীবী নন, বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীজীবী। তারা খালেদা-তারেকের সঙ্গে গিয়ে মিলেছেন।
বিএনপির ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে খালেদা জিয়ার পেটুয়া বাহিনী সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করে দেয়। ঢাবিতে রাতের অন্ধকারে ভিসিকে সরিয়ে নতুন আরেকজনকে বসিয়ে দিয়ে ভিসির পদটাও দখল করে নেয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই শিক্ষকসহ বহু নেতাকর্মী হত্যা করে। তাদের অত্যাচার নির্যাতনে সারাদেশ ছিল নির্যাতিত। শুধু ক্ষমতায় থাকলেই নয়, ক্ষমতার বাইরে থেকেও অগ্নিসন্ত্রাসের কথা সবার জানা। ২০১৩-২০১৪ সালে প্রায় তিন হাজার মানুষকে দগ্ধ করে তারা। বাস-লঞ্চ-রেল কোনো কিছুই তাদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি।
তিনি বলেন, বিএনপির কাজই হচ্ছে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করা। খালেদা জিয়া বলেছিলেন, আওয়ামী লীগকে শিক্ষা দিতে ছাত্রদলই যথেষ্ট। এর প্রতিবাদে আমি ছাত্রলীগের হাতে বই-খাতা-কলম তুলে দিয়েছিলাম। বলেছিলাম, শিক্ষা শুধু নিজেরাই গ্রহণ করবে না, গ্রামে গিয়ে নিরক্ষর মানুষকে শিক্ষা দেবে। তারা সেটিই করেছে। আমাকে রিপোর্টও দিয়েছে। আমাদের পেটুয়া বাহিনী লাগে না।
ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের সঞ্চালনায় এতে আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।